নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করছেন সদর মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত। —নিজস্ব চিত্র
নতুন জীবন শুরু করলেন হোমের এক অনাথ তরুণী। রীতা সরকার নামে ওই তরুণীর সঙ্গে বিয়ে হল ডেবরার ধামতোড়ের বাসিন্দা পেশায় গাড়ি চালক পিন্টু জাঠির। শুক্রবার মেদিনীপুরের বালিকা হোমে ছোট এক অনুষ্ঠানে চার হাত এক হল।
এ দিন বিয়ের বাসরে হাজির ছিলেন মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত-সহ জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। অমিতাভবাবু বলছিলেন, “পিন্টুকে ধন্যবাদ। উনি অনেক বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওঁদের নতুন জীবন আরও সুন্দর হোক।” আর হোম সুপার শান্তা হালদারের কথায়, “আজকের দিনটা আমাদের সকলের কাছেই খুশির। পাত্রের পরিবারের তরফেই শুরুতে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। সবাই মিলে যতটুকু পেরেছি, আয়োজন করেছি।”
মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটিতে সমাজকল্যাণ দফতরের অধীন ‘বিদ্যাসাগর বালিকা হোম’। ২০০২ সালে কলকাতার এক হোম থেকে এখানে পাঠানো হয়েছিল রীতাকে। বছর তেইশের রীতা অনাথ। এতদিন হোমই ছিল তার পরিবার। ফলে তার বিয়ে নিয়ে হোমের সকলেরই উৎসাহ ছিল সীমাহীন। হোম চত্বরের সভাঘর সকাল থেকেই সাজাতে ব্যস্ত ছিলেন মৌসুমী ভুঁইয়া, মামনি পাত্র, জয়শ্রী চৌধুরী, লক্ষ্মী রুইদাসের মতো আবাসিকরা। এদের কেউ ছ’বছর ধরে এখানে রয়েছেন, কেউ বা আট-দশ বছর। ফুলের মালা ঝুলিয়ে, মেঝেতে আলপনা দিয়ে সাজানো হয়েছিল ঘর।
বিয়ের যোগাযোগ হল কী ভাবে?
হোম সূত্রে খবর, বছর খানেক আগে পাত্রের পরিবারই যোগাযোগ করেন। কারণ, পিন্টুর এক পরিচিত হোমের অনাথ আবাসিককে বিয়ে করেছিলেন। প্রাথমিক যোগাযোগের পর দেখাশোনা পর্ব মেটে। রীতাকে দেখতে হোমে আসেন পিন্টুর পরিজনেরা। পাত্রী তাঁদের পছন্দও হয়। এরপর বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়। প্রয়োজনীয় অনুমতি এসে পৌঁছনোর পর ঠিক হয়, ১৮ জুলাই বিয়ে হবে।
এ দিন দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ বরযাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে হোমে পৌঁছন পিন্টু। পেশায় চিলিং প্ল্যান্টের লরি চালক পিন্টু বলেন, “ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিজের ইচ্ছের কথা পরিবারকে জানিয়েছিলাম। কেউ আপত্তি করেননি। আমি খুশি।” বরযাত্রীদের দলেই ছিলেন বেলা পাত্র, পুতুল জাঠিরা। বেলাদেবী বরের বোন। তাঁর কথায়, “আপত্তির প্রশ্নই ওঠে না। পরিবারের সকলের এই বিয়েতে সম্মতি রয়েছে।” আর বিয়ের পিঁড়িতে বসার পর রীতা বলছিলেন, “আমি খুশি। পুরনো দিনের কথা আর মনে রাখতে চাই না। নতুন জীবন শুরু করতে চাই।”
বিয়ে উপলক্ষে দুপুরের ভোজেরও ব্যবস্থা ছিল। লুচি, আলুর দম, ডাল, মাংস, চাটনি। সঙ্গে দই-মিষ্টি। বিয়ের পর রীতা যখন বরের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি রওনা দিলেন, তখন মৌসুমী-মামনি- জয়শ্রীদের চোখ ছলছল করছে। জয়শ্রী বলেন, “রীতাদির বিয়ে হয়ে গেল। ভাল লাগছে। আবার মন খারাপও করছে।” মৌসুমীর কথায়, “দিদি নতুন ঘর পেল। সংসার করবে। এ জন্য ভাল লাগছে। তবে আমাদের সঙ্গে আর থাকবে না, এটা ভেবে কষ্টও হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy