Advertisement
E-Paper

দিল্লির নির্জনতায় নিজস্ব ঢঙে শহিদ স্মরণ মুকুলের

এই প্রথম একুশের শহিদ দিবসের তৃণমূলী মঞ্চে অনুপস্থিত থাকলেন মুকুল রায়। তবে ধর্মতলার সেই মঞ্চ থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে, তুলনামূলক ভাবে নির্জনেই একুশের শহিদদের প্রতি নিজের শ্রদ্ধার্ঘ্য দিলেন তিনি। দিল্লির ১৮১ নম্বর সাউথ অ্যাভিনিউয়ের বাসভবনে উপস্থিত হাতে গোনা কিছু তৃণমূল সমর্থকের সামনে সেই পুরনো স্লোগানও তুললেন, ‘শহিদ স্মরণে আপন মরণে রক্তঋণ শোধ কর।’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ১৯:১০
—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

এই প্রথম একুশের শহিদ দিবসের তৃণমূলী মঞ্চে অনুপস্থিত থাকলেন মুকুল রায়। তবে ধর্মতলার সেই মঞ্চ থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে, তুলনামূলক ভাবে নির্জনেই একুশের শহিদদের প্রতি নিজের শ্রদ্ধার্ঘ্য দিলেন তিনি। দিল্লির ১৮১ নম্বর সাউথ অ্যাভিনিউয়ের বাসভবনে উপস্থিত হাতে গোনা কিছু তৃণমূল সমর্থকের সামনে সেই পুরনো স্লোগানও তুললেন, ‘শহিদ স্মরণে আপন মরণে রক্তঋণ শোধ কর।’

আজকের এই সমান্তরাল শহিদ মঞ্চ মুকুল রায়ের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পক্ষে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখনও পর্যন্ত কলকাতার প্রতিটি একুশের মঞ্চে মুকুল রায় শুধু উপস্থিত থেকেছেন তাই-ই নয়, অনুষ্ঠান আয়োজনের রশি মূলত থাকত তাঁর হাতেই। রাজ্যওয়াড়ি জমায়েতের আয়োজন করতেন তিনিই। আজ সেই ব্যাটন চলে গিয়েছে তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। ফলে নিজের অনুপস্থিতিকে রাজনৈতিক ভাবে অর্থপূর্ণ করে তুলতে মুকুলের আজকের এই আয়োজন করা ছাড়া কোনও গত্যন্তরও ছিল না।

রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এটি করে শহিদ আবেগের তাসটি খেললেন তিনি। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার সমর্থকদের মধ্যে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাইলেন যে তিনি গোষ্ঠী রাজনীতির উর্ধ্বে। বোঝাতে চাইলেন, মমতা তথা কেন্দ্রীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর যতই দূরত্ব তৈরি হোক না কেন, ’৯৩ সালের শহিদ রক্তের প্রশ্নে মুকুল রায় একই রকম অনুগত। আজ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় স্মৃতিচারণের ঢঙে বললেন, ‘‘আমার পাশেই সেই ২১শে জুলাই গুলি খেয়েছিল কেশব বৈরাগী। উত্তর দিনাজপুরে তার বাড়িতে সেই দেহ নিয়ে আমিই পৌঁছেছিলাম। মমতাদিরও সে দিন জীবন সংশয় হয়ে গিয়েছিল।’’ বাংলোর কোণায় বেদিতে মালা দেওয়ার পর মুকুল বলেন, ‘‘যে কোনও কারণেই হোক আমি আজ কলকাতায় নেই। আজ থেকে সংসদ শুরু হয়েছে, আমি দিল্লিতে। তাই দিল্লিতেই শহিদদের স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানালাম। এটা আমার নিজের বিবেকের প্রশ্ন।’’ এই প্রথম তিনি একুশের দলীয় মঞ্চে থাকলেন না। অনুভূতিটা ঠিক কেমন? মুকুল জানাচ্ছেন, ‘‘এ সব তো জীবনে হতেই পারে। পার্ট অব দ্য গেম। এ সব নিয়ে ভাবি না।’’

মুখে বলছেন বটে ভাবছেন না, কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ যে অনেকটাই অনিশ্চয়তার গর্ভে, সেটা নিজেও টের পাচ্ছেন তিনি। বিজেপি, কংগ্রেস অথবা সিপিএম— প্রত্যেকেই চাইছে তিনি তৃণমূলে ভাঙন ধরান। কিন্তু মুকুল রায়কে নিজেদের দলে নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা বিজেপি বা কংগ্রেসের নেই। ফলে পৃথক একটি দল তৈরি করা ভিন্ন মুকুলের সামনে কোনও রাস্তা খোলা থাকছে না। তবে সেই দল গঠন করে কতটা লাভ হবে বা আদৌ কোনও লাভ হবে কি না সেই জলটাই এখন মাপছেন মুকুল। আজ একুশের শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠান করেছেন তিনি। সেটি হল তাঁর বাড়িতেই স্থানীয় কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে ডেকে ইদের অনুষ্ঠান করেছেন। মুকুলবাবুর কথায়, ‘‘এ বার ইদের দিন আমি দিল্লিতে ছিলাম না। এখানে আমাদের অনেক সংখ্যালঘু ভাই-বন্ধু-সমর্থক রয়েছেন। আজ তাই তাঁদের সঙ্গে আদানপ্রদান করছি।’’ রাজনৈতিক সূত্রের মতে, পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বড় অংশে মুকুল রায়ের প্রভাব রয়েছে। এটাও ঘটনা যে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব মুকুল রায়কে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের মুসলিম মনকে মমতার থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টা জয়যুক্ত হবে কি না তা নিয়ে কোনও পক্ষই নিশ্চিত নয়।

Mukul Roy 21 july Delhi new delhi trinamool
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy