গত দু’দিনে নদিয়ার হাঁসখালি থানা এলাকায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১২ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এবং ২ জন শিশুকে গ্রেফতার করা হয়। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত বাংলাদেশিরা প্রায় ৩–৪ বছর আগে অবৈধ পথে ভারতে প্রবেশ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিল। পরে ভারতীয় দালালদের সহায়তায় তারা হাঁসখালি সীমান্ত এলাকা দিয়ে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। গোপন সূত্র মারফত খবর পেয়ে হাঁসখালি থানার একটি দল তাঁদের গ্রেফতার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি অনুপ্রবেশের মামলা দায়ের করে রানাঘাট মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতেরা বাংলাদেশের যশোর ও নারায়ণ জেলার বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সাম্প্রতিক কয়েক মাসে রাজ্য জুড়ে প্রায় ৪০০ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও বিএসএফ। শুধুমাত্র নদিয়াতেই চলতি বছরে শতাধিক অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে ধানতলা ও হাঁসখালি থানার অধীনে ৫০টিরও বেশি মামলা হয়েছে এবং প্রায় ২৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক দিন আগেই আরও ১০ বাংলাদেশিকে পুশব্যাক করেছিল বিএসএফ। নদিয়া দিয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্তে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। সেই ১০ জন বাংলাদেশিরা সাতক্ষীরা, যশোর, মাদারিপুর ও নড়াইল জেলার বাসিন্দা ছিল। স্বদেশের মাটিতে পা দিতেই বিজিবি ওই ১০ জনকে আটক করে নিজেদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে ধৃতদের মুজিবনগর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়।নদিয়ার ২১৬ কিলোমিটার স্থলসীমান্তের প্রায় ২০.৬১১ কিলোমিটার অংশ এখনও উন্মুক্ত রয়েছে। এই উন্মুক্ত সীমান্তকে ব্যবহার করে অনুপ্রবেশের প্রবণতা বাড়ছে। এরই মধ্যে নদিয়া সীমান্তবর্তী বিভিন্ন থানায় পুলিশি অভিযান চলছে এবং কয়েক দিনের ব্যবধানে একের পর এক বাংলাদেশির গ্রেফতার খবর আসছে।
তদন্তকারীদের ধারণা, অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে থাকে এবং দেশে ফেরার জন্য স্থানীয় দালালদের সাহায্য নেয়। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, যতই বিএসএফের নজরদারি এড়িয়ে অনুপ্রবেশকারীরা আসুক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। দালাল চক্রের অনেক সদস্যের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি এলাকা থেকে বিএসএফ সাত জন বাংলাদেশি নাগরিক এবং তিন জন ভারতীয় দালালকে গ্রেফতার করেছে, যারা অনুপ্রবেশকারীদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করছিল। পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে, যাদের মাধ্যমে অনুপ্রবেশের যাবতীয় হিসাবনিকাশ হয়, তাদেরও বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সীমান্তে তল্লাশি অভিযান ও চেকপোস্ট বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।