ঘটনাস্থলে পুলিশ।(ইনসেটে) মিতালি ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র।
তিরিশ বছর ধরে জাঁকজমক করে পুজো হয় পাড়ায়। রবিবার সকালে দিদির সঙ্গে পুজোর আনন্দ ভাগ করে নিতে বাড়ি ফিরছিলেন হাওড়ার বালির বাসিন্দা গৌরাঙ্গ ঘোষও। পথেই খবর পান দিদি ‘খুন’ হয়ে গিয়েছেন। কালীপুজোর দিন সাতসকালে ‘দিদি’র মৃত্যুতে মূহ্যমান পাড়াও। আলো-মাইক বন্ধ করে নিয়মরক্ষার পুজো করছেন জামালপুরের আঝাপুর পূর্ব পাড়ার পুজো উদ্যোক্তারাও।
মণ্ডপ থেকে প্রায় তিনশো মিটার দূরে গৌরাঙ্গবাবুদের বাড়ি। দোতলা বাড়িতে একাই থাকতেন বর্ধমান আদালতের আইনজীবী মিতালি ঘোষ (৫৮)। এ দিন বাড়ির ভিতর শৌচাগারের কাছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাঁর রক্তাক্ত দেহ মেলে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। কানের লতিতেও কাটা ছিল। দেহের পাশে পড়ে ছিল ভাঙা ফুলের টব। সকালে কাজে এসে ‘দিদিমণি’র সাড়া না পেয়ে মইয়ে উঠে ঘটনাটি প্রথম দেখেন বাড়ির পরিচারিকা চাঁপা ধারা। তিনিই খবর দেন পড়শিদের। প্রতিবেশিদের দাবি, এমন নৃশংস ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। বাড়িতে একা মহিলার এমন বিপদে নিরাপত্তা বাড়ানোরও দাবি করেছেন তাঁরা।
পুজোর আগে আঝাপুর বাজারে একটি জামাকাপড়ের দোকানে কেপমারি হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ তুলে ওই দোকানের মালিক অভিষেক কবিরাজ বলেন, “চুরির ঘটনাটা আমরা খুব বড় করে দেখিনি। কিন্তু গ্রামের ভিতর ঢুকে আততায়ীরা এক মহিলা আইনজীবীকে খুন করে চলে গেল, এটা ভাবাচ্ছে।” পাশে দাঁড়ানো আরও কয়েকজনের উদ্বেগ, “আমরা জামালপুর-মেমারি রাস্তার ধারেই থাকি। গ্রামের ভিতর এ রকম ঘটনা ঘটলে আমাদেরও নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে।” স্থানীয় বাসিন্দা সূর্য মালিক, সন্ধ্যা ভট্টাচার্যদের দাবি, ছেলেমেয়েরা সন্ধ্যায় পাশের গ্রামে পড়তে যায়। একা একাই বাড়ি ফেরে। এই ঘটনার পর নিশ্চিন্ত থাকা যাবে না। তবে ওই গ্রামে আগে এমন ঘটনা ঘটেনি, কোনও রাজনৈতিক হিংসাও দেখা যায়নি, দাবি করেন বৃদ্ধ খোকন চৌধুরি। এ দিনও ‘হামলা’, ‘খুনে’র কারণ কী তা নিয়ে ধন্দে রয়েছে তাঁরা।
পুলিশের অবশ্য দাবি, গ্রামবাসীর আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। গ্রামে পুলিশের টহলদারি বাড়ানো হচ্ছে।
ওই কালীপুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা আবির রায় বলেন, “এমন ঘটনার পরে আমাদের মন-মেজাজ একদম ভাল নেই। আমরা বেশির ভাগই ওই পরিবারের সঙ্গে রয়েছি। তবে মণ্ডপ তৈরি ও প্রতিমা চলে আসায় নিয়মরক্ষা করে পুজো করতে হচ্ছে।’’ পাড়ার বাসিন্দারা জানান, আয়তনে ছোট হলেও পুজোর আয়োজনে কমতি থাকত না। আলো, মাইকে গমগম করত পাড়া। এ বার অবশ্য আলোর গেটগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাইক বাজবে না।
দীপাবলিতে যেন আঁধার নেমেছে পাড়ায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy