Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নানুরের বিক্ষুব্ধদের হুঁশিয়ারি মনিরুলের

ভোটের চাপে প্রার্থী নিজে-ই দু’দিন আগে ‘যুদ্ধ-বিরতি’ ঘোষণা করে সমঝোতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই ‘সমঝোতা’ হওয়া যে অত সহজ নয়, আবার তা বুঝিয়ে দিলেন সেই প্রার্থীরই গোষ্ঠীর আর এক নেতা!

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর ও নানুর শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:০০
Share: Save:

ভোটের চাপে প্রার্থী নিজে-ই দু’দিন আগে ‘যুদ্ধ-বিরতি’ ঘোষণা করে সমঝোতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই ‘সমঝোতা’ হওয়া যে অত সহজ নয়, আবার তা বুঝিয়ে দিলেন সেই প্রার্থীরই গোষ্ঠীর আর এক নেতা!

নানুর বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী গদাধর হাজরাকে ঘিরে ক্রমেই জটিল হয়ে উঠেছে শাসকদলের ভোট-সমীকরণ। রবিবার সকালে বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কঙ্কালীতলায় ছিল তৃণমূলের বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলন। সেখানেই নানুরের দাপুটে তৃণমূল নেতা কাজল শেখ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরও এক বার তোপ দাগলেন লাভপুর কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী মনিরুল ইসলাম। এমনকী, নাম না করে কাজলকে কার্যত ‘গাধা’ বলেও ডাকলেন। মনিরুল কাজল-গোষ্ঠীকে সতর্ক করে বলেন, “এখানে অনেক গাধা আছেন, যারা ভাবছেন এই নানুরের বুকে তোলাবাজি-ডাকাতি-রাহাজানি করে কোটি কোটি টাকা কামাবেন। তারা ভাবছেন আমাদের পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদে হারিয়েছেন, এ বার অনুব্রত মণ্ডলের প্রার্থী গদাধর হাজরাকেও হারাবেন। তাদের গাধার ভবিষ্যৎ হবে।’’ এখানেই থামেননি মনিরুল। তাঁর সংযোজন, ‘‘বীরভূমের বুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থীকে হারানো যায় না। অনুব্রত মণ্ডলের মনোনীত প্রার্থীকে হারানো যাবে না। কেউ স্বপ্ন দেখে থাকলে, মূর্খের রাজত্বে আছেন!”

ঘটনা হল, নানুরের দাপুটে তৃণমূল নেতা কাজল শেখ গোষ্ঠীর সঙ্গে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রতর মণ্ডলের কাছের লোক গদাধরের গোষ্ঠীর বিবাদ দীর্ঘ দিনের। তা গড়িয়েছে কয়েক জোড়া খুন-পাল্টা খুন অবধিও। তৃণমূল সূত্রের খবর, নাম ঘোষণার আগে গদাধরের প্রার্থীপদের বিরোধিতায় শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে একাধিক বার আর্জি জানিয়েছে কাজল গোষ্ঠী। হাজারো বিরোধিতা সত্ত্বেও শীর্ষ নেতৃত্ব সেই গদাধরকে আরও এক বার প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা নিয়ে প্রথম থেকেই ক্ষোভ ছিল নানুরের দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একাংশের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে গদাধর গোষ্ঠীর অনেকেই ভোটে ‘অন্তর্ঘাতে’র আশঙ্কা করতে শুরু করেছেন। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন গত পঞ্চায়েত ভোটের কথা। যখন গোটা এলাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা তৃণমূল হেরে গিয়েছিল জেলা পরিষদের আসনেই। ওই ভোটে হারার নেপথ্যে অনুব্রত গোষ্ঠীর অনেকেই কাজল গোষ্ঠীর ‘হাত’ দেখে থাকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সে দিনের হারের ওই পুরনো ‘জুজু’ই চাপে রেখেছে দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে। সেই চাপ থেকেই কাজলদের বিরুদ্ধে এ ভাবে মুখ খুলছেন মনিরুলরা।

তৃণমূল সূত্রের খবর, রাজ্যের অন্যত্র ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দিলেও এই পরিস্থিতিতে সাবধানে পা ফেলতে চাইছে কাজল গোষ্ঠী। গদাধর, অনুব্রত, মনিরুলরা অতীতে বারবার কাজলকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে খুনি-ডাকাত-তোলাবাজ বলেছেন। এমনকী, নাম না করে কাজলকে ‘ক্রিমিনাল’ বলে দাবি করতে দেখা গিয়েছে দলের জেলা পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিমকেও। সেই কাজলকে যদিও তেমন ভাবে প্রকাশ্যে দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলতে শোনা যায়নি। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ অনুগামীর দাবি, ‘‘দাদা বাম আমল থেকে দিদির দলের সঙ্গে যুক্ত। তার জন্য নিজের দাদা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই হারিয়েছেন। মনিরুলের মতো বাম দল থেকে রং পাল্টে আসা কে কী বলল, তাতে দাদার কিছু যায় আসে না।’’ তাঁর বক্তব্য, এমন এক নেতার ‘আবেদন’ গুরুত্ব না পেলে দলের অনুগামীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। সেই ক্ষোভ থেকে কেউ ‘কিছু’ করে বসলে তার দায় শীর্ষ নেতৃত্বকেই নিতে হবে বলে ওই কাজল অনুগামীর দাবি। ক্ষুব্ধ অনুগামীরা ঠিক কী করবেন, তা অবশ্য তিনি আর খোলসা করে বলতে চাননি। আর এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে গদাধর গোষ্ঠী। নানুর এলাকায় গদাধরের এক ঘনিষ্ঠ অনুগামীর স্বীকারোক্তি, ‘‘ছবিটা অল্প পাল্টালেও নানুরে কাজলের এখনও দাপট কমেনি। কাজলের লোকেদের সমর্থন কোথায় যাচ্ছে, তার উপর অনেকটাই নির্ভর করছে দাদার জেতা-হারা।’’

এই পরিস্থিতি দলেরই একটি সূত্রের খবর, নিজের নিজের স্বার্থে ‘সমঝোতা’র দিকে এগোচ্ছে দু’পক্ষই। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই দুই গোষ্ঠীর নেতাদের নিয়ে বসার কথা ফিরহাদের। সেই ইঙ্গিত মিলেছে দুই নেতার বক্তব্যেও। গদাধরের যেমন জানিয়েছেন, দলের স্বার্থে তিনি যে কাউকে নিয়েই চলতে পারবেন। দল যা নির্দেশ দেবে, তা-ই করবেন। অন্য দিকে, সাবধানী কাজলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি দলের সৈনিক। দলের ক্ষতি হয়, এমন কোনও কাজ করি না।’’

তাতেও অবশ্য আশঙ্কা যাচ্ছে না তৃণমূলের নেতাদের। লোকসভা ভোটের মুখেও দুই নেতাকে মুখোমুখি বসিয়ে ‘সমঝোতা’ হয়েছিল। তার কয়েক মাসের মধ্যেই ‘আক্রান্ত’ হন কাজল। পাল্টা লাশ পড়ে গদাধরের তিন অনুগামী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

MonirulIslam Nanur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE