Advertisement
২৪ মার্চ ২০২৩

হকার উচ্ছেদে বাধা তৃণমূলের, অশান্ত কল্যাণী

রেল প্ল্যাটফর্ম থেকে হকার উচ্ছেদে আগে থেকেই বাধা দিচ্ছিল শাসক দল। সপ্তাহখানেক আগে নোটিস দেওয়ার পরে, মঙ্গলবার কল্যাণী স্টেশনে ওই উচ্ছেদ-অভিযানে নেমে হকারদের প্রবল বাধার মুখে পড়ল রেল রক্ষী বাহিনী (আরপিএফ)। বাধল খণ্ডযুদ্ধ। দু’তরফেই কয়েকজন জখম হলেন। হকারদের করা অবরোধে শিয়ালদহ মেন লাইনে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল। শেষ পর্যন্ত এ দিনের মতো উচ্ছেদ-অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। কবে ওই অভিযান হবে, তা ভাঙেননি রেল-কর্তারা।

ভয়ে লুকিয়েছে পুলিশ।

ভয়ে লুকিয়েছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫১
Share: Save:

রেল প্ল্যাটফর্ম থেকে হকার উচ্ছেদে আগে থেকেই বাধা দিচ্ছিল শাসক দল। সপ্তাহখানেক আগে নোটিস দেওয়ার পরে, মঙ্গলবার কল্যাণী স্টেশনে ওই উচ্ছেদ-অভিযানে নেমে হকারদের প্রবল বাধার মুখে পড়ল রেল রক্ষী বাহিনী (আরপিএফ)। বাধল খণ্ডযুদ্ধ। দু’তরফেই কয়েকজন জখম হলেন। হকারদের করা অবরোধে শিয়ালদহ মেন লাইনে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল। শেষ পর্যন্ত এ দিনের মতো উচ্ছেদ-অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। কবে ওই অভিযান হবে, তা ভাঙেননি রেল-কর্তারা।

Advertisement

তৃণমূল সমর্থিত কল্যাণী রেল হকার্স ইউনিয়নের সম্পাদক প্রদীপকুমার বিশ্বাসের মন্তব্য, “প্ল্যাটফর্মে ৮০ জন হকার আছেন। আমরা তাঁদের জন্য পুনর্বাসন চেয়েছিলাম। রেল-কর্তারা শোনেননি। হঠাৎ করে বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া উচ্ছেদের কথা বলে রেল। তাই এ দিন প্রতিরোধ হয়েছে।” তাঁর দাবি, আরপিএফের মারে পাঁচ জন হকার জখম হন। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি। আরপিএফের অ্যাসিস্ট্যান্ট সিকিউরিটি কমিশনার (কাঁচরাপাড়া) দীপককুমার চৌধুরীর পাল্টা দাবি, “আগে থেকে জানিয়েই উচ্ছেদ শুরু হয়েছিল। হকারদের ছোড়া পাথরের ঘায়ে আমাদের চার জন জখম হন।”

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্ল্যাটফর্ম থেকে হকার উচ্ছেদ করা নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে রেলের সঙ্গে হকার্স ইউনিয়নের বেশ কয়েকবার কথাবার্তা হয়। সে সময় শাসক দলের নেতাদের বক্তব্য ছিল, পুজোর মুখে উচ্ছেদ-অভিযান না হওয়াই ভাল। পুজো মিটে গেলে ফের হকার উচ্ছেদের প্রস্তুতি শুরু করে রেল। গত সপ্তাহে নোটিস পড়ে, ২ ডিসেম্বরের মধ্যে প্ল্যাটফর্ম থেকে অবৈধ দোকান সরাতে হবে।

রেললাইন থেকে পাথর তুলে ছুড়ছে হকারেরা।

Advertisement

বাধা দিতে তৈরি ছিল হকার্স ইউনিয়নও। এ দিন সকাল থেকে স্টেশনের বাইরে পথসভা করে হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের একটি গুমটি আরপিএফ সরাতে গেলে ছুটে যান হকারেরা। চলে আসেন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি সুনীল তরফদার, তৃণমূূলের জেলা সহ-সভাপতি নৃপেন চট্টোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। উচ্ছেদ-অভিযান বন্ধ করার দাবি তোলেন তাঁরা। ইতিমধ্যে হকারেরা শিয়ালদহগামী শান্তিপুর লোকাল দাঁড় করিয়ে অবরোধ শুরু করে দেন।

পরিস্থিতি উপেক্ষা করে আরপিএফ ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের গুমটি দোকানটি উপড়ে ফেলে। হকারেরা বাধা দিতে গেলে লাঠি চালানো হয়। হকারদের একাংশ তখন রেললাইনে নেমে খোয়া ছুড়তে শুরু করেন বলে অভিযোগ। লাইনে নেমে পাল্টা পাথর ছুড়তে দেখা যায় আরপিএফ-কেও। দু’পক্ষের মাঝে পড়ে ঘাবড়ে যাওয়া যাত্রীরা এ দিক-ও দিক ছুটতে শুরু করেন। আধ ঘণ্টা তুলকালাম চলে।

এরই মধ্যে হকারদের একাংশের চাপে তৃণমূলের নেতারা রেল এবং আরপিএফের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। রেলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, অভিযান স্থগিত রাখা হচ্ছে। তবে হকারদের অবরোধ তুলতে হবে। নেতারা সে কথা হকারদের বোঝাতে গেলে তাঁরা দাবি তোলেন, কল্যাণীর স্টেশন ম্যানেজার পীযূষকান্তি রায়কে পুরো ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। পীযূষবাবু রাজি হননি। ফের তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কল্যাণী শহর সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতায় আলোচনা শুরু হয়।

ইতিমধ্যে হকারদের একাংশ ধৈর্য হারিয়ে স্টেশন ম্যানেজারের দফতরে ঢিল ছুড়তে শুরু করেন। তাঁদের সঙ্গে জুটে যায় জনতাও। অবরোধে আটকে থাকা যাত্রীরাও ট্রেন চালানোর দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন প্ল্যাটফর্মে। বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ বিক্ষোভ থামে। শুরু হয় ট্রেন চলাচল।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.