E-Paper

আন্দোলন না কি সংস্কার, বিতর্কসভা থেকে উঠল প্রশ্ন

এ দিন প্রস্তাবের পক্ষে বলতে উঠে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি হাতিয়ার করেন বিচার ব্যবস্থার নানা ঘাটতিকে। তাঁর মতে, যেখানে এত শূন্য পদ, এত বকেয়া মামলা সেখানে সময়ে বিচার মিলবে কী ভাবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:১৭

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

বিচারের বাণী নীরবে, নিভৃতে কাঁদে- এ কথা বহুচর্চিত। কিন্তু কেন? বিচার ব্যবস্থার ত্রুটি নাকি এই সমস্যার শিকড় গেঁথে রয়েছে সমাজের মধ্যেই? এই কারণ অনুসন্ধান নিয়েই শনিবার সন্ধ্যায় বিতর্ক চলল শহরের এক অভিজাত ক্লাবের লনে। ‘ক্যালকাটা ডিবেটিং সার্কেল’ আয়োজিত বিতর্কসভার প্রস্তাব ছিল, ‘জাস্টিস ইজ অফেন ডিমান্ডেড বাট সেলডম ডেলিভারড’। যে বিতর্কে উঠে এসেছে নির্ভয়া থেকে আর জি কর কাণ্ড এবং সিদ্দিক কাপ্পান, জি সাইবাবা, উমর খালিদের গ্রেফতার ও জেলবন্দি থাকার ঘটনা।

এ দিন প্রস্তাবের পক্ষে বলতে উঠে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি হাতিয়ার করেন বিচার ব্যবস্থার নানা ঘাটতিকে। তাঁর মতে, যেখানে এত শূন্য পদ, এত বকেয়া মামলা সেখানে সময়ে বিচার মিলবে কী ভাবে? বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন তিনি। যদিও বিচার চাওয়া বলতে কী বোঝায় সেই প্রশ্ন তুলেই বিরোধিতার জায়গা নেন আইন গবেষক অর্ঘ্য সেনগুপ্ত। মহারাজা নন্দকুমার মামলা থেকে নির্ভয়া মামলা, উদাহরণ তুলে তাঁর প্রশ্ন, আমরা কি সার্বিক ভাবে বিচার চাই নাকি ব্যক্তিগত লাভ খুঁজি?

এ দিন বিতর্কে পক্ষ এবং বিপক্ষ, ভিন্ন রাস্তায় উত্তর খুঁজেছে। পক্ষের বক্তব্য যেখানে একের পর এক মামলা ধরে এগিয়েছে, সেখানে বিপক্ষ সার্বিক ভাবে সমাজের ত্রুটিবিচ্যুতি ধরে সওয়াল এগিয়েছে।

পক্ষের দ্বিতীয় বক্তা আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার রাজস্থানের দলিত মহিলার গণধর্ষণের মামলা তুলে ধরে প্রশ্ন করেন, ওই ঘটনার পরে কর্মস্থলে মহিলাদের সুরক্ষার বিষয়টি এসেছে। কিন্ত ৪০ বছরেও রাজস্থান হাই কোর্টে ওই মহিলার আপিলের শুনানি হয়নি। বিপক্ষের দ্বিতীয় বক্তা সাংবাদিক বরখা দত্ত ওইরাজস্থানের মহিলার ঘটনা তুলে ধরে প্রশ্ন করেছেন, সমাজ কি মহিলার কথা মনে রেখেছে? আর জি কর কাণ্ডে ডাক্তারদের পাশেনাগরিকরা এখনও আছেন কিনা এই প্রশ্ন তুলেছেন বরখা।

পক্ষের তৃতীয় বক্তা ছিলেন কল্যাণী এমস-এর জুনিয়র ডাক্তার রিকন্যা বাগচী। চিকিৎসক আন্দোলনের শরিক এই বক্তার কথায় স্বাভাবিক ভাবেই আর জি কর কাণ্ড ঘুরে ফিরে এসেছে এবং বরখাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই শীতেও ডাক্তারদের সঙ্গে আন্দোলনে নাগরিকেরা রাত জেগেছেন। কিন্তু পাঁচ মাস পরেও কেন বিচার ব্যবস্থা দোষীকে শাস্তি দিতে পারল না, সেই পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিপক্ষের তৃতীয় বক্তা ছিলেন মেঘালয় হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই তিনি একটু আক্ষেপ করে বলেছেন যে এদিন সবাই যেন বিচার ব্যবস্থার উপরে খড়গহস্ত! নিজের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন, অসাম্য এবং ন্যায়বিচারের তুলনা! মনে করিয়ে দিয়েছেন, আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বন, পরিবেশ, দলিতদের বাঁচাতে রায় দিয়েছে। যাকে বিচার বিভাগের সক্রিয়তা হিসেবেও তুলে ধরা হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আদালতের ভূমিকা নিয়েও যে ইদানিং প্রশ্ন উঠছে, সে কথাও শোনাতে ছাড়েননি।

পক্ষের শেষ বক্তা হিসাবে সাংবাদিক রাজদীপ সরদেশাই শুরুই করলেন চড়া সুরে। প্রাক্তন সহকর্মী বরখাকে খোঁচা দিলেন, কথার চিমটি কাটতে ছাড়লেন না প্রাক্তন বিচারপতিকে। তবে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এক বিখ্যাত সাংবাদিকের জামিনের মামলা শুনতে সুপ্রিম কোর্ট তড়িঘড়ি শনিবার বসেছিল? আর কেনই বা অখ্যাত সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পনকে দু বছরের বেশি জেলবন্দি থাকতে হল? কেনই বা অসুস্থ স্ট্যান স্বামীকে খাওয়ার নল দিল না আদালত? তাহলে কেন এক শিল্পপতি জেলে নানা সুবিধা পাবেন? কেনই বা উমর খলিদ এত দিনেও বিচার পাচ্ছেন না? বিপক্ষের শেষ বক্তা ইউটিউবার আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য রাজদীপের চড়া সুর নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েননি। কিন্তু প্রশ্ন তুলেছেন, সমাজ কি আদৌ এসব নিয়ে ভাবে? তাহলে এত কিছুর পরেও কেন সমাজে আলোড়ন পড়ে না? তাঁর বক্তব্য, আলোড়ন পড়ে না বলেই বিচার পাওয়া যায় না।

বিতর্ক শেষে এ দিন প্রস্তাবের পক্ষে রায় দিয়েছে সভা। তবে সংস্কার নাকি সামাজিক আন্দোলন, সেই প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RG Kar Medical College and Hospital Incident RG Kar Protest Kolkata Doctor Rape and Murder

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy