Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
central cabinet

Modi Cabinet Reshuffle: কাজের মূল্যায়ন এবং রাজনীতির সমীকরণ মিলিয়েই রদবদল নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভায়

মন্ত্রিসভায় পশ্চিমবঙ্গের নতুন চার বাঙালি সদস্যের পাশাপাশি প্রতিমন্ত্রীর তালিকায় রয়েছেন আরও এক বাঙালি— ত্রিপুরার বিজেপি সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক।

গ্রাফিক।

গ্রাফিক। সন্দীপন রুইদাস।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২১ ২৩:১৭
Share: Save:

জল্পনা শুরু হয়েছিল গত কয়েকমাস ধরেই। সার ও রসায়ন মন্ত্রী (ওষুধ সংক্রান্ত দফতর এই মন্ত্রকের অন্তর্গত) সদানন্দ গৌড়াকে দূরে রেখে বিভিন্ন বিদেশি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে করোনা টিকা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছিলেন তাঁরই দফতরের প্রতিমন্ত্রী মনসুখভাই মাণ্ডব্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘বিশ্বস্ত’ গুজরাতের বিজেপি নেতা মনসুখের পদোন্নতির পাশাপাশি সদানন্দের খারাপ ‘পারফরম্যান্স’ও ছিল আলোচনায়। অতীতে একই কারণে রেলমন্ত্রী এবং কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরানো হয়েছিল তাঁকে। বুধসন্ধ্যায়ও তার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল।

পশ্চিমবঙ্গের চার সাংসদ মন্ত্রী হয়েছেন। বাদ পড়েছেন দুই সাংসদ। তাঁদের নাম ইতিমধ্যেই প্রকাশিত। তবে মন্ত্রিসভায় নতুন চার বাঙালি সদস্যের পাশাপাশি প্রতিমন্ত্রীর তালিকায় রয়েছেন আরও এক বাঙালি— ত্রিপুরার সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক।

কাজের মূল্যায়ন এবং রাজনীতির সমীকরণ মিলিয়েই মন্ত্রিসভায় রদবদল করেছেন মোদী। বিপুলায়তন মন্ত্রিসভার সদস্যদের দেখে তেমনই মনে করছেন রাজধানীর রাজনীতির কারবারিরা। তেমন কোনও নাটক নেই। নেই তেমন কোনও চমকও। হিন্দিবলয়ের রাজ্য মধ্যপ্রদেশ থেকে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া যে মন্ত্রী হবেন, তা প্রত্যাশিতই ছিল। দেড় বছর আগে কংগ্রেস ছেড়ে দু’ডজনেরও বেশি বিধায়ক নিয়ে বিজেপি-তে শামিল হয়েছিলেন তিনি। কমলনাথ সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় এনেছিলেন পদ্মশিবিরকে। তারই পুরস্কার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব। মধ্যপ্রদেশ থেকে মন্ত্রী হওয়া বীরেন্দ্র কুমার বুন্দেলখণ্ড এলাকায় দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত। বিজেপি সূত্রের খবর, বীরেন্দ্রকে দিয়েই বুন্দেলখণ্ডে উমা ভারতীয় ‘শূন্যস্থান’ পূরণ করতে চান মোদী-শাহ।

কোভিড পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের কাজ নিয়েও মোদী এবং অমিত শাহ খুশি ছিলেন না বলে বিজেপি-র অন্দরের খবর। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় চাঁদনি চকের সাংসদ দিল্লিতে অক্সিজেনের অপ্রতুল সরবরাহ নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও বিরোধীদের নিশানা হয়ে ওঠায় তাঁর বিদায় অনিবার্য হয়েছে। তাঁর জায়গায় দিল্লির নতুন প্রজন্মের নেত্রী মীনাক্ষী লেখিকে আনা হয়েছে মন্ত্রিসভায়।

প্রতিমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীরও পদোন্নতি হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীরও পদোন্নতি হয়েছে।

তবে জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে বিতর্কে জড়ালেও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়ালের বিদায়ের পিছনে স্বাস্থ্যের কারণই মুখ্য। মাস কয়েক আগে কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর উত্তরাখণ্ডের এই নেতা মন্ত্রক ও দলের কাজে কার্যত কোনও সময়ই দিতে পারছিলেন না। আগামী বছরের গোড়াতেই উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা ভোট। তাই এ বারের মন্ত্রিসভার রদবদলে হিমালয়ঘেরা রাজ্য থেকে আরেক প্রভাবশালী ব্রাহ্মণ নেতা অজয় ভট্টকে মন্ত্রী করেছেন মোদী। উত্তরাখণ্ডের সঙ্গেই বিধানসভা ভোট উত্তরপ্রদেশে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানার মন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গোয়ারের মতো প্রবীণকে সরিয়ে এস পি সিংহ বাঘেল, ভানুপ্রতাপ সিংহ বর্মা, কৌশল কিশোর, বি এল বর্মা, অজয়কুমার মিশ্রের মতো নেতাদের মন্ত্রিসভায় আনা হয়েছে। চেষ্টা হয়েছে উচ্চবর্ণ, অনগ্রসর এবং দলিত রাজনীতির ভারসাম্য রক্ষার। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সহযোগী আপনা দল (এস) নেত্রী অনুপ্রিয়া পটেলও। উত্তরপ্রদেশ থেকে এ বার মন্ত্রিসভায় এসেছেন মোট ৭ জন।

মন্ত্রিসভার রদবদলে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মহারাষ্ট্রকেও। মহারাষ্ট্রের প্রকাশ জাভড়েকর, সঞ্জয় ধোত্রে, রাওসাহেব দানবে পাটিলের মতো মন্ত্রীরা বাদ পড়েছেন। এঁদের মধ্যে দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত রাওসাহেব রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি। শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের মোকাবিলায় তাঁকে রাজ্য রাজনীতিতে ফেরানো হতে পারে বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। মহারাষ্ট্র থেকে মোদীর মন্ত্রিসভায় এসেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ রানে, প্রাক্তন এনসিপি নেতা কপিল পাটিল, ঔরঙ্গাবাদের প্রাক্তন মেয়ার ভগবত কারাডের মতো ‘আঞ্চলিক প্রভাবশালী’রা। তুলনায় অপরিচিত ডিন্ডোরির সাংসদ ভারতী পওয়ারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তি অবশ্য অবাক করেছে অনেককেই। দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটক থেকে মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার ‘ঘনিষ্ঠ’ শোভা করন্ডলাজে প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। রাজীব চন্দ্রশেখর, এ নারায়ণস্বামী, ভগবন্ত খুবার মতো নতুন প্রজন্মের নেতাদের ঠাঁই হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়।

বাদ পড়লেন রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক।

বাদ পড়লেন রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক।

মন্ত্রিসভার রদবদলে বিহার থেকে বাদ পড়েছেন রবিশঙ্কর প্রসাদের মতো প্রবীণ বিজেপি নেতা। নয়া তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রণয়ন এবং ‘ব্যক্তিগত তথ্য গোপনের স্বাধীনতা’ ঘিরে বিতর্কের বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর ঠিক ভাবে সামলাতে পারেননি বলে অনেকে মনে করছেন। বিশেষত, টুইটার-বিবাদ যে ভাবে আন্তর্জাতিক খবর হয়ে উঠেছিল, তা রবিশঙ্করের বিদায় প্রশস্ত করেছে বলেই অনেকের ধারণা। বিহার থেকেই সহযোগী দুই দলের মন্ত্রী এসেছেন মোদীর ক্যাবিনেটে— জেডি(ইউ)-র রামচন্দ্রপ্রসাদ সিংহ এবং এলজেপি-র সাংসদ পশুপতি পারস।

এ বারের রদবদলে মোট সাত জন প্রতিমন্ত্রীর পদোন্নতি হয়েছে। বুধবার পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া এই নেতাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নাম অনুরাগ ঠাকুর। অনুরাগের বাবা তথা হিমাচল প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রেমকুমার ধুমল সে রাজ্যের বিজেপি-র গোষ্ঠী সমীকরণে বর্তমান সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার বিরোধী হিসেবে পরিচিত। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সন্ত্রাস মোকাবিলায় বিশেষ তৎপরতা দেখিয়েছেন তেলঙ্গানার নেতা জি কৃষ্ণ রেড্ডি। তাঁকেও পূর্ণমন্ত্রী করা হয়েছে।

বাদ পড়া সদানন্দ গৌড়া এবং নতুন মুখ সর্বানন্দ সোনোয়াল ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।

বাদ পড়া সদানন্দ গৌড়া এবং নতুন মুখ সর্বানন্দ সোনোয়াল ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।

মোদীর গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি ছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত পুরুষোত্তম রূপালা। প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন তিনিও। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহেরও প্রশাসনিক দক্ষতার কারণেই প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রিত্বে পদোন্নতি হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। তবে আরেক প্রাক্তন আমলা হরদীপ সিংহ পুরীর পূর্ণমন্ত্রী পদে উত্তরণ অবাক করেছে অনেককেই। কারণ, বিমান মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তাঁর পারফরম্যান্স আহামরি কিছু ছিল না বলেই অভিমত অনেকের।

প্রকাশ্যে গো মাংস ভক্ষণ বা ধর্মান্তকরণের বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের দায়ে অভিযুক্ত হলেও অরুণাচল প্রদেশের নেতা কিরেন রিজিজু উত্তর-পূর্ব ভারতে সাংগঠনিক বিস্তারে অবদানের জন্যই প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হলেন। অন্যদিকে, অসমে হিমন্ত বিশ্বশর্মার কাছে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে হেরে যাওয়া সর্বানন্দ সোনওয়ালকে কেন্দ্রে আনা কার্যত ‘পুনর্বাসন’ বলেই মনে করছে বিজেপি-র একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE