Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
BJP

BJP: বিজেপি-তে রদবদলের সম্ভাবনা, শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ তারকার উত্থান কি মেনে নেবে দিলীপ শিবির

বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি বদলের আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরে। আর তাতে যিনি এগিয়ে রয়েছেন তিনি শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ।

এখন থেকেই রাজ্যের পরবর্তী যুব মোর্চা সভাপতি নিয়ে আলোচনা চলছে বিজেপি-তে।

এখন থেকেই রাজ্যের পরবর্তী যুব মোর্চা সভাপতি নিয়ে আলোচনা চলছে বিজেপি-তে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২১ ১৮:১৪
Share: Save:

বিধানসভা নির্বাচনের ফলের কথা মাথায় রেখেই নতুন করে রাজ্য সংগঠন সাজাতে চাইছে বিজেপি। আপাতত মূল দলে বড় কোনও রদবদল না হলেও শাখা সংগঠনে কিছু পরিবর্তন দেখা যেতে পারে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। দলের মূল দুই শাখা সংগঠন মহিলা মোর্চা এবং যুব মোর্চার মাথায় রয়েছেন বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল এবং সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। অদূর ভবিষ্যতে মহিলা মোর্চার সভানেত্রী বদল না হলেও যুব শাখায় নেতৃত্ব বদলের আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরে।

যুব শাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যাঁর নাম আলোচনায়, তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার বিধায়ক তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার অশোক ডিন্ডা। বিজেপি-র তারকা বিধায়কদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তবে রাজ্য বিজেপি-তে শুভেন্দু অধিকারীর‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত ডিন্ডাকে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মেনে নেবেন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বস্তুত, দিলীপ শিবিরেরনেতারা ওই পদের জন্য এগিয়ে রাখছেন পুড়শুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষকে।

বুধবারই যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা ঘোষণা করেও তা ফিরিয়ে নিয়েছেন সৌমিত্র। তবে তার আগে থেকেই সৌমিত্রকে সরানোর আলোচনা দলের অন্দরে শুরু হয়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে সৌমিত্রকে বিজেপি-র রাজ্য কমিটিতে নিয়ে এসে কোনও পদ দেওয়া হতে পারে। বিজেপি সূত্রের খবর, আগামী দিনে সৌমিত্রকে একজন রাজ্য সম্পাদক করা হতে পারে। একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে-পড়া সৌমিত্রকে নিয়ে অনেক দিন থেকেই ক্ষুন্ন নেতৃত্ব। পাশাপাশি, বিধানসভা নির্বাচন পর্বে যুব মোর্চাকে সে ভাবে কোনও কর্মসূচি নিতে দেখা যায়নি। নেতৃত্বের তরফে যা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, তা-ও ‘যথাযথ’ ভাবে পালিত হয়নি। সম্প্রতি বিজেপি কলকাতা পুরসভা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিলে তাতে যুব শাখাকেই বেশি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খোদ সৌমিত্রই ওই কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন না।

রাজনীতিতে যোগ দিয়েই বিধায়ক অশোক ডিন্ডা।

রাজনীতিতে যোগ দিয়েই বিধায়ক অশোক ডিন্ডা। ফাইল চিত্র

বিধানসভা নির্বাচনে বড়া আশা করলেও বিজেপি জয় পেয়েছে ৭৭টি আসনে। এখন রাজ্য বিজেপি চাইছে রাজ্য জুড়ে নিয়মিত আন্দোলন কর্মসূচি। আর তাতে যুব শাখার উপরই থাকবে বাড়তি দায়িত্ব। সেই কারণেই যুব মোর্চাকে ঢেলে সাজার পরিকল্পনা নিয়েছে গেরুয়া শিবির। যার শুরু হবে মোর্চার নেতা বদলের মধ্যে দিয়ে। যেখানে ডিন্ডার বসার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করছে রাজ্যের পদ্মশিবিরের একাংশ।

বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক মুখে মুখে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিজেপি-তে যোগ দেন ডিন্ডা। শুভেন্দুর মাধ্যমেই বিজেপি-তে আসা ডিন্ডা প্রার্থী হন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়নায়। বিধায়ক হওয়ার পরেও কাজের মধ্যে দেখা গিয়েছে ডিন্ডাকে। ইয়াস ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি নিজের এলাকায় ত্রাণের কাজ যেমন তিনি সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন, তেমনই বিধানসভাতেও সক্রিয় থেকেছেন। আবার পুরসভা অভিযানের কর্মসূচিতেও হাজির ছিলেন তিনি। তবে ডিন্ডার দাবি, পদের লোভে তিনি কিছু করছেন না। বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমি কিছু পাওয়ার জন্য বিজেপি-তে আসিনি। দল আমায় প্রার্থী করে এবং মানুষ বিধায়ক নির্বাচিত করে কাজ করার যে সুযোগ করে দিয়েছে তাতেই আমি কৃতজ্ঞ।’’ একই সঙ্গে ডিন্ডা বলেন, ‘‘নেতৃত্ব আমায় এখনও যুব মোর্চা বা অন্য কোনও দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেননি। তবে দল যে কাজ বলবে তা-ই করতে আমি তৈরি।’’

রাজ্য বিজেপি নেতাদের অনেকে মনে করছেন, প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে ডিন্ডার পরিচিতি যুব সংগঠনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কার্যকরী হবে। তবে একটা অংশের দাবি, যুব শাখার সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দলের কোনও পুরনো সৈনিককেই দেওয়া উচিত। রাজ্য বিজেপি-তে দিলীপ শিবিরের লোক হিসেবে পরিচিত এক নেতার বক্তব্য, ‘‘নবাগত সৌমিত্র খাঁকে যুব সভাপতি করে দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এঁরা না জানেন দলের আদর্শ, না রয়েছে এঁদের বিজেপি ঘরানার প্রশিক্ষণ।’’ এই শিবির চাইছে, যুব সভাপতি বদল করতেই হলে সেই দায়িত্ব দেওয়া হোক পুরশুড়ার বিমানকে। বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ব্যবধানে জয়ী বিধায়কদের অন্যতম বিমান দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপি-তে রয়েছেন। তিনি জিতেছেন ২৮, ১৭৮ ভোটে।

তিনি কি দলের যুব সভাপতি হতে চান? জবাবে বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে বিমান বলেন, ‘‘বিজেপি-তে আমি কী চাই সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। দল কী চায় সেটাই মূল এবং একমাত্র কথা। নেতৃত্বে যেমন নির্দেশ দেবেন তেমন কাজ করব।’’ দিলীপ শিবিরের কাছে বিমান গুরুত্ব পাওয়ার পিছনে কারণও রয়েছে। একটা সময় বিজেপি-র সাংগঠনিক জেলা আরামবাগের যুব মোর্চা সামলেছেন বিমান। তিনি ছিলেন সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক। এর পরে তিনি ওই জেলাতেই বিজেপি-র সভাপতি হন। যুব শাখা ও মূল দলের দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা বিধায়ক বিমান কাজে লাগাতে পারবেন বলেই দাবি রাজ্য বিজেপি-র ওই অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Dilip Ghosh Suvendu Adhikari Ashok Dinda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE