চলছে উদ্ধার কাজ। মঙ্গলবার সকালে।— নিজস্ব চিত্র।
ভাণ্ডারদহ বিলে বাসডুবির পর সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৬ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা জানিয়েছিলেন, বাসে জনা ষাটেক লোক ছিলেন। নিখোঁজ সেই যাত্রীদের সন্ধানে মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা কাজ শুরু করেন। ভাণ্ডারদহের জলে নামেন ডুবুরিরা। পাড়ে তখন হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যেরা।
সকাল তখন সাড়ে ন’টা। জলে নামল ডুবুরিদের একটা দল। ১০ মিনিটের মাথায় উঠে এল একটা দেহ। জলের নীচে কাদায় আটকে ছিল। তার পর আরও পাঁচটি শান্ত, নিথর দেহ। তার মধ্যেই রয়েছেন বাস কন্ডাকটর মিন্টু শেখ। গত কাল যে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভাণ্ডারদহের জলে তলিয়ে গিয়েছিল, সেটি চালাচ্ছিলেন মিন্টুর দাদা সেন্টু শেখ। সোমবার সন্ধ্যায় সেন্টুর দেহ উদ্ধার হয়। সকাল থেকে একের পর এক দেহ তুলে আনছেন ডুবুরিরা, আর পাড় ভেঙে পড়ছে স্বজনহারা কান্নায়!
এ দিনের ছ’জনকে ধরে দৌলতবাদের বাস দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। ডুবুরিরা জানিয়েছেন, এখনও কিছু দেহ জলের তলায় কাদায় আটকে থাকতে পারে। জলেও ভেসে যেতে পারে কিছু দেহ। হরিণঘাটা থেকে আসা ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের সদস্যেরা তাই গোটা বিল জুড়েই সন্ধান চালাচ্ছেন। বাকিদের সন্ধান যদি মেলে!
আরও পড়ুন: সেতু ভেঙে বাস জলে, মৃত ৩৬, উদ্ধার ঘিরে বিক্ষোভ, আগুন মুর্শিদাবাদে
দুর্ঘটনাস্থলে এ দিন সকালে গিয়েছিলেন বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁকে দেখেই এলাকার মানুষজন বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বালির ঘাট সেতুতে সন্ধ্যার পর আলোর ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়। অধীরবাবু সে দাবি মেটানো হবে বলে জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি দুর্ঘটনার কবলে পড়া পরিবহণ দফতরের ওই বাসটির সামগ্রিক অবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘মৃতদেহগুলির ময়নাতদন্তের সঙ্গে বাসটিরও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’’ পরিবহণ দফতর গত বছরই বাসটি বহরমপুর পুরসভাকে দিয়েছিল। তারা সেটি লিজে চালাচ্ছিল।
সোমবার সকাল সাতটা নাগাদ করিমপুর থেকে মালদহ যাওয়ার পথে ওই বাসটি দৌলতাবাদের কাছে বালির ঘাট সেতুর উপর থেকে রেলিং ভেঙে সোজা নীচে পড়ে যায়। ওই দিন বিকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। বিকাল চারটে নাগাদ বাসটিকে জল থেকে উপরে তোলার চেষ্টা শুরু হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার মধ্যে ওই বাস থেকে ৩২ জনের দেহ উদ্ধার হয়। ওই দিন সকালেই ৪ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। রাত ৮টা নাগাদ ফাঁকা বাসটিকে উপরে তোলা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy