বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে চলছে পরীক্ষা।—নিজস্ব চিত্র।
জেলার পর্যটন মানচিত্রে ম্লান চন্দ্রকোনা। তবে পশ্চিমের শিক্ষার মানচিত্রে গরিমা অর্জনের দিকে এগোচ্ছে রাজা চন্দ্রকেতুর শহর। খড়্গপুর আইআইটি বাদ দিলে জেলার একমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে এই শহরেই (পলিটেকনিক বাদে)। তাছাড়াও শহরে রয়েছে সরকার পোষিত মহাবিদ্যালয়, শিক্ষক শিক্ষণ কেন্দ্র। শুধু জেলা নয়, ভিন্ রাজ্য থেকেও শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসেন পড়ুয়ারা। তবে শহরের কিছু পরিকাঠামোগত খামতিও রয়েছে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, শহরে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও নেই পর্যাপ্ত থাকার জায়গা। পরিবহণগত সমস্যার কারণে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতেও সমস্যায় পড়তে হয়।
চন্দ্রকোনা শহর সংলগ্ন ধুরাবিলায় ২০০৫ সালে আইএসটি (ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি) নামে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়ে ওঠে। ওই কলেজ চত্বরেই রয়েছে প্রাথমিক (ডিএড) ও মাধ্যমিক (বিএড) শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। শহরে রয়েছে সরকার পোষিত মহাবিদ্যালয় ও স্কুলও। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বিভিন্ন বিষয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্টে কোর্সে পড়ার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বি টেক, এম টেক, বিসিএ, এমসিএ, বিবিএ-র পাঠ্যক্রমও চালু রয়েছে এই কলেজে। খড়্গপুর আইআইটি ছাড়া জেলার একমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু ছাত্রছাত্রী পড়তে আসে। পাশাপাশি, অসম, মণিপুর, ত্রিপুরা থেকেও বহু ছাত্রছাত্রী জেলায় উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে আসে। ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়কের ধারে প্রায় ২৭ একর জমিতে গড়ে ওঠা এই কলেজে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা প্রায় তিন হাজার।
বছর কুড়ি আগেও শহরে ছিল একটিই মহাবিদ্যালয়। ১৯৮৫ সালে গড়ে ওঠে চন্দ্রকোনা কলেজ। এই কলেজে পড়ার সুযোগ না পেলে ছাত্রছাত্রীদের ভরসা ২৪ কিলোমিটার দূরের ঘাটাল কলেজ। শহর থেকে চন্দ্রকোনা রোড কলেজের দূরত্বও প্রায় ১৬ কিলোমিটার। বাড়ি থেকে যাতায়াতে সমস্যা হওয়ায় কলেজের কাছাকাছিই থেকে যেতে বাধ্য হন তাঁরা। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মুনমুন ঘোষ, সন্তু গোস্বামীর কথায়, “কলেজে হস্টেল না থাকায় বাধ্য হয়ে বেশি টাকা খরচ করে মেসে থাকতে হয়। তাছাড়া কলেজে স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম চালু হলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।” কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মানসকুমার চক্রবর্তীর কথায়, “আইএসটি গড়ে ওঠার পর থেকে গত এক দশকে শহরের শিক্ষার চিত্র অনেকটা বদলে গিয়েছে।” চন্দ্রকোনা কলেজের টিচার ইন চার্জ বিজয়চন্দ্র দুবে জানান, “হস্টেল চালু করা ও কলেজে স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম শুরু করার বিষয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে।”
আইএসটি-র ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশই কলেজ হস্টেলে অথবা শহরেরই বিভিন্ন মেসে থাকেন। বছর কয়েক আগেও শহরে হস্টেলের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। কিন্তু এখন শহরে ভিন্ রাজ্যের পড়ুয়া আসতে শুরু করায় গজিয়ে উঠেছে অজস্র মেস। তবে অধিকাংশ মেসেই খাবারের গুণগত মান খারাপ হওয়ায় পড়ুয়াদের বাধ্য হয়ে বাইরে দোকানে খেতে হয়। সময় পেলেই মেদিনীপুর বা খড়্গপুর শহরে চলে যান ছাত্রছাত্রীরা। গত দশ বছরে শহরে বেড়েছে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার প্রবণতা। শহরের এক বাসিন্দার কথায়, কয়েক বছর আগেও শহরে আয়ের সুযোগ সেভাবে ছিল না। এখন অনেক ছাত্রছাত্রীই বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়ায় থাকেন। এতে ছাত্রছাত্রীদের কিছুটা সাশ্রয় হয়, বাড়ি মালিকদেরও কিছুটা আয় হয়। এক হস্টেলের মালিক তপন হাজরা বলেন, “শহরে বাইরে থেকে আগত পড়ুয়ার সংখ্যা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। ফলে হস্টেলের চাহিদাও বেড়েছে।”
তবে ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, আইএসটি কলেজের কাছে কোনও বাসস্টপ নেই। ফলে বাসস্ট্যান্ডে নেমে মোটরচালিত ভ্যানে করে কলেজে পৌঁছতে হয়। ওই কলেজের ছাত্র কলকাতার বাসিন্দা অপরেশ মুখোপাধ্যায়, বর্ধমানের বাসিন্দা ছাত্র সুমিত পাত্র, ঝাড়খণ্ডের রোহিত কুমারদের বক্তব্য, “কলেজের কাছে একটি স্থায়ী বাস স্টপ হলে ভাল হয়। হস্টেলগুলিরও আধুনিকীকরণ প্রয়োজন।” ওই কলেজেরই ইলেকট্রনিক্সের বি.টেক কোর্সের ছাত্রী শম্পা বিশ্বাস সামন্তও অভিযোগ করে বলেন, “কলেজের হস্টেলগুলিতেও পর্যাপ্ত পানীয় জল অমিল। খাবারের গুণগত মানও ভাল নয়।”
আইএসটি-র চেয়ারম্যান প্রভাস ঘোষ বলেন, “কলেজের নিজস্ব হস্টেল সংখ্যা বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া বেসরকারি হস্টেল তো রয়েছেই। পড়ুয়ারা যাতে কোর্স শেষে ক্যাম্পাসিংয়ের মাধ্যমে চাকরি পান, সেজন্য শিল্প সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে।” আরও বক্তব্য, “হস্টেল ও মেসে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা রক্ষার বিষয়ে নজর রাখা হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy