Advertisement
০৯ মে ২০২৪

এ ভাবেও ফিরে আসা যায়!

মার্জিয়ার স্বামী সামিমউল ইসলাম কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরুতে  থাকেন। মাসখানেক হল ছুটিতে গ্রামের বাড়ি এসেছেন।

মার্জিয়া বিবি, ডান দিকে বিভাস বিশ্বাস।

মার্জিয়া বিবি, ডান দিকে বিভাস বিশ্বাস।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৮
Share: Save:

এক জন সাঁতার জানেন না। অন্য জনের আবার এক পা ভাঙা।

সোমবার দৌলতাবাদের বালিরঘাট থেকে জলে পড়ে যাওয়া বাসটাতে ছিলেন দু’জনেই।

এক জন বলছেন, ‘‘স্রেফ কপালজোরে বেঁচে গিয়েছি।’’ অন্য জনের কথায়, ‘‘প্রাণপণ শুধু সাঁতরে গিয়েছি।’’

এক জন বছর ডোমকলের হিতানপুরের মার্জিয়া আফরিন। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের নার্স। অন্য জন করিমপুরের দাঁড়েরমাঠের বিভাস বিশ্বাস।

মার্জিয়ার স্বামী সামিমউল ইসলাম কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরুতে থাকেন। মাসখানেক হল ছুটিতে গ্রামের বাড়ি এসেছেন। মার্জিয়া প্রতিদিন হিতানপুর থেকে বাসে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে যাতায়াত করেন। অন্যান্য দিনের মতো সোমবার ভোরেও বাস ধরতে এসেছিলেন মার্জিয়া।

সরকারি বাসটির আগে একটি বেসরকারি বাস যায়। মার্জিয়া প্রতিদিন সেটাতেই ওঠেন। কিন্তু সেই বাসে বড্ড ভিড় থাকায় তিনি ছেড়ে দেন। মিনিট পাঁচেক পরেই আসে করিমপুর-মালদহ রুটের সরকারি বাসটি। তিনি উঠে পড়েন। কয়েকটি স্টপ পরেই ইসলামপুর বাজারে তিনি সামনের দরজার কাছে ‘সিট’ও পেয়ে যান।

ভেঙে গিয়েছে রেলিং। বিপদ ঘটতে পারে যখন তখন। বহরমপুরে রামেন্দ্রসুন্দর সেতু। —নিজস্ব চিত্র।

তার পরেই বালিরঘাট সেতুতে একটা বিকট আওয়াজ। মুহূর্তের মধ্যে আস্ত বাসটাই বিলের জলে। মার্জিয়া বলছেন, ‘‘কী ভাবে যে বাসের মধ্যে থেকে বাইরে চলে এসেছি তা নিজেও জানি না। জানি না সাঁতারও। কিন্তু বাঁচার জন্য হাত পা নেড়ে যাচ্ছিলাম। নাকে-মুখে জল ঢুকে একাকার কাণ্ড। ঠিক তখনই আমার হাত ধরে কারা যেন টানল। কে বলেছে, উপরওয়ালা নেই! এ যাত্রা তো তাঁর জন্যই বেঁচে ফিরলাম।’’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, আসলে বাসটা যখন জলে পড়ে, কাছাকাছি কয়েকটি নৌকাও ছিল। সেই নৌকার লোকজন এসেই তড়িঘড়ি বেশ কয়েক জনকে উদ্ধার করে। ঘটনার দিন থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে কলেজে চিকিৎসাধীন ছিলেন মার্জিয়া। মঙ্গলবার তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি আছেন তাঁর বাবার বাড়ি, রানিনগরে।

মার্জিয়া বলছেন, ‘‘আবাসনের জন্য মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও আবাসন মেলেনি। বাড়িতে আমার আট মাসের ছেলে। তাই বাড়ি থেকে বহরমপুর যাতায়াত করতে হয়।’’ মার্জিয়ার স্বামী সামিমউল বলছেন, ‘‘এই ক’দিন স্ত্রীর সঙ্গে প্রতিদিনই বাস স্টপ পর্যন্ত যেতাম। ঘটনাচক্রে সে দিন যেতে পারিনি। মার্জিয়া ফোন না করলে জানতেই পারতাম না যে, ও ওই বাসেই আছে।’’

করিমপুরের দাঁড়েরমাঠের বিভাস বিশ্বাসের পা ভেঙেছে বেশ কয়েক মাস আগে। তাঁর ডান পায়ে অস্ত্রোপচার করে প্লেট লাগানো আছে। সেই প্লেট খোলার জন্য বহরমপুরে এক চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিলেন বিভাস। সঙ্গে ছিলেন দাদা বিকাশ বিশ্বাসও। এক পায়ে প্রাণপণ সাঁতরে বিকাশ পাড়ে উঠলেও বিকাশ উঠতে পারেননি।

বিভাস বলছেন, ‘‘বাসের পিছনের সিটে দাদা ও আমি বসেছিলাম। দাদা আমার পাশেইে ছিল। বাস জলে পড়ার পরে কে কোথায় হারিয়ে গেল। ভাঙা পা নিয়ে কোনও রকমে জানলা দিয়ে বেরিয়ে আসি। এক পায়ে ভর দিয়েই সাঁতার কাটতে শুরু করি। বুঝতে পেরেছিলাম, হাল ছেড়ে দেওয়া মানেই মৃত্যু।’’ তার পরেই নৌকার লোকজন টেনে তোলেন বিভাসকে। প্রথম দিন বিকাশের খোঁজ মেলেনি। মঙ্গলবার সকালে বিকাশের দেহ উদ্ধার করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE