Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলে ঢুকে বন্দুক দেখিয়ে তোলাবাজি, গ্রেফতার যুবক

স্কুলে ঢুকে বন্দুক দেখিয়ে তোলাবাজির ঘটনায় এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত বছর পঁচিশের বাবু চৌধুরীর বাড়ি নয়াগ্রাম থানার দোলগ্রামে। বুধবার সন্ধ্যায় ওড়িশার সীমান্ত লাগোয়া নয়াগ্রামের শালগেড়িয়ার রাস্তা থেকে বাবুকে পাকড়াও করে পুলিশ।

আদালতে ধৃত। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

আদালতে ধৃত। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০১:৪৭
Share: Save:

স্কুলে ঢুকে বন্দুক দেখিয়ে তোলাবাজির ঘটনায় এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত বছর পঁচিশের বাবু চৌধুরীর বাড়ি নয়াগ্রাম থানার দোলগ্রামে। বুধবার সন্ধ্যায় ওড়িশার সীমান্ত লাগোয়া নয়াগ্রামের শালগেড়িয়ার রাস্তা থেকে বাবুকে পাকড়াও করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে বাবুকে তোলা হয়। তোলাবাজিতে ব্যবহৃত বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধারের জন্য ধৃতকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। বিচারক কৃষ্ণমুরারিপ্রসাদ গুপ্ত অভিযুক্তকে সাতদিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। গত বছর অগস্ট ও সেপ্টেম্বরে নয়াগ্রাম থানার বেড়াজাল অঞ্চলের দোলগ্রাম বালকেশ্বর এসসি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঢুকে বন্দুক দেখিয়ে তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছিল বাবু ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। পুলিশের দাবি, ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বাবু ফেরার থাকায় তাঁকে ধরা যাচ্ছিল না।

দোলগ্রামের বাসিন্দা বাবু চৌধুরীর নেতৃত্বে এলাকার কিছু যুবক অসামাজিক কাজকর্মে জড়িত বলে অভিযোগ। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে ওড়িশার জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাবু এলাকায় ফেরে। এরপরই বাবু ও তাঁর দলবল নয়াগ্রামের বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তির কাছ থেকে তোলাবাজি চালাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। বাবুকে এতদিন আড়াল করছিল শাসক দল। এমনই অভিযোগ করেছিলেন এলাকাবাসীর একাংশ। কারণ, তৃণমূলের ক্ষমতাসীন নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির নারী, শিশু ও জনকল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ মামনি চৌধুরী হলেন বাবুর সম্পর্কিত দিদি। মামনিদেবী অবশ্য বাবুর সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার কয়েকটি স্কুলে ও প্রতিষ্ঠানে ঢুকে নিয়মিত তোলাবাজি চালাচ্ছিল বাবু-বাহিনী। ভয়ে অনেকেই পুলিশে অভিযোগ করতে সাহস করতেন না। বাবু ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে বিষ নজরে পড়েন দোলগ্রাম বালকেশ্বর এসসি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্কুল সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত গত বছর ৩ অগস্ট। ওই দিন ক্লাস চলাকালীন দুপুর দেড়টা নাগাদ বাবু ও তাঁর তিন শাগরেদ রাজা, বাঙরু ও মান্না পিস্তল হাতে স্কুলে ঢুকে পড়ে। বৃন্দাবন সর্দার নামে এক শিক্ষকের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে টাকা ৫ হাজার টাকা দাবি করে তারা। টাকা না-দিলে খুন করার হুমকি দেয় বাবুরা। এরপর সব শিক্ষকেরা মিলে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ওই দুষ্কৃতীদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন। ওই ঘটনায় স্কুলের সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। স্কুল পরিচালন কমিটিকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু তৃণমূল প্রভাবিত স্কুল পরিচালন কমিটি পুলিশে অভিযোগ জানাতে গড়িমসি করছিল বলে অভিযোগ। এরপর ২৬ অগস্ট ফের ওই দুষ্কৃতীরা টিচার ইন চার্জ শিবশঙ্কর জানাকে এসে বলে, প্রতি মাসে সব শিক্ষকদের বেতন থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত গত ২৭ অগস্ট নয়াগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্কুল সম্পাদক ভূপেন্দ্রনাথ রাউল। অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৮৭ ধারায় হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে একটি মামলা রুজু করে পুলিশ। অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু মূল অভিযুক্ত বাবু বহাল তবিয়তে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পর আতঙ্কে কয়েক দিন স্কুলে যান নি শিক্ষকেরা। এরপর ফের ১৮ সেপ্টেম্বর পিস্তল হাতে স্কুলে চড়াও হয় বাবু। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মনোরঞ্জন সাউয়ের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাঁকে স্কুলের বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বাবু। স্কুল কর্তৃপক্ষ নয়াগ্রাম থানায় খবর দেন। পুলিশ পৌঁছনোর আগেই অবশ্য বাবু চম্পট দেয়। তারপর থেকে ফেরার ছিলেন বাবু। তারপরও বাবু-বাহিনীর তোলাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন স্থানীয়রা। অবশেষে তোলাবাজদের পাণ্ডা গ্রেফতার হওয়ায় এলাকায় স্বস্তির হাওয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

extortion youth's arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE