Advertisement
E-Paper

বার্ধক্যেই ভরসা শহর সিপিএমের

৬টি লোকাল কমিটির মধ্যে সম্পাদক পদে পরিবর্তন হল মাত্র একটিতে। লোকাল কমিটির সম্পাদকদের গড় বয়স ৫৯! অর্থাত্‌, বার্ধক্য ছুঁইছুঁই! অথচ, রাজ্য নেতৃত্বের পরামর্শ ছিল, তরুণ প্রজন্মের কর্মীদের তুলে এনে দলের মুখ করতে হবে। সন্ত্রাস-অত্যাচারের মধ্যে থেকেও যাঁরা সাহসের সঙ্গে দলের কাজ করে চলেছেন, নতুন কমিটি নির্বাচনের সময় তাঁদের গুরুত্ব দিতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৪

৬টি লোকাল কমিটির মধ্যে সম্পাদক পদে পরিবর্তন হল মাত্র একটিতে। লোকাল কমিটির সম্পাদকদের গড় বয়স ৫৯! অর্থাত্‌, বার্ধক্য ছুঁইছুঁই!

অথচ, রাজ্য নেতৃত্বের পরামর্শ ছিল, তরুণ প্রজন্মের কর্মীদের তুলে এনে দলের মুখ করতে হবে। সন্ত্রাস-অত্যাচারের মধ্যে থেকেও যাঁরা সাহসের সঙ্গে দলের কাজ করে চলেছেন, নতুন কমিটি নির্বাচনের সময় তাঁদের গুরুত্ব দিতে হবে। কেন মেদিনীপুর শহরে তা হল না? সদুত্তর এড়িয়ে সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক কীর্তি দে বক্সী বলেন, “তিন বারের বেশি কেউই সম্পাদক পদে নেই। যাঁরা পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা আগে কেউ একবার, কেউ দু’বার নির্বাচিত হয়েছেন!” তাঁর কথায়, “একটি লোকাল কমিটিতে সম্পাদক পদে পরিবর্তন হয়েছে। কারণ, সেখানে যিনি সম্পাদকের পদে ছিলেন, তিনি তিন বারের বেশিই ছিলেন। আমিও বহুদিন জোনাল সম্পাদকের পদে আছি। এ বার আমাকেও পদ ছাড়তে হবে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারেরও বক্তব্য, “সর্বসম্মতির ভিত্তিতেই নতুন কমিটির প্যানেল বাছা হয়েছে।” দলেরই একাংশের অবশ্য অভিযোগ, তরুণদের মধ্যে যোগ্য নেতা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। রাজ্য নেতৃত্বের পরামর্শকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উল্টো পথে হেঁটেছে শহর সিপিএম!

পশ্চিম মেদিনীপুরের সদর শহর মেদিনীপুর। শহরে সিপিএমের ৬টি লোকাল কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে এ বার একমাত্র ৪ নম্বর লোকাল কমিটির সম্পাদক পদেই পরিবর্তন হয়েছে। এখানে গোপাল ভট্টাচার্যের জায়গায় নতুন সম্পাদক হয়েছেন শ্যামল পাল। গোপালবাবু বহু দিন এই পদে ছিলেন। অন্য দিকে, ১ নম্বর লোকাল কমিটির সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন ধনেশ্বর মঙ্গল। ২ নম্বরে সুকুমার আচার্য্য, ৩ নম্বরে কিরণ প্রামাণিক, ৫ নম্বরে শশাঙ্ক পড়্যা এবং ৬ নম্বরে নন্দদুলাল সাঁতরাও পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। বুধবারই শেষ হয়েছে মেদিনীপুর শহরের লোকাল কমিটির সম্মেলন-পর্ব। আগে অবশ্য ৫ নম্বর লোকাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন খোকন বন্দ্যোপাধ্যায়। মাস কয়েক আগে তাঁকে ওই পদ থেকে সরানো হয়। বদলে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় শশাঙ্কবাবুকে। এ বার সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তাঁকেই সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হয়েছে।

কেন তরুণ প্রজন্মের কর্মীদের তুলে এনে দলের মুখ করা হল না? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিপিএমের এক জেলা নেতার দাবি, “চেষ্টা যে হয়নি তা নয়। তবে নতুন কেউ দায়িত্ব নিতে নারাজ!” তাঁর কথায়, “গলদটা আমাদেরই। শহরে নতুন কর্মী তুলে আনার সেই ভাবে চেষ্টা হয়নি। কর্মী তো আর এক-দু’দিনে তৈরি করা সম্ভব নয়। কর্মী নির্বাচন ও কাজ দেওয়ার সময় বিচক্ষণতা দরকার। এটাও একটা সাংগঠনিক কাজের অংশ। কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা দু’টোই অপরিহার্য। তবে রাজনৈতিক বিশ্বস্ততাই অগ্রাধিকার পায়। যেটুকু চেষ্টা হয়েছে, তাও এই সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে হয়নি। ফলে, যা হওয়ার তাই হয়েছে।” আবার অন্য মতও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহর সিপিএমের এক কর্মীর কথায়, “আগেও গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নামে আসলে শুধু নেতাদের মত চাপিয়ে দেওয়া হত। এখনও তাই হচ্ছে! এই অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে সরব হয়ে বহিষ্কৃতও হয়েছেন বহু নেতা-কর্মী।” তাঁর কথায়, “সদিচ্ছা থাকলে এ বার তরুণ প্রজন্মের কর্মীদের তুলে এনে দলের মুখ করতে পারতেন নেতৃত্ব। কিন্তু, কেউই পদ ছাড়তে নারাজ!”

কেশপুরে এখন দলের দুর্দিন। অথচ, একদা সেই ‘লালদুর্গেও’ নতুন মুখ তুলে আনার চেষ্টা হয়েছে। আগে ৭টি লোকাল কমিটি ছিল। এ বার সেখানে লোকাল কমিটির সংখ্যা কমিয়ে ৫টি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি কমিটির সম্পাদক পদেই পরিবর্তন আনা হয়েছে। কেশপুরে পারলে শহর মেদিনীপুর পারবে না কেন, প্রশ্ন তুলছেন ওই কর্মী।

সিপিএমের এক জেলা নেতা মানছেন, “ষাটোর্ধ্ব কমরেডকে সম্পাদক করা ঠিক নয়। বিশেষ করে লোকাল কমিটির।” তাঁর কথায়, “বর্তমান পরিস্থিতিতে তরুণ প্রজন্মের কাউকে না পেলে কী আর করা যাবে? তাই প্রবীণ কমরেডদেরই দু’-তিনটি ক্ষেত্রে পদে বহাল রাখা হয়েছে। এটা একটা বড় ঘাটতি। তবে ওঁরা ভাল সংগঠক।” দলের এক সূত্রে খবর, এ বার শহর জোনাল সম্পাদক পদে পরিবর্তন নিশ্চিত। নতুন সম্পাদক হিসেবে তিনটি নাম নিয়ে দলীয়স্তরে আলোচনাও শুরু হয়েছে। এই তিনজনের গড় বয়সও ৫৪!

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শহর সিপিএমের এক কর্মীর আক্ষেপ, “সময়ের সঙ্গে নতুন নতুন আশা-আকাঙ্খার জন্ম নিচ্ছে। এটা দলের সকলকে বুঝতে হবে। আর ধরাবাঁধা গতে চললে হবে না। কঠিন সময়ে যুগোপযোগী সংগঠন গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রয়োজনে নিস্ক্রিয় ও অপ্রয়োজনীয় লোকজনকে বাদ দিয়ে কমিটির কলেবর কমিয়ে আনতে হবে। সংগঠনে গতি আনতে তরুণ প্রজন্মের হাতেই দায়িত্ব তুলে দিতে হবে। এটা বুঝেও অনেকে বোঝার চেষ্টা করছেন না! চেষ্টা করলে অন্তত লোকাল কমিটিতে নতুন মুখকে ঠাঁই দিতেন।”

cpm medinipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy