Advertisement
E-Paper

ফের মেয়ে হওয়ায় জঙ্গলে ফেললেন মা, বরাত জোরে বাঁচল সাত মাসের শিশু

সঙ্গে ছিলেন ওই বধূর নিজের মা! শ্বশুরবাড়ি ফিরে স্বামী-সহ সকলকে জানিয়ে দিয়েছিলেন মেয়ে মরে গিয়েছে। শ্বশুরবাড়িও খোঁজখবর করার প্রয়োজন মনে করেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৭ ০৩:০৭

বংশে বাতি দেবে কে, ছেলে ছাড়া আবার কে!

এমন ভাবনা এসেছিল মায়েরই মনে! তাই এ বছর জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার মেয়ে হওয়ার পর থেকেই মন খারাপ মায়ের। তার উপরে ডাক্তারবাবুরা বলে দিয়েছেন, সদ্যোজাতের পায়ের টিউমার খারাপ দিকে গড়াতে পারে। আর সময় নষ্ট করেননি জন্মদাত্রী। ১০ জুলাই বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বন্ড দিয়ে শিশুকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে গিয়েছিলেন। পরে সুযোগ বুঝে রাতের অন্ধকারে ফেলে এসেছিলেন জঙ্গলে। সঙ্গে ছিলেন ওই বধূর নিজের মা! শ্বশুরবাড়ি ফিরে স্বামী-সহ সকলকে জানিয়ে দিয়েছিলেন মেয়ে মরে গিয়েছে। শ্বশুরবাড়িও খোঁজখবর করার প্রয়োজন মনে করেনি।

কিন্তু, বরাত জোরে বেঁচে গেল সাত মাসের মৌমিতা। ১২ তারিখ ভোরে ওন্দার আমড়াতলা শাল জঙ্গলে ফল, কাঠ সংগ্রহে গিয়ে কান্না শুনে কাঁথায় শোয়া ছোট্ট মেয়েটিকে উদ্ধার করেন কিছু আদিবাসী মহিলা। শরীরে জন্তুজানোয়ারের আঁচড়ের দাগ ছিল বটে, কিন্তু সে মরেনি। ফের তার ঠাঁই হল বাঁকুড়া মেডিক্যালে। চিকিৎসক ও জেলার প্রশাসনের চেষ্টায় পাওয়া গেল তার বাবা-মাকে। চাইল্ডলাইন মারফত ডেকে পাঠানো হল তাঁদের। মেয়েটির বাবা, দুর্গাপুরের বাসিন্দা ও পেশায় দুধের ব্যবসায়ী। তাঁর স্ত্রী বলছেন, ‘‘ছেলে চেয়েছিলাম। আবার মেয়ে হল। তার উপরে অসুস্থ। সহ্য হচ্ছিল না। তাই ফেলে এসেছিলাম।’’

আরও পড়ুন:দত্তকের হাজিরায় ক্ষতি শিশুমনেরই

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান এবং অর্থোপেডিক্সের বিভাগীয় প্রধান রণদেব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মা মানসিক ভাবে শিশুটিকে মেনে নিতে পারছেন না। শয্যার পাশে বসে রয়েছেন, অথচ মেয়েকে দুধও খাওয়াচ্ছেন না। সব করছেন নার্স ও চিকিৎসকেরা। ওই বধূর মানসিক কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। সোমবার ওই বধূর দাবি, ‘‘আমার জায়েরও দু’টো মেয়ে। আমারও চার বছরের মেয়ে আছে। ভেবেছিলাম, বংশে বাতি দেওয়ার লোক আসবে। ছেলের মা হলে সংসারে আলাদা খাতির হবে। এখন বুঝতে পারছি, ভুল করেছিলাম। সবাই বকাবকি করছে। আসলে মাথার ঠিক ছিল না।’’

কন্যাশ্রী, বেটি বাঁচাও-এর মতো রাজ্য ও কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্প, অনেক প্রচার সত্ত্বেও সমাজের একটা অংশে এখনও পুত্রমোহের ভূত গেড়ে বসে আছে দেখে হতাশ সমাজতাত্ত্বিক এবং সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অনেকেই। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলছেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে মাতৃত্বের থেকে বড় হয়ে উঠেছিল মাতৃত্বের মাধ্যমে নিজের প্রাধান্য, গুরুত্ব ও প্রতিপত্তি স্থাপন করা। যা তিনি ছেলের মা হয়ে করতে চেয়েছিলেন। বাকি সব তাঁর কাছে গৌণ ছিল।’’

তাকে নিয়ে এই টানাপড়েন বোঝার বয়স হয়নি মৌমিতার। হাসপাতালের শয্যায় আপনমনে খেলছিল সে। ডান পায়ে টিউমার। ওই অংশের টিস্যু বায়োপসি করতে পাঠানো হয়েছে। বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “শিশুটির স্বাস্থ্যের উন্নতি ব্যাপারেই এখন আমরা বেশি চিন্তিত। পরবর্তী পদক্ষেপ কী করা হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’’

Girl Child Inborn Mother Save Girl child বেটি বাঁচাও কন্যাশ্রী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy