জয়গাঁয় এই সভাতেই জেলাশাসকের নামে কটূক্তি করে এসডিও, বিডিও-সহ সবাইকে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারির বিরুদ্ধে।—নিজস্ব চিত্র।
সরকারি জমি থেকে অবৈধ দখলদার তুলতে অভিযান চালিয়েছিল জেলা প্রশাসন। তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে শাসকদলের বিধায়ক জেলাশাসকের নামে অশ্লীল কটূক্তি করলেন। এসডিও-বিডিও অফিসের সকলকে পুড়িয়ে মারার হুমকি দিলেন। এমনই অভিযোগ উঠেছে কালচিনির তৃণমূল বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারির বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে জয়গাঁ উন্নয়ন পর্ষদের (জেডিএ) চেয়ারম্যান।
নিজের কর্তব্য করার ‘অপরাধে’ তৃণমূলের নেতাদের কাছে অপদস্থ হওয়া পুলিশ-প্রশাসনের কর্মীদের কাছে নতুন কিছু নয়। শুক্রবারই সিভিক ভলান্টিয়ার এক কর্মী ট্রাফিক আইন ভাঙার জন্য সাংসদ দোলা সেনের গাড়ি আটকালে দোলা তাঁকে কান ধরে ওঠবোস করাতে চেয়েছিলেন। একই কারণে এক কনস্টেবল নিগৃহীত হয়েছেন সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। কিন্তু শনিবার প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে তৃণমূল বিধায়ক যে ভাষায় এক মহিলা জেলাশাসককে গালিগালাজ করেছেন, তা বেনজির।
ঘটনাটি ঘটেছে ১১ জুন। সেদিন আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের জয়গাঁ গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি ময়দানে উচ্ছেদের প্রতিবাদে কর্মিসভা করেন উইলসন। সেই সময়ে তিনি কোনও সরকারি অফিসে ফোন করে গালি ও হুমকি দেন। সেই ঘটনার একটি ভিডিও মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা উত্তরবঙ্গে। শনিবার তা দেখানো হয় সংবাদমাধ্যমেও। তাতে আলোড়ন পড়েছে পুলিশ-প্রশাসন ও তৃণমূলের অন্দরে।
তৃণমূল বিধায়ক উইলসন অবশ্য গালি ও হুমকির অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘জবরদস্তি উচ্ছেদ আমাদের দলনেত্রী পছন্দ করেন না। সে জন্য প্রতিবাদ করেছি। কোনও গালি-হুমকি দিইনি।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘ব্যাপারটা মিটে গিয়েছে।
এখন পুরানো ঘটনা টেনে বাজার গরমের চেষ্টা হচ্ছে।’’
তবে সরকারি সূত্রের খবর, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের কিছু আধিকারিক উইলসনের এই প্রকাশ্য হুমকির খবর জানান নবান্নে। তা নিয়ে ক্ষোভও জানান তাঁরা। জেলাশাসক অ্যালিস ভাজ প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে শাসক দলের নেতার ওই কটূক্তিতে তিনি ব্যথিত, তা একান্তে জানাচ্ছেন বেশ কিছু জেলা আধিকারিক।
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা জানান, তাঁরা ভিডিও-ফুটেজ হাতে পাওয়ার পরে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন। অভিযোগ পৌঁছেছে প্রদেশ তৃণমূল ভবনেও। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিশদ খোঁজ না নিয়ে কিছু বলতে পারব না।’’ তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এমন হওয়ার কথা নয়। ঠিক কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে প্রদেশ নেতৃত্বকে জানাব।’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি জয়গাঁ এলাকায় গোপীমোহন ময়দানে সরকারি জায়গা দখল রুখতে অভিযান চালায় আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন। পুলিশের উপস্থিতিতে বেআইনি পাঁচিলের কিছুটা ভেঙে দেওয়া হয়। তাতে আপত্তি জানান এলাকার তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। ওই এলাকা থেকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে নির্দল হিসেবে জিতেছিলেন উইলসন। পরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে জেডিএ-এর চেয়ারম্যান হন। উচ্ছেদের পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দাবি করেন, জয়গাঁ এলাকায় দখলদার উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত হলে পদাধিকার বলে তাঁর জানার কথা। এ নিয়ে কোনও সরকারি অফিসারের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়ে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘কে এসব সিদ্ধান্ত নিল? এসডিও-বিডিও অপিসে গিয়ে সকলকে জ্বালিয়ে দেব। কে ডিএম?’’ ওই ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে, এর পরে তিনি মহিলা জেলাশাসকের উদ্দেশে অশ্লীল মন্তব্য করেন। ওই কথাবার্তা শোনার পরে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা হাততালি দিয়ে ওঠেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy