Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অ্যাম্বুল্যান্স-কাণ্ডে হুঁশিয়ারি মন্ত্রীর

অভিযোগ, রোগী সহায়তা কেন্দ্র অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। প্রথম প্রথম কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্সে জিপিএস ব্যবস্থা চালু করা হলেও, রেফার রোগীদের নিয়ে চালকদের ‘কারবার’ ঠেকানো যায়নি।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০১:৫৫
Share: Save:

কথায় রয়েছে, ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’।

অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনায় সেটাই স্পষ্ট।

রামপুরহাট হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ‘রেফার’ রোগীদের নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের রমরমা কারবার ঠেকাতে রামপুরহাট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বছরখানেক আগে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবায় জিপিএস ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালু করেছিল। পরিজনদের ইচ্ছা, ক্ষমতা বা আর্থিক সামর্থ্যে মেডিক্যাল কলেজের বদলে রোগীকে নার্সিংহোমে ভর্তি করার পরিকল্পনা করলে, লিখিত ভাবে সে কথা হাসপাতাল সুপারের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। এ বিষয়ে নজর রাখার দায়িত্ব ছিল হাসপাতালের রোগী সহায়তা কেন্দ্রের উপরে। ঠিক হয়, সে জন্য বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের চালকেরা রোগী সহায়তা কেন্দ্রে ২০ টাকা করে জমা দেবেন। রোগী সহায়তা কেন্দ্রে সে জন্য দু’জন কর্মীকে নিয়োগ করা হয়।

বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সে সব নিয়ম কাগজ-কলমেই থেকে গিয়েছে। অভিযোগ, রোগী সহায়তা কেন্দ্র অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। প্রথম প্রথম কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্সে জিপিএস ব্যবস্থা চালু করা হলেও, রেফার রোগীদের নিয়ে চালকদের ‘কারবার’ ঠেকানো যায়নি।

নলহাটির নসীপুরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অরিজিৎ দাসের মৃত্যুর তদন্তে জানা গিয়েছিল, রামপুরহাট হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে না গিয়ে সেই শহরের অন্নপূর্ণা নার্সিংহোমে পৌঁছে দেন বেসরকারি একটি অ্যাম্বুল্যান্সের চালক। তার জেরে রবিবার রামপুরহাট জেলা হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ওই অ্যাম্বুল্যান্সটিকে হাসপাতালের তালিকা থেকে বাতিল করার নির্দেশ দেন সুপারকে। জিপিএস ব্যবস্থা ছাড়া কোনও বেসরকারি আম্বুল্যান্সকে হাসপাতালের তালিকায় রাখতেও নিষেধ করেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ‘রেফার’ রোগীদের নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার একের পর এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বিগ্ন মন্ত্রী রবিবার দুপুরে আচমকা রামপুরহাট হাসপাতাল চলে আসেন। ডেকে নেন সুপার, অ্যাসিন্ট্যান্ট সুপার-সহ হাসপাতালের বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের মন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনারা অন্যায় করছেন। আমাকে সে জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। আপনাদের অন্যায়ের ভার আমাকে বইতে হবে কেন?’’ হাসপাতালের সুপার ও অ্যাসিন্ট্যান্ট সুপারকে মন্ত্রী নির্দেশ দেন— জিপিএস ব্যবস্থা ছাড়া কোনও বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স হাসপাতালে রাখা যাবে না। এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দিতে সুপারকে নির্দেশ দেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সুপারের কাছে হাসপাতালের বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের তালিকা চাইলে তা দেখানো যায়নি।

সুপার সুবোধ কুমার মণ্ডল জানান, হাসপাতালের রোগী সহায়তা কেন্দ্র বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করত। চালকদের অসহযোগিতার জেরে রোগী সহায়তা কেন্দ্র এর পর থেকে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না বলে শনিবার জানিয়েছে। তিনি আরও জানান, লোকবলের অভাবে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হচ্ছে। মন্ত্রী জানান, এই বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা মন্ত্রীকে জানান, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে না যেতে চেয়ে রোগীর পরিজনেরা নার্সিংহোমে যেতে চাইলে তাঁরা কী করবেন? সে ক্ষেত্রে রামপুরহাট হাসপাতালের সুপারের অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়ে দেন মন্ত্রী। তা না মানলে আইনি পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারিও দেন। রামপুরহাট হাসপাতালের বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ভূতনাথ ভকত জানান, মন্ত্রীর নির্দেশমতোই তাঁরা কাজ করবেন।

কিন্তু এতে আশঙ্কা কাটছে না হাসপাতালের রোগীদের পরিজনদের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, রেফার হওয়া কোনও রোগীর অনভিজ্ঞ, দুশ্চিন্তায় থাকা আত্মীয়েরাই মূল টার্গেট হয় চালকদের একাংশের। রোগীর পরিজনদের পোশাক, কথাবার্তা শুনেই তারা ছক কষে নেয়। হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ হওয়া মানেই রোগীর অবস্থা খারাপ— এমনই ভয় দেখিয়ে কাজ হাসিল করার চেষ্টা করতে থেকে। ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা, অনেক সময় অ্যাম্বুল্যান্সে বসেই চালকেরা পছন্দের নার্সিংহোমের নাম করে অন্য জায়গার বদনাম করতে থাকেন। চালকদের কথায় বিশ্বাস করেন অনেকেই।

আবার রামপুরহাটে নিশ্চয়যান চালকদের একাংশ বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালককে গাড়ির নম্বরের ভাউচার কমিশনের বিনিময়ে ব্যবহার করতে দেন বলেও অভিযোগ। তা নিয়েও জটিলতা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE