রাজ্যের বিভিন্ন নিম্ন আদালতে বর্তমানে ৩৬ লক্ষেরও বেশি মামলা বকেয়া। ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিড (এনজেডিসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, এই বকেয়া মামলার অধিকাংশই ফৌজদারি মামলা। তা ছাড়া, রয়েছে দেওয়ানি মামলা। বকেয়া ফৌজদারি মামলার বড় অংশ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিচারাধীন মামলা। অর্থাৎ, যে মামলাগুলির সাজার মেয়াদ সাত বছরের কম। দশ বছরের বেশি সময় ধরে বকেয়া এমন মামলার ৮৭ শতাংশই ফৌজদারি। এই পরিস্থিতিতে অনেকেরই প্রশ্ন, দীর্ঘদিন ধরে মামলা বকেয়া থাকার ফলে কি ন্যায্য বিচার থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন না?
এনজেডিসি-র তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গের জেলা এবং মহকুমা স্তরের কোর্টগুলিতে (যেগুলি আইনি পরিভাষায়, নিম্ন আদালত বলা হয়) মোট বকেয়া মামলা ৩৬ লক্ষ ৮৯ হাজার ৪৪৮টি। তার মধ্যে ৬ লক্ষ ৩৬ হাজার ১৭০টি দেওয়ানি মামলা। ফৌজদারি বকেয়া মামলার সংখ্যা ৩০ লক্ষ ৫৩ লক্ষ ২৭৮টি। এর মধ্যে ১২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪০৬টি মামলা কলকাতার নগর আদালতে বকেয়া। কলকাতার মোট বকেয়া মামলা ১২ লক্ষ ৮৬ হাজার ৩৪৯টি। বকেয়া মামলার নিরিখে কলকাতার পরেই আছে দুই ২৪ পরগনা। সেখানেও বকেয়া মামলার নিরিখে অধিকাংশই ফৌজদারি মামলা।
সব থেকে কম মামলা বকেয়া কালিম্পঙে (১৩৩২টি)। যদিও অনেকেই বলছেন, ছোট পাহাড়ি জেলা এবং কম লোকসংখ্যা হওয়ায় হিসেবে কালিম্পঙে খুব কম মামলা দায়ের হয়। দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় ছোট মাপের জেলা ঝাড়গ্রামেও প্রায় ১৪ হাজার মামলা বকেয়া। রাজ্যে মোট বকেয়া মামলার ৭ শতাংশ মহিলাদের দায়ের করা বলেও এনজেডিসি-র তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, বিচার ব্যবস্থার পদ্ধতির মধ্যেই দীর্ঘসূত্রিতার মূল কারণ নিহিত। এ ছাড়াও, সাক্ষীদের হাজিরা, ছুটিছাটা ইত্যাদির জন্যেও মামলা জমছে। আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্তের মতে, ‘‘নিম্ন আদালতগুলিতে প্রয়োজনের তুলনায় কম বিচারক আছেন। তার ফলে এক-একজন বিচারককে অনেক বেশি মামলা শুনতে হচ্ছে। তার ফলে মামলার নিষ্পত্তিতে সময় বেশি লাগছে।’’ অনেকে এ-ও বলছেন, মামলার শুনানিতে নিম্ন আদালতের আইনজীবীদের অনেকেই নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। তার ফলে মামলার শুনানি পিছিয়ে যায়। এই বক্তব্যের সমর্থন এনজেডিসি-র তথ্যেও পাওয়া যায়। ওই তথ্য অনুযায়ী, আইনজীবীরা হাজির না-থাকায় প্রায় ৬ লক্ষ মামলা বকেয়া। এই মামলারও অধিকাংশই ফৌজদারি। এর পাশাপাশি প্রায় ৩ লক্ষ মামলায় অভিযুক্ত ফেরার থাকার ফলে মামলা বকেয়া আছে। ৬৭১টি মামলায় হাই কোর্ট এবং ৩টি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় বিচার বকেয়া আছে বলেও এনজেডিসি উল্লেখ করেছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)