Advertisement
E-Paper

হিসাব মিলছে না রেলের, মাঝ পথেই বেপাত্তা মৈত্রী এক্সপ্রেসের বহু যাত্রী

গুনতির ‘ভুল’ শোধরাতে এখন নাজেহাল রেল পুলিশ। সম্প্রতি রেলের নজরে এসেছে, মৈত্রী এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে কলকাতা স্টেশনে যত যাত্রীর নামার কথা, তা গুনতিতে মিলছে না। কলকাতা স্টেশনে গুনতির সময় যত জন যাত্রী হওয়ার কথা, আসল সংখ্যাটা তার থেকে বেশ কম হচ্ছে।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫১

গুনতির ‘ভুল’ শোধরাতে এখন নাজেহাল রেল পুলিশ।

সম্প্রতি রেলের নজরে এসেছে, মৈত্রী এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে কলকাতা স্টেশনে যত যাত্রীর নামার কথা, তা গুনতিতে মিলছে না। কলকাতা স্টেশনে গুনতির সময় যত জন যাত্রী হওয়ার কথা, আসল সংখ্যাটা তার থেকে বেশ কম হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে রেল পুলিশের অনুমান, গেদে থেকে কলকাতায় আসার পথে মাঝ রাস্তায় ট্রেন থামার সুযোগ নিয়ে নেমে যাচ্ছেন বেশ কিছু যাত্রী। আর তাঁদের মধ্যে বিদেশি যাত্রীরাও রয়েছেন। রেল পুলিশের বক্তব্য, এ ভাবে বিদেশি যাত্রীদের মাঝ পথে অজানা জায়গায় নেমে যাওয়া দেশের নিরাপত্তার পক্ষে যথেষ্ট বিপজ্জনক। নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি যাত্রীদের অভিবাসন দফতর এবং পুলিশকে জানাতে হয়, তাঁরা এ দেশে এসে কোথায় যাবেন। এ ক্ষেত্রে কোনও বিদেশি যাত্রী কলকাতা না পৌঁছলে পুলিশের পক্ষে তা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এই ধরনের ঘটনা সামনে আসায় রেল পুলিশ নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। রেল পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, এখন থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস কলকাতা স্টেশনে ঢোকার পরে পুরো ট্রেনটিকে ঘিরে রেখে তবেই যাত্রীদের নামানো হবে। সেই সময় রেল পুলিশ ছাড়া আর কাউকে প্ল্যাটফর্মে থাকতেও দেওয়া হবে না। যাত্রীরা ট্রেন থেকে নামার পরে তাঁদের সংখ্যা গোনা হবে। তার পর তাঁদের পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

এমনিতে কলকাতা স্টেশন থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ছাড়ার সময় সব যাত্রীকেই জাল দিয়ে ঘেরা জায়গা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে একে একে তাঁদের নির্দিষ্ট কামরায় তুলে দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, ওই সময় প্ল্যাটফর্মে ওই ট্রেনের যাত্রী, তাঁদের আত্মীয়-পরিজন, রেল কর্মী ও রেল পুলিশ ছাড়া কাউকে থাকতে দেওয়া হয় না। এ বার ফিরতি পথেও ওই ব্যবস্থাই চালু করা হবে। রেল পুলিশ জানায়, গোনার পরে যাত্রীদের স্বাগত জানানো হবে।

আসন সংরক্ষণ করার সময় যাত্রীরা নিজেদের ফোন নম্বর-সহ বিস্তারিত বিবরণ রেলকে দিয়ে থাকেন। তা হলে এ দেশে ঢোকার পরে যাঁরা কলকাতা স্টেশনের আগেই ট্রেন থেকে নেমে যাচ্ছেন, ফোন করে তাঁদের গতিবিধির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না কেন? পুলিশের ব্যাখ্যা, ডাউন ট্রেনের বেশির ভাগ যাত্রীই হন বাংলাদেশের। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, তাঁদের আসন সংরক্ষণ প্রক্রিয়া হয় সে দেশে। তাই তাঁদের ফোন নম্বর থেকে যায় বাংলাদেশেই। এখানকার পুলিশের পক্ষে সেই নম্বর নিয়ে ওই যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। এক পুলিশ কর্তা অবশ্য জানালেন, যাত্রীদের এই মাঝপথে নেমে যাওয়ার ঘটনাটি খুব সম্প্রতি নজরে এসেছে রেলের। বিষয়টি সকলের নজরে আনার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। নবান্নকেও তা জানানো হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

২০০৮ সালে বাংলা নববর্ষের দিন চালু হয়েছিল কলকাতা-ঢাকা ট্রেন পরিষেবা। এখন সপ্তাহে তিন দিন যাতায়াত করে মৈত্রী। ভারত সরকারের তরফে গেদেতে এবং বাংলাদেশ সরকারের তরফে দর্শনা স্টেশনে অভিবাসন দফতরের কর্মীরা যাত্রীদের পাসপোর্ট এবং ভিসা পরীক্ষা করেন। সেই মতো দু’দেশের রেল কর্মীদের হাতে যাত্রীদের নামের তালিকা তুলে দেন তাঁরা। সেই তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে যাত্রীদের কলকাতা স্টেশনে নামার কথা। কিন্তু সেখানেই গোলমাল দেখা দেওয়ায় এই বিশেষ নজরদারি চালু করছে রেল পুলিশ।

তবে শুধু মাঝ রাস্তায় যাত্রী নামাই নয়, সমস্যা আরও আছে। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, ট্রেনে থাকা পুলিশের নজর এড়িয়ে নিত্যই মৈত্রী এক্সপ্রেস থেকে বিভিন্ন জায়গায় মাল নামানো হচ্ছে। কলকাতা স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পরে ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝেমধ্যেই বস্তা ভর্তি মাল ফেলে দেওয়া হচ্ছে। আবার ফিরতি পথেও একই কাজ হচ্ছে। এই দুই ঘটনা জানাজানি হওয়ায় ট্রেনে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের প্রতিটি কামরায় অনেক বেশি নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে ট্রেন থেকে কেউ মাঝরাস্তায় নামতে না-পারেন। এবং সেই সঙ্গে চোরাচালানও ঠেকানো যায়।

maitree express
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy