Advertisement
E-Paper

সভাপতির মান বাঁচাতেই ভোট ছিনতাই

মামুলি একটা নির্বাচন। এর মাধ্যমে না তৈরি হবে কোনও পুর বোর্ড, না-হবেন কেউ পুর র্কতা। কিন্তু সেই নির্বাচনেই বহিরাগতদের ঢুকিয়ে জবরদস্তি ভোট লুঠের অভিযোগ উঠল শাসক দলের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩১
শনিবার লিলুয়া খেমকা হাইস্কুলে এ ভাবেই চলেছে ভোট-লুঠ। — নিজস্ব চিত্র

শনিবার লিলুয়া খেমকা হাইস্কুলে এ ভাবেই চলেছে ভোট-লুঠ। — নিজস্ব চিত্র

মামুলি একটা নির্বাচন। এর মাধ্যমে না তৈরি হবে কোনও পুর বোর্ড, না-হবেন কেউ পুর র্কতা। কিন্তু সেই নির্বাচনেই বহিরাগতদের ঢুকিয়ে জবরদস্তি ভোট লুঠের অভিযোগ উঠল শাসক দলের বিরুদ্ধে।

প্রশ্ন হল হাওড়া পুরসভার সঙ্গে সংযুক্ত বালির ১৬টি ওয়ার্ডের সামান্য একটা নির্বাচনে কেন এতটা মরিয়া হয়ে উঠল তৃণমূল? শুধু কি বিরোধীদের পরাস্ত করা? হাওড়া জেলা তৃণমূলের একাংশ বলছেন, বালিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা সামাল দিতেও কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন উচ্চ নেতৃত্ব। তারই ফল হিসেবে ভোটের দিন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ভরসা রাখতে পারেননি অন্য গোষ্ঠীর উপরে। সেই জন্যই বহিরাগতদের দিয়ে ভোট করানোর পরিকল্পনা।

সম্প্রতি ঘুষ কাণ্ডে বালির প্রাক্তন সিপিএম চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ীর নাম জড়িয়ে যাওয়া এবং সাবেক পুর কর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ সর্মথন করার অভিযোগ ওঠায় এমনিতেই যথেষ্ট ব্যাকফুটে রয়েছে সিপিএম। আদতে ২০১১ থেকেই বালিতে লাল দুর্গে ফাটল চোখে পড়ছিল। পরে লোকসভা নির্বাচনে সেই ফাটল আরও স্পষ্ট হয়। তার পরে সাংগঠনিক দুর্বলতায় বালিতে এখন কার্যত ঘুমিয়ে পড়েছে সিপিএম। ভোটের দিনেও তাই দলের জোনাল অফিসে তালা দিয়ে বসে থাকেন গুটিকয় নেতা। গা-জোয়ারির ভোট করানোয় অসন্তুষ্ট তৃণমূল কর্মীদের একাংশই বলছেন, এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবে ভোট হলেই তাঁদের ড্যাং ড্যাং করে জিতে যাওয়ার কথা।

তা হলে ভোটের দিন সকাল থেকেই বহিরাগতদের দিয়ে অবাধ ছাপ্পা ভোট করাতে হল কেন?

তৃণমূলের অন্দরের খবর— ১৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৪ জনই মন্ত্রী তথা জেলা সভাপতি অরূপ রায়ের অনুগত। তাঁদের প্রত্যেকে না-জিতলে জেলা সভাপতির মান থাকবে না। জেলা নেতারা একান্তে যুক্তি দিচ্ছেন— বিধায়ক সুলতান সিংহের অনুগত বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীরা যাতে দলের প্রার্থীদের হারিয়ে না-দেন, সে জন্যই বহিরাগতদের দিয়ে ভোট লুঠ করাতে হয়েছে। সমস্ত বিক্ষুব্ধ কর্মীই পরে মূল স্রোতে ফিরে এলেও তাঁদের আদৌ বিশ্বাস করতে পারেননি জেলা নেতৃত্ব। এক নেতা বলেন, ‘‘অরূপদার মুখে কালি ছেটাতে তলে তলে যে তারা অর্ন্তঘাত করবে না, কে বলতে পারে?’’ জেলা নেতারা বলছেন, ভোট লুঠ করানোর আরও একটা কারণ রয়েছে। যাঁরা এ বারে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই তেমন কোনও পরিচিতি ছিল না। অনেকেই স্বঘোষিত নেতা। জেলার এক প্রবীণ নেতা বলছেন, কে কার থেকে কত বেশি ভোটে জিতে নেতৃত্বের কাছে নম্বর বাড়াবেন, সে দিকেই নজর দিয়েছিলেন প্রার্থীরা। আর তাই প্রত্যেকেই নিজেদের মতো করে ভোট-যুদ্ধের ফিল্ডিং সাজিয়েছিলেন। আর বহিরাগত খেলোয়াড়রা এসে উড়িয়ে খেলে দিয়ে গিয়েছেন।

আর তাই ভোটের দিন সকাল থেকেই বালি-বেলুড়-লিলুয়া চষে বেড়িয়েছে একগুচ্ছ কাটা-ফাটা অচেনা মুখ। তবে এঁদের নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মুখগুলো ছিল চেনা। যেমন— লিলুয়া ডন বসকো স্কুল থেকে বালিখাল পর্যন্ত জিটি রোড বরাবর প্রায় ২০টি মোটরবাইক নিয়ে চক্কর দিয়েছেন হাওড়ার মেয়র পারিষদ গৌতম চৌধুরী। যখন যে বুথে সুযোগ পেয়েছেন, বাইক বাহিনী নিয়ে গিয়ে ‘ভোট করিয়েছেন’ তিনি। আবার লিলুয়া এলাকায় নিজেদের বাহিনী নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মেয়র পারিষদ শ্যামল মিত্র, কাউন্সিলর শৈলেশ রাই, দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়রা। বালি-বেলুড়ের বিভিন্ন পাড়ার দায়িত্ব আবার ছিল অন্য নেতাদের হাতে। যেমন, বালিখাল সংলগ্ন এলাকায় ‘ভোট করিয়েছেন’ উত্তরপাড়ার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব ও ডোমজুড়ের বিভিন্ন ছোট-বড় নেতা। ভোটবাগান ও বেলুড়ের কয়েকটা ওয়ার্ডের দায়িত্বে ছিলেন বরো চেয়ারম্যান রজত সরকার, কাউন্সিলর বিনয় সিংহ। ছিলেন বিভাস হাজরা, বাণী সিংহ রায়রাও। বহিরাগতদের তালিকা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বিধায়ক জটু লাহিড়ী থেকে রাজা সেন— সকলেই নিজের নিজের বাহিনী নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বালির রণাঙ্গনে।

সমস্ত অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন অরূপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘বালিতে বিরোধীরা নিজেরাই ওয়াকওভার দিয়ে দিয়েছিল। সেখানে বহিরাগত এনে আমাদের ভোট লুঠের কী দরকার? মানুষ সেখানে নিজের ভোট নিজে দিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে তৃণমূল জয়ী হবে। সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ অবান্তর ও ভিত্তিহীন।’’

municipal election bali police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy