ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের উপর মারধর থেকে চাপা সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকালে চন্দ্রকোনা শহরের ঠাকুরবাড়ি বাজারে প্রচারের সময় সিপিএমের এক কর্মীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল। অভিযোগের তির সেই তৃণমূলের দিকেই। জখম ব্রজেন্দ্রনাথ ঘোষ চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সিপিএমের তরফে এ বিষয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছ, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা বিধানসভা এলাকটি হুগলির আরামবাগ লোকসভা আসনের অধীন। বর্তমানে এই বিধানসভাটি সিপিএমের দখলে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকালে দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে প্রার্থী শক্তিমোহন মালিকের হয়ে প্রচার চালাচ্ছিলেন ব্রজেন্দ্রনাথবাবু। সেই সময় তাঁর উপর চড়াও হয় তৃণমূলের কয়েকজন কর্মী। অভিযোগ, তারা ব্রজেন্দ্রনাথবাবুকে মারধর করে রাস্তায় ফেলে পালায়। এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা ব্রজেন্দ্রনাথবাবুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিকের অভিযোগ, “চন্দ্রকোনা-সহ লোকসভা আসনের বিভিন্ন এলাকায় সিপিএম দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মারধর থেকে বাড়ি গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে তৃণমূল। বিষয়টি আমার রিটার্নিং অফিসার-সহ পযবের্ক্ষককে জানিয়েছি।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, সিপিএমের চন্দ্রকোনা-২ জোনাল কমিটির সম্পাদক গুরুপদ দত্ত বলেন, “গত বিধানসভা ভোটের ফল বেরোনোর দিন থেকে বন্ধ রয়েছে এমন গোটা সাতেক দলীয় কার্যাালয় আমরা সম্প্রতি খুলেছি। এতেই বাধ সাধছে তৃণমূল। এই কারণেই আমাদের দলের কর্মীদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে।” সিপিএম সূত্রে খবর, চন্দ্রকোনা শহর-সহ কৃষ্ণপুর, কল্লা, পুরশুড়ি, সীতারামপুর, মহেশপুর, বান্দিপুর, ঝাঁকরা-সহ বিভিন্ন গ্রামে এখন সকাল থেকে রাত হুমকি চলছে। তাদের আরও অভিযোগ, এই হুমকির জেরেই দিন কয়েক আগে সিপিএমের চন্দ্রকোনা-১ জোনাল কমিটির সদস্য অজিত ভুঁইয়া বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ঘটনার পর অজিতবাবুর পরিবারের তরফে তৃণমূলের স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মীদের নামে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলাও করা হয়। পুলিশ ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতারও করে। কিন্তু এরপরও হুমকি চলছেই।
অন্য দিকে,প্রচার চলাকালীন এক বাম প্রার্থীর গাড়ি আটকে হামলার অভিযোগে এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করল দাসপুর থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দাসপুর থানার ভরতপুরের ঘটনা। পুলিশ ও সিপিএম সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার পুলিশের অনুমতি নিয়েই ঘাটাল লোকসভা আসনের বাম প্রার্থী সন্তোষ রাণার সমর্থনে একটি অটো গাড়িতে করে বাম কর্মী-সমর্থকেরা প্রচার করছিলেন। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য সুনীল অধিকারী অভিযোগ, “ভরতপুরের কাছে তৃণমূলের কয়েকজন আমাদের প্রচার গাড়ি আটকে দলীয় পতাকা ছিঁড়ে কর্মীদের মারধর শুরু করে।” পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ পাওয়ার পরই রাতেই মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। দাসপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুকুমার পাত্র বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি।”
শুক্রবার ঠাকুরবাড়ি এলাকার সিপিএম সমর্থকের মারধরের ঘটনার প্রসঙ্গে চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের সভাপতি অমিতাভ কুশারির বক্তব্য, “এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। এই ঘটনায় আমাদের দলের কেউ জড়িত কি না খোঁজ নিচ্ছি।” তবে সিপিএম সমর্থকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, ‘‘অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওই এলাকার পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ সবই আমাদের দখলে। তাই কাউকে ভয় দেখানোর প্রশ্নই নেই।” এ দিকে ঘাটালের মহকুমাশাসক অদীপ রায় বলেন, “কোনও দলের তরফে অভিযোগ জমা দিলেই সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এলাকায় পুলিশি টহলও চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy