Advertisement
E-Paper

পুলিশ খুনে ছাড় মেলে! হতবাক পরিবার

কেটেছে দেড় বছর। শুকোয়নি ক্ষত। প্রলেপ দূরঅস্ত্, ক্ষতটাই যেন আরও গভীর হয়ে উঠল দুবরাজপুর থানার এএসআই অমিত চক্রবর্তী হত্যাকাণ্ডে চার্জশিটে নাম থাকা ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে চাওয়ার সরকারি আবেদনে।

প্রকাশ পাল ও তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:১৫
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অমিতের পিসি এবং পিসেমশাই।— নিজস্ব চিত্র

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অমিতের পিসি এবং পিসেমশাই।— নিজস্ব চিত্র

কেটেছে দেড় বছর। শুকোয়নি ক্ষত। প্রলেপ দূরঅস্ত্, ক্ষতটাই যেন আরও গভীর হয়ে উঠল দুবরাজপুর থানার এএসআই অমিত চক্রবর্তী হত্যাকাণ্ডে চার্জশিটে নাম থাকা ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে চাওয়ার সরকারি আবেদনে।

চুঁচুড়ার রথতলার বাসিন্দা— অমিতের পিসি শেফালি মুখোপাধ্যায়, পিসেমশাই লক্ষ্মীনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। বাবা-মা মারা যাওয়ার পরে ছেলেবেলা থেকে যাঁদের কাছে মানুষ হয়েছিলেন অমিত। মঙ্গলবার সরকারি ওই আবেদনের কথা জানতে পেরে যাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, এক জন পুলিশ অফিসারকে মেরে যদি ছাড় পাওয়া যায়, তা হলে কেমন রাজত্ব চলছে!

২০১৪ সালের ৩ জুন দুবরাজপুরে তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় মারাত্মক জখম হন দুবরাজপুর থানার টাউনবাবু অমিত চক্রবর্তী। হাসপাতালে ৫৫ দিন পরে তিনি মারা যান। অভিযুক্তদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই শাসকদলের নেতা-কর্মী। সেই হত্যাকাণ্ডেই চার্জশিটে নাম থাকা মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-সহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে আদালতে আবেদন জমা করেছেন সরকারি আইনজীবী।

এত দিন অমিতের হত্যাকারীদের কঠিন শাস্তির আশায় দিন গুনছিলেন মুখোপাধ্যায় দম্পতি। কিন্তু এ দিন সরকারি আইনজীবীই অভিযুক্তদের হয়ে সওয়াল করেছেন শুনে তাঁরা স্তম্ভিত। অসুস্থ লক্ষ্মীনারায়ণবাবু কথায় কথায় উগরে দিলেন ক্ষোভ, ‘‘ও তো সরকারেরই কর্মী ছিল। কিন্তু এত দিনেও সরকারের কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। অমিতের মৃত্যুর পরে কোনও সরকারি সুবিধাও মেলেনি। এখন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়া হলে কী করব! ওদের লোকই তো অমিতকে মেরেছে। ওরা কখনও নিজেদের লোকের বিরুদ্ধে মামলা চালায়!’’ অঝোরে কাঁদছিলেন শেফালিদেবী। কোনও মতে বলেন, ‘‘জলজ্যান্ত ছেলেটা চলে গেল। কোনও বিচার কি পাব না?’’

অমিতের মৃত্যুর পরে সংসারটা ভেসে যেতে বসেছিল। মুখোপাধ্যায় দম্পতি তাঁদের একমাত্র মেয়ের চাকরির জন্য সরকারের দোরে দোরে ঘুরেও কোনও ফল পাননি। মেলেনি কোনও সাহায্য। মেয়ে শর্মিষ্ঠা এখন একটি গ্রিলের কারখানায় খাতাপত্র লিখে মাসে সাকুল্যে চারা হাজার টাকা উপার্জন করেন। পরিবারে সাহায্য করেন অমিতের বোন, চুঁচুড়ার জোড়াঘাট এলাকার বাসিন্দা অমিতা। তিনিও দাদার মতোই পিসি-পিসেমশাইয়ের কাছে মানুষ।

অমিতাও সরকারি সিদ্ধান্ত জানার পরে হতাশায় ভেঙে পড়েন। তাঁর কথায়, ‘‘কে আর অপরাধ কমানোর ঠেকা নিচ্ছে! সত্য উদঘাটিত হল কি না, তাতে কার কী যায় আসে! যারা ধরা পড়েছে তারা অপরাধী কি না, আসল অপরাধী ধরা পড়ল কি না, জানি না। কারও বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা নেই।’’

এমন আবেদনের কথা জানার পরে এলাকাবাসীও হতাশা গোপন করেননি। স্থানীয় বাসিন্দা শৈবাল দাস বলছিলেন, ‘‘ভীষণ শান্ত এবং পরোপকারী ছিলেন অমিত। মামলার মাঝপথেই যে ভাবে অভিযুক্তদের আড়াল করা করার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে খুবই খারাপ লাগছে।’’

আদৌ মামলা থেকে ৩৬ জনের নাম বাদ দেওয়া হবে কি না, বিচারকই তা ঠিক করবেন। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী তপন সাহানা জানিয়েছেন, বিচারক আগামী ১৯ জানুয়ারি ওই আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

ততদিন অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই হাতে নেই মুখোপাধ্যায় দম্পতির।

state news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy