অভিযুক্তপক্ষের দুই আইনজীবী সরে দাঁড়ানোয় ঝাড়গ্রামের তরুণ ব্যবসায়ী সৌরভ অগ্রবাল ওরফে রকি খুনের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ মাস খানেক পিছিয়ে গেল। বুধবার ঝাড়গ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা ছিল। এ দিন রকির বাবা পবনকুমার অগ্রবাল ও পবনবাবুর ভাই প্রদীপকুমার অগ্রবালের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছিলেন বিচারক। সকাল সাড়ে দশটায় নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে পৌঁছে যান পবনবাবু ও প্রদীপবাবু। রকি হত্যাকাণ্ডের পাঁচ জেলবন্দি অভিযুক্তের মধ্যে মূল অভিযুক্ত পেশায় ঠিকাদার অশোক শর্মা অসুস্থ থাকায় তাঁকে এ দিন হাজির করানো যায় নি। তবে বাকি চার অভিযুক্ত অশোকের স্ত্রী পুনম শর্মা, পরিচারক টোটন রানা, অশোকের দুই আত্মীয় সুমিত শর্মা ও দীনেশ শর্মাকে আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু অভিযুক্তপক্ষের দুই আইনজীবী হিমেল ছেত্রী ও শান্তনু ঘোষ আদালতে দরখাস্ত দাখিল করে জানান, মক্কেলদের বাড়ির লোকেরা মামলার ব্যাপারে যোগাযোগ করছেন না। সেই কারণে তাঁরা অভিযুক্তদের হয়ে মামলা লড়তে চান না।
এরপর ঝাড়গ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বিভাসরঞ্জন দে অভিযুক্তদের জানান, সরকারি খরচে তাঁরা আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন। কিন্তু অভিযুক্ত সুমিত শর্মা, দীনেশ শর্মা ও টোটন রানা-রা বিচারককে বলেন, “আমাদের সময় দিন, আমরাই আইনজীবী নিয়োগ করব।” বিচারক অভিযুক্তদের বলেন, “আইনজীবী খোঁজার জন্য তো অনির্দিষ্টকাল সময় দেওয়া সম্ভব নয়, পরবর্তী শুনানির দিনে আপনারা আইনজীবী নিয়োগ করতে না পারলে সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগ করার ব্যবস্থা করা হবে।” এরপর আইনজীবী নিয়োগের ব্যাপারে পুনম শর্মার বক্তব্য জানতে চান বিচারক। পুনম বলেন, “আমি কিছু জানি না। আমি কিছু বলতে পারব না।” এরপর বিচারক আগামী ১২ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।
সরকারি কৌঁসুলি প্রশান্ত রায় বলেন, “অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা সরে দাঁড়ানোয় এ দিন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হয় নি। আগামী ১২ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য হয়েছে। ওই দিন অভিযুক্তদের পক্ষে কোনও আইনজীবী না দাঁড়ালে সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগের ব্যবস্থা করবে আদালত।” আইনজীবী মহল সূত্রের খবর, অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা পারিশ্রমিক না পেয়েই মামলা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ইতিপূর্বে আইনজীবী হিমেল ছেত্রী ও শান্তনু ঘোষ পাঁচ অভিযুক্তের হয়ে নিম্ন আদালতে সওয়াল-জবাব করেছিলেন। কিন্তু ওই দুই আইনজীবী যথাযথ পারিশ্রমিক পান নি বলে অভিযোগ।
গত ২৫ এপ্রিল ব্যবসায়িক কাজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান অরণ্যশহরের তরুণ ব্যবসায়ী বছর পঁচিশের সৌরভ অগ্রবাল ওরফে রকি। ৬ মে ওড়িশার গঞ্জাম জেলার রম্ভা থানার পুলিশ রকির ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে। রকিকে অপহরণের করে খুনের অভিযোগে অশোক শর্মা-সহ সাত জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃত সাত অভিযুক্তের মধ্যে অশোক শর্মা, অশোকের স্ত্রী পুনম, অশোকের দুই আত্মীয় সুমিত শর্মা, দীনেশ শর্মা ও অশোকের পরিচারক টোটন রানা--এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে গত ২৮ জুলাই ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। মামলায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকার কোনও প্রমাণ না মেলায় দুই অভিযুক্তকে খালাস দেয় এসিজেএম আদালত। গত অগস্টে মামলাটি দায়রা সোপর্দ হয়ে বিচারের জন্য ঝাড়গ্রাম প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে ওঠে। গত ১২ নভেম্বর জেলবন্দি পাঁচ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন), ৩৬৪ (অপহরণ), ৩৬৪-এ (মুক্তিপণের জন্য অপহরণ), ২০১ (খুনের প্রমাণ লোপাট), ১২০বি (ষড়যন্ত্র) ধারায় এবং অস্ত্র আইনে চার্জগঠন করেন ঝাড়গ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বিভাসরঞ্জন দে। বুধবার থেকে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছিলেন বিচারক। কিন্তু অভিযুক্তদের আইনজীবীরা সরে দাঁড়ানোয় এ দিন সাক্ষ্যগ্রহণ না হয়ে তা পিছিয়ে গেল এক মাস।