ঠিক এক বছর আগে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল রাজ্যবাসীকে। প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল দেশ-বিদেশের রাজপথে। সেই ঘটনার বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে লাদাখের এক অনামী, প্রায় ছ’হাজারি শৃঙ্গে প্রথম আরোহণ করে সেটির নাম ‘অভয়া’ রাখলেন পর্বতারোহী দেবাশিস বিশ্বাস।
শৃঙ্গাভিযানের পাশাপাশি গবেষণার লক্ষ্যে গত ২৬ জুলাই লাদাখের রূপসু উপত্যকার দিকে রওনা দেন দেবাশিস ও তাঁর সঙ্গীরা। লক্ষ্য, সোমো রিরি হ্রদ সংলগ্ন কোরজোক গ্রামে বেস ক্যাম্প বানিয়ে সেখান থেকে আশপাশের একাধিক শৃঙ্গে অভিযান চালানো। তারই অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা নাগাদ স্থানীয় এক অনামী শৃঙ্গের চূড়ায় পৌঁছন দেবাশিস ও তাঁর শেরপা গাইড। এ দিন দেবাশিস বলেন, ‘‘গত বছর আর জি করের ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন আজ়ারবাইজ়ানে পর্বতাভিযান করতে গিয়েছিলাম। সেখানে বসেই ওই ঘটনা আমায় নাড়িয়ে দিয়েছিল। তার পরবর্তী ঘটনাক্রম আমাকেও উদ্বিগ্ন করেছিল। পরে কিছু পরিচিত ডাক্তারেরা অনুরোধ করেন, কোনও অনামী শৃঙ্গে অভিযান চালিয়ে যদি নির্যাতিতার নামে সেটির নাম রাখি।’’
যদিও খাতায়কলমে এই নাম রাখার প্রক্রিয়া অনেকটাই সময়সাপেক্ষ। কারণ, প্রথমে তা ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশন (আইএমএফ)-কে চিঠি লিখে জানাতে হবে। এর পরে সেটি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য যাবে। তবে আপাতত অত ভাবছেন না দেবাশিস। বলছেন, ‘‘বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে এবং বাঙালির আবেগকে মর্যাদা দিয়ে নির্যাতিতার স্মরণে এই নামকরণ।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, কোরজোক গ্রাম থেকে সামনেই দৃশ্যমান ‘অভয়া’ শৃঙ্গ। ফলে লাদাখের পর্যটক অধ্যুষিত এই এলাকায় এলে খুব সহজেই ‘অভয়া’ শৃঙ্গের দেখা মিলবে।
এই শৃঙ্গটি স্থানীয় ভাবে ‘সেরাসুয়া’ নামে পরিচিত। দেবাশিস জানান, এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ অনেকে মিলে যাত্রা শুরু করে দুপুরে শীর্ষে পৌঁছন তিনি। বলেন, ‘‘এই শৃঙ্গের শীর্ষ একটি লম্বা শৈলশিরার উপরে অবস্থিত। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ওঠার পথটা ভয়ানক খাড়াই আর কঠিন ছিল। প্রচুর আলগা পাথরে ভর্তি। তাতে হাত-পা কেটেকুটে গিয়েছে। আমার সঙ্গে কয়েক জন রওনা দিলেও ভয়ঙ্কর পথ দেখে তাঁরা পরে ফিরতে বাধ্য হন। সম্ভবত এটাই ওই শৃঙ্গে প্রথম আরোহণ।’’ প্রসঙ্গত, গত সোমবার এলাকারই মেন্টক কাংরি শৃঙ্গে (৬২৫০ মিটার) সফল আরোহণ করেন দেবাশিস, কিরণ পাত্র, অভিজিৎ রায়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)