Advertisement
E-Paper

মৃত্যুর খবর চাউর হতেই বন্ধ দোকানপাট

একটা মৃত্যু এক লহমায় এলাকার পরিবেশটাই বদলে দিয়েছে! বাড়ির দালানে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন পরিজনেরা। সামনে প্রতিবেশীর ভিড়। এঁদের অনেকেরও চোখ ছলছল করছে। কেশপুরে মৃত্যু-মিছিলের তালিকাটা খুব ছোট নয়। সেই তালিকায় উঠল আরও একটি নাম। কাকলি বরদোলুই। জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যা।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১০
এখানেই গুলিবিদ্ধ হন কাকলি বরদোলুই।ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

এখানেই গুলিবিদ্ধ হন কাকলি বরদোলুই।ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

একটা মৃত্যু এক লহমায় এলাকার পরিবেশটাই বদলে দিয়েছে!

বাড়ির দালানে বসে অঝোরে কাঁদছিলেন পরিজনেরা। সামনে প্রতিবেশীর ভিড়। এঁদের অনেকেরও চোখ ছলছল করছে। কেশপুরে মৃত্যু-মিছিলের তালিকাটা খুব ছোট নয়। সেই তালিকায় উঠল আরও একটি নাম। কাকলি বরদোলুই। জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যা।

খুনের খবর চাউর হতে বুধবার সকাল থেকে জগন্নাথপুর এলাকায় দোকান-বাজার বন্ধ হয়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেশপুরের অন্যত্রও দোকান-বাজার বন্ধ হতে শুরু করে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, জেলা পরিষদ সদস্যার মৃত্যুর খবরে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই দোকান-বাজার বন্ধ রাখেন।

মঙ্গলবার রাতে স্বামীর সামনেই খুন হন বছর আঠাশের কাকলিদেবী। স্বামী বিশ্বজিৎ বরদোলুই কেশপুরের জগন্নাথপুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি। দম্পতির বছর পাঁচেকের একটি মেয়েও রয়েছে। নাম কাবেরী। কেজি টু-এর ছাত্রী কাবেরী ঘাটালের কোন্নগড়ে মামাবাড়িতে থাকে। মেয়ের মৃত্যু খবর পেয়ে বুধবার সকালেই নাতনিকে নিয়ে জগন্নাথপুরে পৌঁছন কাকলিদেবীর বাবা নেপালচন্দ্র ভৌমিক, মা জ্যোৎস্নাদেবী। বাচ্চা মেয়েটি যদিও বুঝতে পারছে না যে তাঁর মা আর নেই। এ দিন সকালে পরিজনেরা যখন কাঁদছিলেন, তখন হাসিমুখেই সে কোলে কোলে চড়ে ঘুরছিল। মাঝেমধ্যে জানতে চাইছিল, ‘মা কোথায়? কখন আসবে!’

কেন এই মৃত্যু? এ ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের দাবি, “ঘটনার সঙ্গে সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই জড়িত।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার। কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই বলছেন, “ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। যে বা যারা এর সঙ্গে যুক্ত, পুলিশ তাদের চিহ্ণিত করুক।”

পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর এক সময় সিপিএমের ‘লালদুর্গ’ বলেই পরিচিত ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরপরই পরিস্থিতি বদলায়। এক সময়ের সিপিএম নেতা-কর্মীরা দলে দলে নাম লেখান তৃণমূলে। কেশপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল নতুন কিছু নয়। কোন্দল রয়েছে একেবারে বুথস্তর পর্যন্ত। দলের দুই জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ এবং আশিস চক্রবর্তীর অবশ্য জবাব, “এ সব কুৎসা-অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়।”

বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে আসেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অবধেশ পাঠক, জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) মনোরঞ্জন ঘোষ প্রমুখ। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পাশাপাশি ঠিক কী হয়েছিল, জানতে চান। আসেন দীনেন রায়, জেলা পরিষদের দুই কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি, নির্মল ঘোষ প্রমুখ। দুপুরে মেডিক্যালে নিহতের ময়নাতদন্ত হয়। এর পর শববাহী গাড়িতে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় জেলা তৃণমূলের অফিসে, সেখান থেকে জেলা পরিষদে। নিহত সদস্যাকে শেষশ্রদ্ধা জানান সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, বিধায়ক মৃগেন মাইতি, শ্রীকান্ত মাহাতো প্রমুখ।

রাজ্যে পালাবদলের আগে-পরে, বহুবারই উত্তপ্ত হয়েছে কেশপুর। কখনও সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ হয়েছে। কখনও তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়েছে। কখনও গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা, কখনও গুলি-বোমায় জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গেল সাড়ে তিন বছরেই কেশপুরে ৬ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগের তির দলেরই বিরোধী গোষ্ঠীর দিকে। দিন কয়েক আগেও তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয় টাঙ্গাগেড়্যা। বোমা ফেটে দু’জন জখমও হন। এই ঘটনাও কী গোষ্ঠী কোন্দলেরই জের? অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। শাসকদলের এক জেলা নেতা বলেন, “সিপিএম সুযোগ খুঁজছে। কর্মীদের সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছি। পুলিশ-প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে বলেছি। এলাকা শান্ত রাখতে হবে। মানুষ আর অশান্তি চান না।”

সব মিলিয়ে, গোলমাল চলছে। চলছে গুলি-বোমাও। রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে পালাবদল হয়েছে কেশপুরেও। তাতে কী? কেশপুর আছে কেশপুরেই!

barun dey keshpur medinipur tmc leader murder case kakali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy