Advertisement
E-Paper

সন্তানের হাতেই মায়েরা শিখছেন অ-আ, ক-খ

ঝাড়গ্রামের ওই প্রান্তিক স্কুলের মতোই ছেলেমেয়ের কাছেই অক্ষর চিনে ‘বড়’ হচ্ছেন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার নওপুকুরের অভিভাবকেরাও। ঝাড়গ্রামের বাঁশতলা জুনিয়র হাইস্কুলের বারান্দায় প্রতি শনিবার দুপুরে বসে এই ‘বিন্দুর পাঠশালা’।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ০৩:৩৮
পড়াশোনা: বিন্দু পাঠশালায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

পড়াশোনা: বিন্দু পাঠশালায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কচি বয়সে নাতনিকে স্কুল ছাড়িয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিয়েছিলেন বিমলা মান্না। বিমলা এখন সত্তর। এই বয়সে পড়াশোনার স্বাদ পেয়ে নিজের ভুল বুঝেছেন তিনি। বলছেন, ‘‘ওই কাঁচা বয়সে নাতনিটার বিয়ে দিয়ে ঠিক করিনি। এখন নিরক্ষর স্বামীকেও বলি, পড়াশোনা করো।’’

পড়াশোনার জোর টের পেয়েছেন বিধবা সন্ধ্যাও। টিপছাপ নয়, নিজে সই করে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলেন তিনি। হেঁসেল সামলে নিয়ম করে স্লেট-চক নিয়ে বসছেন উমারানি মাঝি, সন্ধ্যা মাঝি, সাবিত্রী মাঝি, বিমলা মান্নারা। কাঁপা কাঁপা হাতে শিখছেন অ-আ, ক-খ। শিক্ষক ওঁদেরই স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি।

ঝাড়গ্রামের ওই প্রান্তিক স্কুলের মতোই ছেলেমেয়ের কাছেই অক্ষর চিনে ‘বড়’ হচ্ছেন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার নওপুকুরের অভিভাবকেরাও। ঝাড়গ্রামের বাঁশতলা জুনিয়র হাইস্কুলের বারান্দায় প্রতি শনিবার দুপুরে বসে এই ‘বিন্দুর পাঠশালা’। গ্রামের ৩০ জন বয়স্ক মহিলাকে সাক্ষরতার পাঠ দেওয়ার এই আয়োজনের উদ্যোক্তা স্কুলেরই সহশিক্ষক রাজীব দাস। কিন্তু বিন্দুর পাঠশালা কেন? রাজীব জবাব দেন, ‘‘বিন্দু অর্থাৎ সীমিত সাধ্যের মধ্যেই গ্রামের সব নিরক্ষর মহিলাকে লিখতে-পড়তে শেখানো। চাই মা-কাকিমাদের জীবনের উত্তরণ। তাই এই নাম।’’

আরও পড়ুন:বাড়তি সুবিধা, জিত রাজ্যের

বিন্দু থেকে সিন্ধুতে উত্তরণে জটিল তত্ত্বটা উমারানিদেবীরা বোঝেন না। শুধু বোঝেন, জীবনে লেখাপড়া জানা খুব জরুরি। ষাট পেরনো সাবিত্রীদেবী স্লেটে স্বরবর্ণ লিখছিলেন নাতি রাজের কাছে। রাজ অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সাবিত্রীদেবী বলেন, “পুতুল খেলার বয়সে বিয়ে হয়েছিল। স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এখন সপ্তাহে একদিন স্কুলে পড়তে আসি। আর রোজ সন্ধ্যায় বাড়িতে নাতির কাছে পড়ি।”

একসময়ের মাওবাদী ঘাঁটি এই বাঁশতলায় গুলি ছুড়ে ভুবনেশ্বর-দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস থামানো হয়েছিল। সেই অশান্তিপর্বের পরে গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুলে শিক্ষক হয়ে আসেন রাজীব। তাঁর বাড়ি নদিয়ার চাকদহে। বাঁশতলাকে ভালবেসে সেখান থেকেই শুরু হয় গ্রামের ভোলবদলের চেষ্টা। রাজীব জানালেন, আগে গ্রামের বহু ছেলেমেয়ে স্কুলে যেত না। প্রাথমিকের গণ্ডি শেষ হতে না হতেই মেয়েদের ছাদনাতলায় যেতে হত। কিশোর বয়সে অনেকে ডুবত নেশায়।

ছবিটা বদলেছে। এখন পড়ুয়ারা মাদক ও বাল্যবিবাহ রোধে পথনাটিকা করে, শৌচাগারের গুরুত্ব বোঝায়। গ্রামের মহিলাদের নিয়ে দশটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীও গড়ে উঠেছে। আর রয়েছে বিন্দুর পাঠশালা। রাজীবের স্বপ্ন, “বিন্দু বিন্দু করেই একদিন জ্ঞানের সিন্ধু ভরবে।”

Education Literacy Mission Mother Son
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy