অমৃতসর এক্সপ্রেসের ধর্ষণ-কাণ্ড এখনও থিতিয়ে যায়নি। এর মধ্যেই চলন্ত ট্রেনের কামরায় ফের সেনা জওয়ানের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল। এ বার ঘটনাস্থল রাজধানী এক্সপ্রেস! অভিযুক্ত জওয়ানকে শুক্রবার রাতে মোগলসরাই স্টেশন থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় রেল পুলিশ। রেল পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত জওয়ানের নাম দালের সিংহ। পদমর্যাদায় তিনি ল্যান্স নায়েক। এখন আগরতলায় কর্মরত। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। বিহারের গয়ার কাছে দালের এক মহিলা যাত্রীর শ্লীলতাহানি করেন বলে অভিযোগ। সেনা কর্তৃপক্ষের তরফেও জানানো হয়েছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দালেরকে তাঁর ইউনিটে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি এক নাবালিকা অমৃতসর এক্সপ্রেসে জওয়ানদের জন্য সংরক্ষিত কামরায় উঠে পড়েছিল। সেই সুযোগে তিন জওয়ান তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। মধুপুরে রেল পুলিশ এক জওয়ানকে গ্রেফতার করে। দু’দিন পরে গুয়াহাটি বিমানবন্দর থেকে আরও দুই অভিযুক্ত জওয়ানও গ্রেফতার হয়।
রাজধানী এক্সপ্রেসের ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার বেশি রাতে। মহিলা ও জওয়ান দালের— দু’জনেই ছিলেন বি-তিন কামরায়। রেল সূত্রের খবর, হাওড়া থেকে ছাড়া রাজধানী গয়া পৌঁছনোর আগেই দালের পাশে বসে থাকা মহিলা যাত্রীর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন বলে অভিযোগ। গয়া পেরোনোর পরে ওই মহিলা সহযাত্রীদের সাহায্য চান। অন্য যাত্রীরাও প্রতিবাদ জানান। কিছু ক্ষণে টিকিট পরীক্ষক ওই কামরায় আসেন। তিনি ঘটনাটি জানতে পেরে ওই রাজধানীর দায়িত্বে থাকা ট্রেন সুপারিন্টেডেন্টকে খবর দেন।
রেল সূত্রের খবর, ট্রেন সুপারিন্টেনডেন্ট ছিলেন ‘প্যান্ট্রিকার’-এর একটি কুপে। সেখানে রেল সুরক্ষা বাহিনীর স্কোয়াডও (আরপিএফ) থাকে। খবর পেয়ে স্কোয়াড নিয়ে ট্রেন সুপারিন্টেনডেন্ট ওই কামরায় ঢোকেন। রেলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা দালেরকে সরিয়ে নিয়ে যান। তত ক্ষণে রাজধানী মোগলসরাইয়ে পৌঁছয়। সেখানে আরপিএফ থানার পুলিশকে আগাম খবর দেওয়া হয়েছিল। ট্রেন স্টেশনে ঢোকার পরে রেল পুলিশ মহিলা যাত্রীর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ নেয়। ট্রেন সুপারিন্টেনডেন্টও ওই জওয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। মোগলসরাই রেল পুলিশ ওই জওয়ানকে ট্রেন থেকে নামিয়ে থানায় নিয়ে যায়। সেনার পূর্বাঞ্চলীয় মুখপাত্র উইং কম্যান্ডার সিমরান পাল সিংহ বিরদির অবশ্য বক্তব্য, ‘‘অভিযুক্ত জওয়ানের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ট্রেনে বসার জায়গা ও মালপত্র রাখা নিয়ে অভিযোগকারিণী মহিলার সঙ্গে জওয়ানের তর্কাতর্কি হয়েছিল। কিন্তু কোনও ভাবেই ওই তিিন মহিলার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেননি বলে দাবি করেছেন ওই জওয়ান।’’
রাজধানীতে এই ধরনের অভিযোগ ওঠায় রেলের বড়কর্তারা যারপরনাই বিব্রত। এত প্রহরা, এত নজরদারি সত্ত্বেও কী করে বারবার ট্রেনে এমন ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জরুরি বৈঠক ডেকেছে রেলবোর্ড। গত বৃহস্পতিবার রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু কলকাতায় রেলের কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে যাত্রী সুরক্ষার বিষয়ে কী কী করা হয়েছে বা করা হছে তার ফিরিস্তিও দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও চলন্ত ট্রেনে মহিলা যাত্রীদের উপরে অপরাধ যে ঘটেই চলেছে, শুক্রবারের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এমন ঘটনা আটকাতে রেলের বিশেষ নজরদারি চালানোর দরকার। তবে রেলকর্তারা ঠারেঠোরে মানছেন, রাজধানী, দুরন্ত বা শতাব্দীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনে যাত্রীদের কেউ কেউ লুকিয়ে নেশা করছেন। নেশার সামগ্রী তাঁরা এমন ভাবে বোতলে মিশিয়ে নিয়ে আসছেন যে, নিরাপত্তাকর্মীদের তা চোখে পড়ছে না। পরে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কেউ কেউ মহিলা যাত্রীদের সঙ্গে অভব্যতা করছেন বলে রেলকর্তাদের দাবি। অমৃতসর এক্সপ্রেসের ধর্ষণ কাণ্ডেও ধৃত তিন জওয়ান চলন্ত ট্রেনে বসে নেশা করছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। জোর করে ঠান্ডা পানীয়ে মদ মিশিয়ে তারা ওই নাবালিকাকে খাইয়েছিল বলে অভিযোগ। শুক্রবার রাতের রাজধানীতেও অভিযুক্ত জওয়ান মদ্যপ ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেল পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy