মেদিনীপুরের কর্ণেলগোলায় ছাপা হচ্ছে ফ্লেক্স। ছবি: কিংশুক আইচ।
দেব দর্শন হয়েছে, এ বার অপেক্ষা ‘সন্ধ্যা তারা’র!
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে জেলার তিন কেন্দ্রের মধ্যে দু’টি কেন্দ্রেই রয়েছেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী। ঘাটালে দেব আর মেদিনীপুরে সন্ধ্যা রায়। গত মঙ্গলবার মেদিনীপুর শহরে তৃণমূলের কর্মিসভায় দেব, সন্ধ্যাদেবী দু’জনেই উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী উমা সরেনও। চন্দ্রকোনা রোডের ফিল্ম সিটিতে শু্যটিংয়ের জন্য এখন জেলাতেই রয়েছেন ঘাটাল কেন্দ্রের প্রার্থী দীপক অধিকারী ওরফে দেব। বৃহস্পতিবার কেশপুরে গ্রামের বাড়িতেও গিয়েছিলেন দেব। এলাকায় একটি ছোট সভাও করেন ‘খোকাবাবু’। দেবের তারাবাজিতে যখন সরগরম ঘাটাল কেন্দ্র, তখন ‘বাবা তারকনাথ’ ছবির ‘সুধা’র অপেক্ষায় দিন গুনছে সদর শহর মেদিনীপুর। এক সময়ের জপ্রিয় অভিনেত্রীর অপেক্ষায় রয়েছে রেলশহরও।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “শীঘ্রই আমাদের প্রার্থী মেদিনীপুরে আসবেন। তবে প্রচার-কর্মসূচি থেমে নেই। বিভিন্ন এলাকায় সাংগঠনিক কাজকর্ম চলছে।” দলের জেলা চেয়ারম্যান তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতিও বলেন, “আর কয়েকদিন পরই আমাদের প্রার্থী শহরে আসবেন। তারপর প্রার্থীকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-কর্মসূচি হবে।”
তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী মাসের গোড়ায় মেদিনীপুরে আসবেন সন্ধ্যাদেবী। গত মঙ্গলবার শহরে কর্মিসভায় যোগ দিতে এসে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে তিনি এমনটাই জানিয়েছেন। সন্ধ্যাদেবীকে নিয়ে কোন এলাকায় কী কী কর্মসূচি হতে পারে, তা অবশ্য প্রাথমিক ভাবে ভেবে রেখেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রার্থী এলে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেই ওই সূচি চূড়ান্ত করা হবে। তৃণমূলের কেশিয়াড়ি ব্লক সভাপতি জগদীশ দাস বলেন, “এখন বিভিন্ন এলাকায় দেওয়াল লিখন ও মিছিল চলছে। সন্ধ্যাদিকে নিয়ে আমরা কেশিয়াড়ি ও খাজরায় রোড-শো করতে চাই। একটি বড় সভা করারও ভাবনা রয়েছে। সভাটা বেলদা-কেশিয়াড়ির পাশাপাশি কোনও এলাকায় করার কথা ভেবে রেখেছি।” নারায়ণগড়ের তৃণমূল নেতৃত্বও প্রার্থীকে নিয়ে বেলদা ও নারায়ণগড়ে রোড-শো করার কথা ভাবছেন। তৃণমূলের নারায়ণগড় ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ বলেন, “রোড-শোতে হুড খোলা জিপে প্রার্থী থাকবেন। তাঁকে নিয়ে তিন-চারটি সভা করার কথাও ভাবনায় রয়েছে।”
রেলশহর খড়্গপুর মিশ্র ভাষাভাষীর শহর। শহরের ৪৭ শতাংশ ভোটারই অবাঙালি। তাই সন্ধ্যা রায়ের নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই ‘মিনি ইন্ডিয়া’ খড়্গপুরের অবাঙালি ভোটারদের কাছে প্রার্থীকে কিভাবে তুলে ধরা হবে তা নিয়ে তৃণমূলে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, রেলশহরের সব অংশের মানুষের মধ্যেই মেদিনীপুর কেন্দ্রে গত তিনবারের জয়ী প্রবোধ পান্ডার পরিচিতি আছে। তাই শুধু উন্নয়নের খতিয়ান দিয়ে বাজিমাত করা যাবে না। কেননা প্রার্থীর সঙ্গে পরিচিতি না হলে সব অংশের ভোটারদের সমর্থন মিলবে না।
শহর সিপিএমের জোনাল সম্পাদক মনোজ ধরের কথায়, “যে কোনও নির্বাচনে দলের নীতি-আদর্শের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রার্থীর সঙ্গে ভোটারের একাত্মতা থাকাটাও জরুরি। প্রবোধ পান্ডা অবাঙলি ভোটাদের পাশে দাঁড়িয়ে এত বছর যেভাবে কাজ করেছেন, তাতে নতুন করে তাঁর পরিচয় দেওয়ার কিছু নেই। কিন্তু ব্যাক্তি সন্ধ্যা রায়কে বাঙালিরা চিনলেও অবাঙালিরা চেনেন না।”
তাই শুধু দেওয়াল লিখন বা মিছিল নয়। কেবল চ্যানেলগুলিতে সন্ধ্যা রায় অভিনীত বিভিন্ন বাংলা ও হিন্দি ছবি দেখানোর মাধ্যমে ভোটারদের কাছে প্রার্থীকে নিয়ে যেতে চাইছে তৃণমূল। সন্ধ্যা রায়ের বিভিন্ন ছবির মধ্যে ‘আসলি-নকলি’, ‘পুজা কে ফুল’, ‘জানে আন্জানে’, ‘বাবা তারকনাথ’ দেখানোর কথা এখন ঘুরপাক খাচ্ছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মনে। শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “আমরা মূলত বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দলের জনমুখী কাজের প্রচারে জোর দেব। বিভিন্ন ভাষায় প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখনও চলছে। তবে সন্ধ্যা রায় অভিনীত বিভিন্ন হিন্দি ছবি দেখানোর ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।”
মেদিনীপুর কেন্দ্রের চর্তুমুখী লড়াই নিয়ে ইতিমধ্যে চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ওই মহল মনে করছে, জেলার তিনটি আসনের মধ্যে তুলনায় মেদিনীপুরেই একটু সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে বামেরা। বিরোধী ভোট ভাগাভাগির ফলে এখানে তারা বাড়তি সুবিধে পেতে পারে। গত লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর থেকে ৪৮,০১৭টি ভোটের ব্যবধানে জেতেন সিপিআইয়ের প্রবোধ পাণ্ডা। প্রবোধবাবু এ বারও প্রার্থী হয়েছেন। গত নির্বাচনে তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪,৯৩,০২১টি। সেখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের দীপক ঘোষ পেয়েছিলেন ৪,৪৫,০০৪টি ভোট। মেদিনীপুর লোকসভার মধ্যে সাতটি বিধানসভা এলাকা রয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে এরমধ্যে চারটিই দখল করে বামেরা। একটি কংগ্রেস এবং দু’টি তৃণমূল। তবে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই সাতটি বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত একটি পঞ্চায়েত সমিতিও দখল করতে পারেনি বামেরা। খড়্গপুর গ্রামীণ থেকে অবশ্য সিপিএমের একজন জেলা পরিষদ প্রার্থী জয়ী হন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এ বার যেহেতু চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, সেহেতু পুর-এলাকায় ভোট ভাগাভাগির সুফল পেতে পারে বামেরা। যেখানে তৃণমূলের কাছে লড়াইটা একটু কঠিন হয়ে উঠতে পারে। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই রয়েছেন। পঞ্চায়েত- পুরভোটের পর লোকসভাতেও তার প্রমাণ মিলবে।
তবে সন্ধ্যা রায়কে ঘিরে মানুষের উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা নতুন কিছু নয়। তিনি যে অভিনেত্রী। তাঁর কাছে মঞ্চও নতুন কিছু নয়। নতুন শুধু রাজনীতির ময়দান। রাজনীতির ময়দানে নেমে সন্ধ্যাদেবী কী ভাবে পুরোদস্তুর কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে মিশে যান সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy