Advertisement
E-Paper

বরাদ্দ অপ্রতুল, মিড-ডে মিলে ভর্তুকির দাবি

বাজারে একটি ডিমেরই ন্যূনতম দাম পাঁচ টাকা। আর প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিল খাতে পড়ুয়া-পিছু বরাদ্দ মাত্র ৪.১৩ টাকা! অর্থাৎ দুপুরের খাবার বাবদ যে-টাকা দেওয়া হয়, তাতে একটা ডিমও কেনা যায় না।

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০০:৩৫

বাজারে একটি ডিমেরই ন্যূনতম দাম পাঁচ টাকা। আর প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিল খাতে পড়ুয়া-পিছু বরাদ্দ মাত্র ৪.১৩ টাকা! অর্থাৎ দুপুরের খাবার বাবদ যে-টাকা দেওয়া হয়, তাতে একটা ডিমও কেনা যায় না।

এই দুর্মূল্যের বাজারে যৎসামান্য বরাদ্দে বাচ্চাদের মুখে ডিমের সঙ্গে ভাত, ডাল, তরকারি তুলে দিতে কার্যত কালঘাম ছুটছে স্কুলের। তাই রাজ্য সরকারের কাছে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের দুপুরের খাবারের জন্য এক সুরে ভর্তুকির দাবি তুলল শাসক এবং বিরোধী শিক্ষক সংগঠন।

বিকাশ ভবনের খবর, ২০০১ সালে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের জন্য মিড-ডে মিল প্রকল্প শুরু হয়। সারা দেশে তা চালু হয় ২০০৪-এ। কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ অর্থের ৬০ শতাংশ দেয়। রাজ্য দেয় ৪০ শতাংশ। পড়ুয়া-পিছু বরাদ্দ কত হবে, ঠিক করে কেন্দ্র। ২০০৪ থেকে ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষ পর্যন্ত প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকার মিড-ডে মিল খাতে সাত শতাংশ হারে বরাদ্দ বাড়িয়েছে। ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরে সামান্য বরাদ্দ বৃদ্ধির পরে আর তা বাড়েনি। কেন বাড়ল না, ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরের বাজেটে সেই বিষয়ে টুঁ শব্দটি করেননি অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে ছ’দিনই মিড-ডে মিল দেওয়ার কথা। এবং সপ্তাহে অন্তত দু’দিন পাতে ডিম দিতেই হবে। ‘ভেজ প্রোটিন’ বা উদ্ভিজ্জ প্রোটিন দিতে হবে রোজ। সঙ্গে ভাত-ডাল-তরকারি। সেই সঙ্গে রয়েছে রান্নার গ্যাসের খরচও। এত কিছুর জন্য প্রাথমিকে পড়ুয়া-পিছু বরাদ্দ মোটে ৪.১৩ টাকা! উচ্চ প্রাথমিকে ৬.১৮ টাকা। শিক্ষকদের দাবি, এখনই উচ্চ প্রাথমিকে না-হলেও প্রাথমিকে মিল-পিছু অন্তত এক টাকা ভর্তুকি দিক রাজ্য সরকার। কন্যাশ্রী, সবুজ সাথীর মতো প্রকল্পে তো ঢালাও খরচ হচ্ছে। ভর্তুকি হিসেবে তার সামান্য অংশ মিড-ডে মিলে দিলে বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে সুবিধা হবে বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা।

পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার অন্তত এক টাকা ভর্তুকি দিলে কিছুটা সুরাহা হবে।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলও মনে করেন, সরকারের ভর্তুকি দেওয়া উচিত। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত সংবেদনশীল। অন্য বিষয়ের মতো বাচ্চাদের খাবারের ক্ষেত্রেও তিনি সদর্থক ভূমিকা নেবেন বলেই আমার বিশ্বাস।’’ নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সমর চক্রবর্তীর সুর কিঞ্চিৎ চড়া তিনি বলেন, ‘‘এত কম বরাদ্দ অমানবিক। এত সামান্য অর্থে শিশুদের প্রকৃত পুষ্টি হচ্ছে না। পড়ুয়া-পিছু বরাদ্দ কমপক্ষে ১০ টাকা করতে হবে।’’

বিকাশ ভবনের এক কর্তা জানান, প্রতিদিন প্রাথমিকে ৩০ লক্ষ পড়ুয়া মিড-ডে মিল খায়। এক টাকা করেও ভর্তুকি দেওয়া হলে প্রতিদিন বাড়তি খরচ হবে ৩০ লক্ষ টাকা। মাসে গড়ে ২০ দিন খাবার দেওয়া হলে ছ’‌কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। তাঁর মতে, ‘‘পুরোটাই সরকারের উপরে নির্ভর করছে।’’

মিড-ডে মিলকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বারবার। তা আটকাতে বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপও করেছে সরকার। ভর্তুকি দিলে দুর্নীতিও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ‘‘যে-টাকা দেওয়া হচ্ছে, আগে তার পুরোটা বাচ্চাদের দেওয়া নিশ্চিত করা হোক। সরকার আর কত ভর্তুকি দেবে,’’ বলছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Midday Meal Subsidy Primary Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy