Advertisement
E-Paper

বহু কলেজে থমকে পরিচালন সমিতি তৈরি

মৃতের পুত্রকে কলেজে চাকরি দিতে হবে। এমনই নির্দেশ রয়েছে হাইকোর্টের। কিন্তু নিয়োগ করতে পারছেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ! কলেজের বিভিন্ন বিভাগে ১৪টি শূন্য পদ ছিল। একটির অনুমোদন মিলেছে। বাকি ১৩টি পদের জন্য ফের পরিচালন সমিতির অনুমোদন নিয়ে শূন্য পদ পূরণের আবেদন জানাতে হবে। তা-ও করা যাচ্ছে না। এমন নানা ধরনের ছোট-বড় কাজ কিছুই করতে পারছে না বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কলেজগুলি।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০১:১৫

মৃতের পুত্রকে কলেজে চাকরি দিতে হবে। এমনই নির্দেশ রয়েছে হাইকোর্টের। কিন্তু নিয়োগ করতে পারছেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ!

কলেজের বিভিন্ন বিভাগে ১৪টি শূন্য পদ ছিল। একটির অনুমোদন মিলেছে। বাকি ১৩টি পদের জন্য ফের পরিচালন সমিতির অনুমোদন নিয়ে শূন্য পদ পূরণের আবেদন জানাতে হবে। তা-ও করা যাচ্ছে না।

এমন নানা ধরনের ছোট-বড় কাজ কিছুই করতে পারছে না বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কলেজগুলি। কারণ, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত প্রায় সব কলেজেই পরিচালন সমিতির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নিয়ম মেনে কলেজ কর্তৃপক্ষ পরিচালন সমিতি গঠনের কথা আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চ শিক্ষা দফতরকে জানিয়ে ছিল। কারণ, তা তৈরি করতে দু’জন সরকারি ও দু’জন বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত সদস্য প্রয়োজন। কিন্তু সদস্যের নাম পাঠানো দূর, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে কলেজগুলিকে জানানো হয়েছে, যত দিন না বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত সদস্যের নাম পাঠাচ্ছে তত দিন সভাপতি নির্বাচন করা যাবে না। পুরনো পরিচালন সমিতিই বহাল থাকবে। ফলে নতুন পরিচালন সমিতি গঠন করা যায়নি। এর ফলে কোনও কাজ করা যাচ্ছে না বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে।

তবে পুরনো পরিচালন সমিতি তো রয়েছে? তাঁদের দিয়েই তো কাজ করানো যায়? বিদ্যাসাগর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ জ্যোতির্ময় নন্দীর কথায়, “পুরনো সমিতির বেশির ভাগ সদস্যই কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। মিটিং ডাকলেও কোরাম হচ্ছে না। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত সদস্য না পাঠানো পর্যন্ত সভাপতি নির্বাচন স্থগিত রাখতে বলেছে।” কৈবল্যদায়িনী কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ বিবেকানন্দ দাস মহাপাত্রও বলেন, “পুরনো সমিতির সকলেই যেহেতু জানেন, তাঁদের মেয়াদ আর বেশি দিন নেই, ফলে আগ্রহও নেই। আবার বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত সদস্য না পাঠানোয় নতুন কমিটিও তৈরি করা যাচ্ছে না। নতুন কোনও কাজ করা যাচ্ছে না।”

সমস্যার কথা অজানা নেই তৃণমূল সমর্থিত কলেজ শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি তুহিন দাসেরও। তাঁর কথায়, “পরিচালন সমিতি তৈরি না হলে কলেজের কোনও কাজই করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত।”

কেন বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত সদস্য পাঠাতে পারছে না?

বিশ্ববিদ্যালয় খবর, ইতিমধ্যেই চারটি ‘প্যানেল’ পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠী সেই প্যানেল পাঠিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে একই ব্যক্তির নাম একাধিক কলেজের জন্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, কোন প্যানেল গ্রহণ করবেন। নাকি কোনও একটি প্যানেল গ্রহণ না করে বিভিন্ন প্যানেল কিছু কিছু নাম নেবেন। যদি তা হয়, কার কার নাম নেবেন, কাদেরই বা বাদ দেবেন? যার নাম বাদ দেবেন, তাঁরা যদি বিক্ষোভ দেখায়, সমস্যা সৃষ্টি করে? এমনই নানা আশঙ্কায় পরিচালন সমিতি গঠনের কাজই পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের কথায়, “সব গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসার চেষ্টা চলছে। কিন্তু কিছুতেই সহমতে পৌঁছনো যাচ্ছে না। তাই চেষ্টা হয়েছিল মন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে নিয়ে এসে সমস্যা সমাধানের কথা বলার। কিন্তু মন্ত্রী আপাপত, কোনও অনুষ্ঠানে আসতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সঙ্কট বেড়েই চলেছে।”

চলতি বছরের জুলাই মাসেই পরিচালন সমিতির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে বিদ্যাসাগর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের। পরের মাসেই অর্থাৎ অগস্টে শেষ হয়েছে কৈবল্যদায়িনী কমার্স কলেজেরও। এ ভাবেই জেলার বিভিন্ন কলেজে পরিচালন সমিতির মেয়াদ শেষ হয়েছে। চলতি মাসের শেষেই সব কলেজের পরিচালন সমিতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। শূন্যপদ পূরণের জন্য আবেদন করা, নতুন নিয়োগ, বিল্ডিং তৈরি হোক বা কোনও উন্নয়নমূলক কাজ সব ক্ষেত্রেই পরিচালন সমিতির অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু এই কারণে তা কিছুতেই করা যাচ্ছে না।

কলেজের পরিচালন সমিতিতে ন্যুনতম ১৩ জন সদস্য থাকেন। অধ্যক্ষ, ৪ জন শিক্ষক প্রতিনিধি, ২ জন শিক্ষাকর্মী, এক জন ছাত্র, দু’জন সরকারি প্রতিনিধি ও দু’জন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি। সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কলেজটি যে এলাকায় রয়েছেন সেখানকার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি (গ্রামীণ এলাকায়) বা চেয়ারম্যান (পুর এলাকার ক্ষেত্রে)। বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য ওই নির্দেশ কঠোর ভাবে না মেনে আরও অনেকেই পরিচালন সমিতির সভাপতি নির্বাচন করে নিতে পারেন।

একটি কলেজের অধ্যক্ষের মতে, যেহেতু বেশিরভাগ সদস্যই কলেজের ও সংশ্লিষ্ট এলাকার, তাই ইচ্ছে করলে কোনও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত প্রতিনিধি ছাড়াও সভাপতি নির্বাচন করতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় অসহযোগিতা করতে পারে। তাই এত সমস্যা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গড়িমসি মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে সকলে।

suman ghosh high court paschim medinipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy