বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে, প্রবল লড়াই করে জয় এসেছিল যৎকিঞ্চিৎ! কিন্তু কোথাও দেড়, কোথাও দু’বছর পেরিয়ে সেই সব জায়গায় পরিষেবা দিতে পদে পদে ঠোক্কর খাচ্ছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। হতাশায় অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এত কাণ্ড করে জিতে আর লাভ কী হল? এমনই ছবি উঠে আসছে সিপিএমের জেলা সম্মেলন-পর্বে।
কোচবিহার ও উত্তর ২৪ পরগনা বাদে রাজ্য জুড়ে সিপিএমের জেলা সম্মেলনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। সিপিএম সূত্রের খবর, জেলা সম্মেলনের এই পর্বে আলোচনায় আসছে পঞ্চায়েত ও পুরসভায় স্থানীয় স্তরের জনপ্রতিনিধিদের কাজ এবং ভূমিকা। সেখানেই উঠে আসছে, অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি স্থানীয় স্তরে তেমন কোনও কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারছেন না। কারণ, সরকারি স্তরে তাঁদের কার্যত কোনও ‘স্বীকৃতি’ই মিলছে না। বিডিও বা স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তারা বিরোধী দল সিপিএমের জনপ্রতিনিধিদের কথায় আমল দিতে চান না বলে অভিযোগ। এ সবের জেরে জনমানসে জনপ্রতিনিধিদের প্রভাব কাজ করছে না বলেই সম্মেলনে রিপোর্ট আসছে।
সিপিএমের প্রায় তিন হাজার প্রতিনিধি রয়েছেন রাজ্য জুড়ে। রয়েছেন আরও কিছু পুর-প্রতিনিধি। পুরসভার মধ্যে নদিয়া জেলার তাহেরপুর একমাত্র রয়েছে সিপিএমের হাতে। সরকারি ব্যবস্থার কারণে এঁদের মধ্যে পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদেরই সাধারণ মানুষের দরকার পড়ে বেশি। এবং সেখানেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। দক্ষিণবঙ্গে সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘আমাদের দলের নির্বাচিত প্রতিনিধির করে দেওয়া চিঠি নিয়ে গেলে পরিষেবা বা কাজ মিলছে না। মানুষ ফিরে এসে সেই অভিযোগ জানিয়ে যাচ্ছেন। এই ভাবে চলতে থাকায় মানুষের মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে আর এই দলকে ভোট দিয়ে কী হল! লড়াই করে জিতেও কার্যত বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েতই চলছে মনে হচ্ছে।’’ উত্তরবঙ্গেরও এক নেতার কথায়, ‘‘খুব পরিকল্পনামাফিক বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের অকেজো করে দেওয়া হচ্ছে। শাসক দলে যোগ দিয়ে দিলে ঠিক আছে। যাঁরা সেই চাপ অগ্রাহ্য করে কাজ করতে চান, তাঁরা এলাকার বাসিন্দাদের জন্য কিছু প্রায় করতেই পারছেন না। এতে নিচু তলায় দলের অবস্থান আরও নড়বড়ে হচ্ছে।’’
মোট তিন হাজার নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধির মধ্যে হাজারদুয়েকের ক্ষেত্রেই এমন সমস্যা আছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। পুর-প্রতিনিধিদের সঙ্কটও প্রায় একই রকম। তাহেরপুরে পুর-বোর্ড থাকলেও প্রশাসনিক সহায়তা তেমন নেই। তবে শিলিগুড়ি পুর-নিগম পরিচালনার সময়ে বাম বোর্ডের মেয়র অশোক ভট্টাচার্য যে ভাবে রাজ্য সরকারের ‘অসহযোগিতা’র বিরুদ্ধে সরব হতেন, এখন সিপিএমের জনপ্রতিনিধি বা পুর-বোর্ডের তেমন প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে না। এই তৎপরতার অভাব ঘিরে উদ্বেগও ধরা পড়ছে জেলা সম্মেলনে।
স্থানীয় স্তরের প্রশাসনে বিরোধী দলের এই সঙ্কট নিয়ে সিপিএম কি কোনও প্রতিবাদ-আন্দোলনের কথা ভাববে? দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘জেলায় জেলায় পরিস্থিতি নিয়ে নানা কথা হয়েছে। রাজ্য সম্মেলনে সামগ্রিক চিত্র আলোচনায় আসবে। কোনও আন্দোলন বা কর্মসূচির প্রস্তাব সেখানে হতে পারে। তবে এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, এই ক্ষেত্রে অবস্থা সত্যিই করুণ!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)