Advertisement
০৪ মে ২০২৪

স্মৃতিকথায় শোক বিহ্বল নাজিম স্মরণ

সভার শুরুতে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন মায়া সেন। প্রয়াত প্রাক্তন পুরপ্রধান নাজিম আহমেদের বোন। মায়াদেবী বলছিলেন, “কখনও ভাবিনি দাদার স্মরণসভায় এসে কিছু বলব। দাদার সঙ্গে সাইকেলে চেপে প্রথম সিনেমা দেখতে যাওয়া। সিনেমাটা ছিল ‘কাবুলিওয়ালা’।

মেদিনীপুরে স্মরণ সভা। —নিজস্ব চিত্র।

মেদিনীপুরে স্মরণ সভা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০১:০৪
Share: Save:

সভার শুরুতে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন মায়া সেন। প্রয়াত প্রাক্তন পুরপ্রধান নাজিম আহমেদের বোন। মায়াদেবী বলছিলেন, “কখনও ভাবিনি দাদার স্মরণসভায় এসে কিছু বলব। দাদার সঙ্গে সাইকেলে চেপে প্রথম সিনেমা দেখতে যাওয়া। সিনেমাটা ছিল ‘কাবুলিওয়ালা’। দাদা সব সময় চাইতেন, সব ধর্মের মানুষ এক জায়গায় এসে দাঁড়ান। চাইতেন, মেদিনীপুরের উন্নয়ন হোক। দাদার সঙ্গে আমেরিকায় গিয়েছি। সেখানে গিয়েও মেদিনীপুরের উন্নয়ন নিয়ে ওঁকে ভাবতে দেখেছি। সকলের কাছে আমার অনুরোধ, দাদার স্বপ্নকে নষ্ট হতে দেবেন না।”

বৃহস্পতিবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরের নিমতলায় প্রয়াত নাজিম আহমেদের স্মরণে এক সভার আয়োজন করা হয়। ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির উদ্যোগে এই সভার আয়োজন। গত পুরভোটেও এই ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন নাজিম সাহেব। সভায় ঘুরেফিরে এসেছে নানা স্মৃতি- কথা। অনেকেই স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কেঁদেছেন। অন্যদেরও কাঁদিয়েছেন। আসলে নাজিম সাহেবের জীবনটাই যে ছিল বর্ণময়। তজন্ম ১৯৪৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর। মৃত্যু ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল। কেন শহরের মানুষ মনে রাখবেন তাঁকে? সভার শোকপ্রস্তাবেই তার উল্লেখ ছিল। যেখানে বলা হয়, ‘মেদিনীপুরের মানুষের কাছে নাজিম আহমেদ স্মরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন পুরপ্রধান হিসেবেই। ১৯৮১ সালে প্রথম কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন। এখান থেকেই প্রতিভার স্ফূরণ ঘটে। ‘কমিশনার’ নাজিম আহমেদের কাছে দলমত নয়, মানুষই ছিল একমাত্র পরিচয়। এরপর পুরপ্রধান নাজিম আহমেদকে দেখল অন্য ভাবে, অন্য রূপে। দেখল একজন দক্ষ প্রশাসককে, যাঁর কাছে শৃঙ্খলারক্ষা, পুরসভার মর্যাদা বৃদ্ধি, আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা, প্রশাসনকে জনমুখী করা, জনসাধারণ ও পুরসভার মেলবন্ধন ঘটানো। তাই পুজো অথবা ঈদকে কেন্দ্র করে নিত্য নতুন উপায় উদ্ভাবন করলেন মানুষের মিলন মেলায় পরিণত করতে। বড়দিনেও সান্তাক্লজ সেজে ঘুরে আসতেন।

একবার কারও সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেলে নাজিম সাহেব সহজে তাঁকে ভুলতেন না। এসেছিলেন প্রাক্তন সাংসদ প্রবোধ পণ্ডা, প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষ রাণা, পুরপ্রধান প্রণব বসু থেকে শুরু করে মেদিনীপুর স্পোটর্স ডেভেলপমেন্ট একাডেমির চেয়ারম্যান দীপক সরকার, কাউন্সিলর সৌমেন খান, প্রাক্তন কাউন্সিলর কীর্তি দে বক্সী প্রমুখ। ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী জয়ন্ত সাহা, আইনজীবী শ্যামলেন্দু মাইতি প্রমুখ। ছিলেন নাজিম সাহেবের স্ত্রী রহিমা আহমেদ সহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ’৮১ সালে নাজিম সাহেব যখন ভোটে দাঁড়ান, তখন তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন বরুণবিকাশ পাল। তিনি বলছিলেন, “গত পুরভোটের সময়ের কথা। ও প্রচারে বেরিয়েছিল। জানতে পারে, আমি অসুস্থ। সটান আমার ঘরে গিয়ে হাজির। দেখি, নাজিম দাঁড়িয়ে আছে।” দীপক সরকার বলছিলেন, “নাজিম আমার ছাত্রতুল্যই। যেখানেই দেখা হত, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করত।”

নাজিম আহমেদ চলে গেছেন। রয়ে গেছে তাঁর স্বপ্ন। স্বপ্নের কখনও মৃত্যু হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

remembrance meeting nazim ahmed medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE