ক্যানিঙে পথ অবরোধের জেরে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অর্ণব রায়কে গ্রেফতার করছে পুলিশ। (ডান দিকে) পেট্রাপোল সীমান্তে খোলা দোকানপাট।
দোকানপাট খোলা।
চলেছে যানবাহন।
অফিস-কাছারিতে হাজিরাও ছিল অন্য দিনের মতোই।
বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু এলাকায় রেল-সড়ক অবরোধ হয় বা ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রাখেন ঠিকই, কিন্তু মঙ্গলবার কংগ্রেসের ডাকা বন্ধে তেমন সাড়া মিলল না দুই ২৪ পরগনাতেই। শহরাঞ্চল বা গ্রামাঞ্চল— বেশির ভাগ জায়গাতেই জনজীবন ছিল স্বাভাবিক। কোথাও কোথাও অবশ্য বন্ধ সমর্থক এবং বিরোধীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। তবে, পুলিশ তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করেছে। সবংয়ে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু, রাজ্যে বেড়ে চলা নারী নির্যাতন-সহ বিভিন্ন দাবিতে এ দিন বন্ধ ডেকেছিল কংগ্রেস। উত্তর ২৪ পরগনায় কংগ্রেসের সংগঠন কিছুটা মজবুত বসিরহাটে। কিন্তু এ দিন সেখানেও বন্ধের তেমন প্রভাব পড়েনি। নতুন বাজার, মায়ের বাজার, পুরনো বাজারের অধিকাংশ দোকান ছিল খোলা। দেখা গিয়েছে ক্রেতাদের ভিড়ও।
ভ্যাবলা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সকালে কংগ্রেস সমর্থকরা দলীয় পতাকা নিয়ে রেললাইনে বসে পড়ায় হাসনাবাদ-শিয়ালদহ শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রেল পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের হটিয়ে দেয়। পরে আবার ট্রেন চলাচল ঠিকঠাক হয়। সাড়ে ৯টা নাগাদ ওই একই জায়গায় ট্রেন অবরোধ করতে গেলে বন্ধ সমর্থকদের গ্রেফতার করে রেল পুলিশ। বসিরহাটের মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে কর্মীদের দফতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না খবর পেয়ে পুলিশ সেখান থেকে জেলা কংগ্রেস সভাপতি অমিত মজুমদার-সহ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে। কিছু স্কুলে প্রথম দিকে বন্ধ সমর্থকেরা দলীয় পতাকা লাগিয়ে দিলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আর চোখে পড়েনি। বাদুড়িয়ার বাগজোলায় অটো চালানোকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা, অশোকনগর, বারাসত— সর্বত্রই যানবাহন চলেছে স্বাভাবিক। কিছু দোকানপাট অবশ্য বন্ধ ছিল। পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের কাজ হয়েছে। ঢাকা-কলকাতা বাস পরিষেবাও স্বাভাবিক ছিল। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনে দফায় দফায় ট্রেন অবরোধ হয়। কাঁকিনাড়া, শ্যামনগরে মিনিট পনেরো করে সড়ক অবরোধও হয়। কাঁচরাপাড়ায় দু’দফায় ঘণ্টাখানেক অবরোধ চলে। কিন্তু তার পরেও জনজীবন স্তব্ধ হয়নি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা (শহর) সভাপতি তাপস মজুমদারের দাবি, প্রায় ৪০০ জন কংগ্রেস কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
টাকিতে কংগ্রেসের পথ অবরোধ।
জেলা কংগ্রেসের কেউ কেউ মনে করছেন, এখানে দলের গোষ্ঠী-কোন্দলের জেরেই বন্ধ সফল হল না। তাঁরা মনে করছেন, দলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি পদ থেকে অসিত মজুমদারকে সরিয়ে যে ভাবে তাঁর ভাই অমিতবাবুকে ওই পদে বসানো হয়েছে, তা নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। তাই বন্ধের প্রচারে বা বন্ধ পালনে তাঁরা পথে নামেননি। কেননা, এই জেলায় দলের কর্মী-সমর্থকদের বেশির ভাগই অসিতবাবুর অনুগামী।
পথে না নামা নিয়ে অবশ্য জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক, হাবরার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সমাদ্দার বলেন, ‘‘হাবরার অনেক জায়গায় এ দিন মনসা পুজো ছিল। আমরা চাইনি পথে নেমে সাধারণ মানুষকে অসুবিধায় ফেলতে।’’ জেলা (গ্রামীণ) কংগ্রেস সভাপতি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘জেলায় বন্ধ অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ হয়েছে। দাদা দলীয় কার্যালয়ে বসে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে তৃণমূল সমর্থকেরা পুলিশের সাহায্য নিয়ে অফিস-আদালত, দোকান-বাজার খুলে বন্ধ বানচালের চেষ্টা করেছেন।’’ অসিতবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘কংগ্রেস কর্মী হিসেবে বন্ধে রাস্তায় ছিলাম। কেউ যদি বলেন, আমি দলীয় কার্যালয়ে ছিলাম, সেটা তাঁর বিষয়।’’
বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিশ আলি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘কংগ্রেসের ডাকা বন্ধ মানুষ সমর্থন করেননি। কর্মসংস্কৃতি কাকে বলে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দেওয়ায় মানুষ এখন আর কর্মনাশা বন্ধ সমর্থন করেন না।’’দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ডায়মন্ড হারবার এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি জায়গায় সকালের দিকে সড়ক ও রেল অবরোধ হলেও বেলা বাড়তেই সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। ক্যানিঙে জেলা কংগ্রেস সভাপতি অর্ণব রায়ের নেতৃত্বে দলের কর্মী-সমর্থকেরা সকাল ৬ টা থেকেই পথে নেমে পড়েন। মিছিল হয়। ক্যানিং-তালদি স্টেশনে রেল অবরোধ, ক্যানিং-বারুইপুর সড়কেও অবরোধ হয়। পুলিশ অর্ণববাবু-সহ প্রায় ৪০ জন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করলে অবরোধ ওঠে। পরে তাঁরা সকলেই ব্যাক্তিগত জামিন পান। ক্যানিংয়ে দোকান-বাজার বন্ধ ছিল। বাস, ট্রেকার বা অটো সে ভাবে না চলায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। বাসন্তী, গোসাবা, জীবনতলায় অধিকাংশ দোকান খোলা ছিল। মহকুমাশাসক (ক্যানিং) প্রদীপ আচার্য জানান, স্কুল-কলেজ, সরকারি দফতরে ৯৮ শতাংশ কর্মী হাজির ছিলেন। তবে, ছাত্র-ছাত্রী , মানুষের উপস্থিতি কম ছিল।
ছবি: সামসুল হুদা ও নির্মাল্য প্রামাণিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy