দাসপুরের টালিভাটা এলাকায় শসা খেত থেকে সরানো হচ্ছে জল। —নিজস্ব চিত্র।
এ যেন উলটপুরাণ! চৈত্রের রোদে সেচের অভাবে যেখানে রাজ্যের অনেক জেলারই জমি ফুটিফাটা হয়ে যাওয়ার জোগাড়, সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে সব্জির খেতে টলটল করছে জল। ডুবে রয়েছে শশা, ঝিঙে, করলা, উচ্ছে,-সহ গ্রীষ্মকালীন নানা ফসল। পরিস্থিতি এমনই যে বাধ্য হয়ে পাম্প চালিয়ে চাষের জমি থেকে বের করে দিতে হচ্ছে জল। এমন উলট পুরাণের কারণ কিন্তু বৃষ্টি নয়। বরং সেচের জন্য যে বাঁধ রয়েছে সেখান থেকে সামান্য জল ছাড়ার ফলেই এই অবস্থা। আর এর ফলে চাষের সব্জি পচে ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে। ঘাটালের মহকুমা শাসক অদীপ রায় বলেন, “বিষয়টি সেচ দফতরের আধিকারিককে দেখতে বলা হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘাটাল বন্যাপ্রবণ এলাকা হওয়ায় বর্ষাকালে বন্যার জন্য জমিতে জল ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গ্রীষ্মকাল জুড়ে সব্জি চাষ করা হয় ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন এলাকায়। এর মধ্যে বোরো চাষ বেশি হয় দাসপুরে। আর চাষের কাজে সেচের সুবিধার জন্য সরকারি ভাবে দেওয়া হয় বোরো বাঁধ। দাসপুরের কংসাবতী নদীর উপর এরকম একাধিক বাঁধ রয়েছে। দিন কয়েক আগে জেলায় শিলাবৃষ্টির ফলে সব্জির জন্য প্রয়োজনীয় সেচের অভাব মিটে গিয়েছিল। কিন্তু শনিবার থেকে কংসাবতীতে জল বাড়ার ফলে বোরো বাঁধ ভাঙার আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে স্লুইস গেটগুলি খুলে দেওয়া হয়। তার জেরেই এই বিপত্তি। দাসপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গীতা গোস্বামী বলেন, “যাতে বাঁধ না ভেঙে যায়, তার জন্য নদী সংলগ্ন দাদপুর, কলমীজোড়, সালামপুর প্রভৃতি এলাকার স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্লকের অনেক গ্রামে সব্জির খেতে জল ঢুকে গিয়েছে। ফসল ক্ষতির আশঙ্কাও করা হচ্ছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দাসপুর-১ ব্লকের সরবেড়িয়া, বাসুদেবপুর, পাঁচবেড়িয়া প্রভৃতি পঞ্চায়েতের টালিভাটা জ্যোতবাণি, বিন্দাবনপুর, সরবেড়িয়া, মাছগেড়িয়া, কুঞ্জপুর, সালামপুর, চককৃষ্ণবাটি, কলমীজোড় সহ ১৫-২০ টি গ্রামের একাধিক অংশে জল জমির খেতে জল ঢুকে গিয়েছে। রবিবার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় করলা, কুমড়ো, শশা, ঝিঙে-সহ নানা জমির খেত জলে ডুবে রয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে পাম্প চালিয়ে জল বের করে দিতে হচ্ছে। কেউ আবার জমির আল কেটেও জল বের করছেন। দাসপুরের টালিভাটার ভোলানাথ মণ্ডল বলেন, “আমার প্রায় এক বিঘা জমির শশা জলে ডুবে রয়েছে। পাম্প চালিয়ে জল বের করছি। কিন্তু গাছের গোড়ায় এখনও জল রয়ে গিয়েছে।” জমির আল কেটে জল বের করতে করতে জ্যোতবাণির বিশ্বজিৎ রায় ও মদন সাঁতরারা বলেন, “এই ভরা গ্রীষ্মে জলের অভাবে মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে যায়। আর আমরা এখন মাঠ থেকে জল বের করছি।” মহকুমা সেচ আধিকারিক নমিত সরকার বলেন, “বাঁধ দেওয়ার ফলে এমনিতেই জল ভালো রয়েছে। তার উপর কংসাবতী ব্যারেজ থেকে শুক্রবার থেকে পরিমাণে অল্প হলেও জল ছাড়ার ফলে বাঁধ টপকে যাচ্ছে। ফলে কলমীজোড় বাঁধে শনিবার বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ আরও উঁচু করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও জল ধরে রাখা যাচ্ছে না।”
এখন প্রশ্ন, জমি থেকে জল বের করে নিলেও কি ফসল বাঁচানো সম্ভব?
জেলা উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক রণজয় দত্ত বলেন, “দাসপুর সব্জি প্রধান এলাকা। আচমকাই এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা খুবই চিন্তিত। গ্রীষ্মকালীন ফসলে জমির গাছের গোড়ায় দু’তিন দিন জল জমে থাকলে গাছের গোড়া পচা রোগ দেখা দেবে। পাতাও নষ্ট হবে। এক কথায় ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি।”
জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। যাতে বাঁধ থেকে আর জল না ছাড়া হয়, তার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy