Advertisement
E-Paper

ভোটের ফলে মুকুল ভ্যানিশ, খুশি দলনেত্রী

ভোটের বাক্সে ঘাসফুলে বসন্ত। কিন্তু মুকুল ঝরে যাওয়ার দিকে এগোচ্ছেন কি না, জল্পনা সেটাই। দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এত দিন যে কোনও ভোটে তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নম্বর টু’ হয়ে মুকুল রায় এবং তাঁর বাহিনীকে সক্রিয় দেখা যেত। বনগাঁ লোকসভা এবং কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে এ বার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। প্রচারের শেষ লগ্নে মুকুল বুড়ি ছোঁয়ার মতো করে বনগাঁয় গিয়েছেন। তাঁর বাহিনীও ছিল কার্যত অদৃশ্য।

সঞ্জয় সিংহ ও অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:৩২

ভোটের বাক্সে ঘাসফুলে বসন্ত। কিন্তু মুকুল ঝরে যাওয়ার দিকে এগোচ্ছেন কি না, জল্পনা সেটাই।

দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এত দিন যে কোনও ভোটে তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নম্বর টু’ হয়ে মুকুল রায় এবং তাঁর বাহিনীকে সক্রিয় দেখা যেত। বনগাঁ লোকসভা এবং কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে এ বার তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। প্রচারের শেষ লগ্নে মুকুল বুড়ি ছোঁয়ার মতো করে বনগাঁয় গিয়েছেন। তাঁর বাহিনীও ছিল কার্যত অদৃশ্য। দলের অন্দরে আশঙ্কা ছিল, ভোটের দিন মুকুল-বাহিনী মেঘের (পড়ুন মধ্যমগ্রামের দলীয় দফতর) আড়াল থেকে কোনও ‘অর্ন্তঘাত’ করে বসবে না তো!

ভোটের ফল বেরোনোর পরে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, সব আশঙ্কাই অমূলক। ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে থাকলে মুকুলের প্রভাব কতটা বা দলে তাঁর ভূমিকাটি অপরিহার্য কি না, সেই প্রশ্নই বরং উঠতে শুরু করল এ দিনের পর। সোমবার দুপুরে পুরুলিয়া যাওয়ার আগে কলকাতায় তৃণমূলনেত্রী বনগাঁ ও কৃষ্ণগঞ্জে তৃণমূলের জয়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন। উপনির্বাচন মিটলেও দলে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “দলে কোনও বিভাজন নেই। ভেদাভেদ নেই। তৃণমূল কংগ্রেস ঐক্যবদ্ধ দল।” মুকুল শিবিরও আপাতত এইটুকু নিয়েই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ ভোটের ফলে প্রমাণিত হয়নি বলেই এ দিন দাবি করেছেন মুকুল-ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা। উপনির্বাচনে তাঁর গা-ছাড়া মনোভাব নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল, তা নিয়ে এ দিন দিল্লিতে মুকুল বলেন, “যে যে ভাবে ব্যাখ্যা করবেন সে ভাবে ব্যাখ্যা হবে। নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, এই উপনির্বাচনেও আমার যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। সেই ভূমিকা আমি যথাযথ ভাবে পালন করেছি।”

কিন্তু তিনি যে তাঁর লেফটেনান্টকে আর গুরুত্বই দিচ্ছেন না, মমতা এ দিন সেটা স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা আগে নিজাম প্যালেসে মুকুল-অনুগামীদের ভিড়ের খবর দলনেত্রীর কানে গিয়েছে। মুকুল যে দলে সমান্তরাল সংগঠন গড়ে তুলেছেন, তা তৃণমূলের নানা স্তরের নেতা-কর্মীদের চর্চার বিষয়। কিন্তু মমতা মনে করেন, “এক জন ব্যক্তিগত স্তরে কী করবে, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার! তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ দল।” মুকুল তাঁর বিরুদ্ধে দলে কোনও অভ্যুত্থান ঘটাতে পারেন কি? মমতার জবাব, “আমাকে এ সব প্রশ্ন কেন করা হচ্ছে! আমার দলে অনেক ব্লক সভাপতি আছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন।” অর্থাৎ মুকুলকে যে তিনি ধর্তব্যের মধ্যেই আনছেন না, সেটা এ ভাবেই বুঝিয়ে দেন তিনি।

আজ, মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক রয়েছে। তার জন্য এ দিনই দিল্লি গিয়েছেন মুকুল। থাকবেন দিন চারেক। তাঁর সম্পর্কে নেত্রীর মন্তব্য শুনে হেসেছেন তিনি। তারপরে প্রতিক্রিয়া, “উনি এ রকম কিছু বলছেন কিনা তা আমার জানা নেই। রাজনীতিতে এর মূল্য আছে বলে মনে হয় না।” দলের প্রতি তিনি অভিমানী হয়ে পড়েছেন কি? মুকুলের দাবি, “প্রশ্নই নেই। এটা তো দল। এখানে মান-অভিমানের কোনও জায়গা নেই। বাস্তবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে।” তবে যে দলে তাঁকে ক্রমশ সাংগঠনিক ভাবে কোণঠাসা করা হচ্ছে? মুকুলের উত্তর, “আমি আমার মতো আছি। দলের গুরুত্বপূর্ণ সৈনিক। প্রথম দিন থেকে আছি।”

‘গুরুত্বপূর্ণ সৈনিক’ অবশ্য এ দিন ভোট গণনা মিটতে না মিটতেই দিল্লির উড়ানে উঠে যান। যাওয়ার আগে উপনির্বাচনে দলের জয় নিয়ে তাঁর ছোট্ট প্রতিক্রিয়া ছিল, “এটা তো প্রত্যাশিত জয়।” পরে দিল্লিতে ভোটের ফল নিয়ে পর্যালোচনা করতে গিয়েও তৃণমূলের সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি তাঁর মধ্যে। মুকুল শুধু বলেন, “তৃণমূল তার ভোট ধরে রাখতে পেরেছে।” কিন্তু আট মাস আগে লোকসভা ভোটে যে বনগাঁয় তৃণমূল জিতেছিল প্রায় ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ভোটে, এ বার সেই ব্যবধান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ১১ হাজার ৭৯১। তবু মুকুলের ব্যাখ্যা, “এই ফলকে দলের বড় ব্যবধানে জয় ভাবার কোনও কারণ নেই।” কেন? বামেদের ভোটব্যাঙ্কে ক্ষয়ই তৃণমূলের ব্যবধান বৃদ্ধির বড় কারণ বলে মনে করছেন মুকুল। তাঁর কথায়, “সিপিএমের ভোট গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। বনগাঁয় সিপিএমের গত বারের ভোট ছিল প্রায় ৩২%। এ বার তা কমে হয়েছে ২৭%-র মতো। তুলনায় বিজেপির ভোট ১৯% থেকে বেড়ে ২৫% হয়েছে। কৃষ্ণগঞ্জেও বিজেপি ৩০% ভোট পেয়েছে। এটা মাথায় রাখতে হবে।”

দলের অন্য শীর্ষ নেতারা অবশ্য মুকুলের এই চুলচেরা হিসেবনিকেশে এ সবে কান দিচ্ছেন না। তাঁদের দাবি, দলনেত্রী ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে ‘অপপ্রচার’ চলছিল, ভোটের ফলে তার জবাব দেওয়া গিয়েছে। তেমনই মুকুল ও তাঁর অনুগামীরা যে সংগঠনে অপরিহার্য নন, তা-ও বুঝিয়ে দেওয়া গিয়েছে। দলের এক প্রথম সারির নেতা এ দিন বলেন, “মুকুল নাকি সংগঠনকে হাতের তেলোর মতো জানেন। এটা যাঁরা এখনও ভাবছেন, তাঁরা ভুল করছেন। সংগঠনে এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শেষ কথা।”

এই পরিস্থিতিতে মুকুল কি বিকল্প কিছু ভাবছেন?

রসিকতার সুরে উত্তর আসে, “বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, মাসির গোঁফ হলে মামা হতো। কবে কী হবে তা নিয়ে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়।”

sanjay singha anamitra sengupta bangaon by election krishnagunj by election tmc bjp mukul roy effect
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy