কদর শেখের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত সামগ্রী নিয়ে ফিরছেন তদন্তকারীরা। শনিবার সোমনাথ মুস্তাফির তোলা ছবি।
খাগড়াগড়-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত কওসরের শ্যালক, কদর গাজির বীরভূমের নিমড়ার বাড়িতে তল্লাশি চালাল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এসআইবি (সাবসিডিয়ারি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো)। কদরের মা সরিফা বিবিকে তারা জেরাও করে। আরবি ভাষায় লেখা কিছু পোড়া নথি-সহ একটি ব্যাগ বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারীরা।
ঘটনাচক্রে, নিমড়ার কাছেই মিরিটি গ্রামে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পৈতৃক বাড়ি। শনিবার সেই বাড়ির সামনেও কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায় অফিসারদের। এসআইবি-র আর একটি দল নদিয়ার থানারপাড়া থানায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে। শুক্রবার এই থানারপাড়ারই একটি বাড়ি থেকে জিলেটিন স্টিক পাওয়া গিয়েছিল। কীর্ণাহারে যাওয়া এসআইবি অফিসারদের এক জন, ভূষণ সিংহ বলেন, “কদর গাজির মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা এমন কিছু তথ্য পেয়েছি, যাতে বিস্ফোরণ-কাণ্ডের সঙ্গে পরিবারটির প্রত্যক্ষ যোগাযোগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে ধৃত রাজিয়া বিবি ও আলিমা বিবিকে জেরা করে রাজ্য গোয়েন্দারা নিমড়ায় কওসরের শ্বশুরবাড়ির কথা জানতে পেরেছিলেন। এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ এসআইবি-র চার সদস্যের একটি দল কীর্ণাহার-লাগোয়া নিমড়ার মাঠপাড়ার বাড়িতে যায়। আগের দিন বাড়ি তালাবন্ধ থাকলেও এ দিন কদরের বৃদ্ধা মা বাড়িতে ছিলেন। অফিসারেরা প্রথমে বাড়ির চার পাশ ঘুরে দেখেন। পরে ভিতরে ঢুকে বাক্স-বিছানা উল্টে তল্লাশি চালান। এর মধ্যেই নানুর থানা থেকে পুলিশও চলে আসে। একটি ঘর থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগে কিছু পোড়া নথি মেলে। আরবি ভাষায় ছাপা কিছু কাগজ, একটি ডায়েরি এবং কেব্ল লাইনের তার বাজেয়াপ্ত করে এসআইবি।
তদন্তকারীদের সরিফা বিবি বলেন, “আমার দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে গ্রামে। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে মুর্শিদাবাদের বৈদ্যনাথপুরে। দিন তিনেক সেখানেই ছিলাম। সেই জন্য ঘর বন্ধ ছিল। গত কাল ফিরেছি।” এসআইবি-র তরফে রাজু মুখোপাধ্যায় বলেন, “জেরায় আমরা ওঁর ছয় মেয়ের নাম জানতে পেরেছি আদরী বিবি, মানেকা বিবি, রেজিনা বিবি, রুমকি, ঝুমকি এবং রুম্পা। শেষ তিন জন বর্ধমানের মঙ্গলকোটে পড়তে গিয়েছিল। শেষ তিন জনের এক জন কওসরের স্ত্রী জিন্নাতুর হতে পারে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
সরিফা বিবি অবশ্য দাবি করেন, “তিন মেয়েই মঙ্গলকোটে থাকত ঠিকই। কিন্তু সেখানে কাদের সঙ্গে ওদের বিয়ে হয়েছে, তা আমি জানি না। ওদের স্বামীদেরও কখনও চোখে দেখিনি।” তাঁর মতে, “কদর কোনও খারাপ কাজ করতেই পারে না। ও বিভিন্ন সময় কাজের খোঁজে বাইরে যেত। দিন পাঁচেক আগে সেই রকমই বাইরে গিয়েছে।” কদরের বড় দিদি আদরীর দাবি, “আমরা বর্ধমানের ঘটনা সর্ম্পকে কিছুই জানি না।”
ওই বাড়ি থেকেই পুলিশ থানায় ফিরে যায়। এসআইবি অফিসারেরা যান কাছেই মিরিটি গ্রামে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে। সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেন কিছু ক্ষণ। পরে কীর্ণাহার কাজি মার্কেটে গিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী সুকুর শেখের খোঁজ করে তাঁর বাড়িতে যান। কয়েক দিন আগে সুকুরকে আটক করেও ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। সুকুর বাড়িতে ছিলেন না, এলাকার একটি হোটেলে খেতে গিয়েছিলেন। তাঁর বাড়ির নীচে ভাড়া থাকা এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রি তাঁকে ডেকে আনেন।
সুকুরকে জেরা করে তাঁর ছেলে আমজাদ ওরফে কাজল শেখের সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করেন অফিসারেরা। পরে সুকুর বলেন, “পুলিশকে বলেছিলাম, ওঁদেরও তাই বললাম। ছেলের মুখে শুনেছি, সে কলকাতায় একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করে। ঈদে বাড়ি এসেছিল। গত তিন দিন ধরে ওর মোবাইল বন্ধ। তবে আমার ধারণা, ও কোনও খারাপ কাজে জড়িত থাকতে পারে না।”
এনআইএ দায়িত্ব নেওয়ার পরেও এসআইবি খোঁজখবর করছে কেন?
ভূষণ সিংহ বলেন, “জেলায় কোথায় কী হচ্ছে, সেই তথ্য আমাদের সংগ্রহ করতেই হয়। এনআইএ এসে আমাদের জিজ্ঞাসাও করতে পারে। বাজেয়াপ্ত সামগ্রী ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হবে। তার রিপোর্টও এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy