খননের কাজ স্থগিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। বুধবার থেকে দাঁতনের মোগলমারি মহাবিহারে পুরাবস্তু সংরক্ষণের কাজও বন্ধ রাখা হল। ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর থেকে রাজ্য পুরাতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় বিভাগের পরিচালনায় দাঁতনের মোগলমারি ‘মহাবিহারে’ সপ্তম দফার খননের কাজ শুরু হয়। তবে মহাবিহারে সংরক্ষণের কাজ আগামী এপ্রিল-মে মাস নাগাদ শুরু করা হতে পারে বলে রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে।
গত ২০০৩-২০১২ সাল পর্যন্ত দাঁতনের মোগলমারির সখীসেনা ঢিবিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের অধ্যাপক প্রয়াত অশোক দত্তের নেতৃত্বে খননকাজ চলে। সেই সময় ওই স্থান থেকে পাওয়া যায় সীমানা পাঁচিল, যার চারিদিকে রয়েছে প্রদক্ষিণ পথ ও প্রবেশদ্বার। এছাড়াও আবিষ্কার হয় স্ট্যাকো (চুন, মার্বেল গুঁড়ো ও বালির মিশ্রণ) অলংকৃত দেওয়াল, স্ট্যাকো নির্মিত ১৪টি মূর্তি, ৪২ রকমের কারুকার্যে মোড়া ইট, পোড়ামাটির কিছু বাসনপত্র, ২০টি উৎসর্গ ফলক ইত্যাদি। গত ২০ নভেম্বর থেকে রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ এই বৌদ্ধস্তুপটির খনন ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। গত কয়েকমাসে খননকাজে পাওয়া গিয়েছে একটি সোনার লকেট ও একটি মিশ্র ধাতুর মুদ্রা। উদ্ধার হয় মহাবিহারের নামাঙ্কিত একটি ফলকও। ফলকটিতে এই বিহারকে ‘শ্রী বন্দক মহাবিহার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে উদ্ধার হওয়া পুরাবস্তু সংরক্ষণের জন্য মহাবিহারে খনন কাজ স্থগিত রাখা হয়। রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের উপ-অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “প্রাথমিকভাবে সংরক্ষণের কাজ যা হয়েছে, তাতে উদ্ধার হওয়া পুরাবস্তুর ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তাছাড়াও খনন ও সংরক্ষণ কাজের জন্য বরাদ্দ ১০ লক্ষ টাকার কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। তাই এই পর্যায়ের খনন ও সংরক্ষণ আপাতত স্থগিত রাখা হল।” তিনি জানান, ফের সংরক্ষণের কাজ আগামী এপ্রিল-মে মাস নাগাদ শুরু করা হবে। পুরাতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত নভেম্বর মাস থেকে খনন ও সংরক্ষণের কাজে ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। এখনও পর্যন্ত স্ট্যাকো নির্মিত মূর্তিগুলিকে রায়াসনিক উপকরণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রবেশদ্বারে চুন-সুরকি দিয়ে পয়েন্টিং করা হয়েছে। তবে সীমানা পাঁচিল, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের থাকার ঘরের দেওয়ালের ওপরের অংশে পয়েন্টিং করা হলেও নীচের দু’দিকে সংরক্ষণের কাজ এখনও হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্ট্যাকো নির্মিত মূর্তিগুলির উপর ছাউনি তৈরি না হওয়ায় সেগুলি রোদে-জলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও খননে উদ্ধার হওয়া সামগ্রী রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সংগ্রহশালা গড়ার কথা থাকলেও তার কাজও শুরু হয়নি। প্রাথমিকভাবে সংগ্রহশালা গড়ার জন্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্বিতল সংগ্রহশালার একটি নকশা তৈরি হলেও কাজ এখনও শুরু হয়নি। স্থানীয় তরুণ সেবা সঙ্ঘের যুগ্ম-সম্পাদক অতনু প্রধান বলেন, “এই মহাবিহারে প্রাথমিক সংরক্ষণের কাজ হওয়ায় আমরা খুশি। তবে ছাউনি তৈরি না হওয়ায় স্ট্যাকোর কারুকার্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা চাই বাকি অংশের খনন ও সংরক্ষণ দ্রুত হোক।” যদিও পুরাতত্ত্ব বিভাগের উপ-অধিকর্তা অমল রায়ের দাবি, ছাউনি নির্মাণের জন্য অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। শীঘ্রই টেন্ডার ডেকে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে ছাউনি নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। তবে সংগ্রহশালার গড়ার বিষয়টি পূর্ত দফতর দেখছে। যদিও পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তপন সাহা জানান, সংগ্রহশালার জন্য কতটা জমি চিহ্নিত করা হয়েছে, তার হিসাব আমরা পাইনি। সংগ্রহশালার আগের নকশায় ত্রুটি থাকায় নতুন করে নকশা করতে হবে। তারপর সংগ্রহশালা গড়ার কাজ শুরু করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy