ফেরত পেলেন গয়নার ব্যাগ। নিজস্ব চিত্র
দুই বন্ধু মিলে স্কুটি চেপে যাচ্ছিল বেশ খোশ মেজাজেই। শহরের ব্যস্ততম এলাকায় হঠাৎ রাস্তার উপরে একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন। স্কুটি থামিয়ে দেয় তাঁরা। প্রাথমিক দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে এক জন কুড়িয়েও নেন সেই ব্যাগ। চেন খুলতেই চমকে ওঠেন দু’জনে। ভিতরে চকচক করছে সোনার গয়না! সঙ্গে ব্যাঙ্কের পাসবই।
মুহূর্তে দুই বন্ধু সিদ্ধান্ত নেন, যেভাবেই হোক আসল মালিকের হাতে ফিরিয়ে দেবেন গয়নার ব্যাগ। যেমন ভাবা, তেমন কাজ।
ব্যাঙ্কের পাসবই থেকে ব্যাগের মালিকের নাম-ঠিকানা জোগাড় করা হয়। জানা যায়, ব্যাগের মালিকের নাম গোপাল হালদার। বাড়ি কৃষ্ণনগর শহরের কাছে সুকান্তপল্লিতে। স্কুটি চালিয়ে সুকান্তপল্লির দিকে রওনা হন দুই বন্ধু। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পর সন্ধান মেলে ওই ব্যাগ এবং ব্যাগের ভিতরে থাকা গয়নার আসলের মালিকের। অন্যদিকে, অপ্রত্যাশিত ভাবে খোয়া যাওয়া ব্যাগ ফিরে পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন ওই গয়নার মালিক এবং পরিবারের সদস্যেরা।
শক্তিনগর অঞ্জনাপাড়ার বাসিন্দা বছর পঁচিশের কাঞ্চন শীল ও তুফান ঘোষের এই কান্ডে সাড়া পড়ে গিয়েছে এলাকায়। রাস্তায় পড়ে থাকা সোনার গয়না বাড়ি বয়ে এসে ফিরিয়ে দিয়ে তাঁরা এখন রীতিমতো সেলিব্রিটি।
যে সময়ে ওই দুই বন্ধু ব্যাগ খুঁজে পেয়েছেন রাস্তায়, তখন শোকের ছায়া নেমে এসেছিল কলের মিস্ত্রি গোপাল হালদারের বাড়িতে। ব্যাগের ভিতরে ছিল এক জোড়া সোনা কানের দুল আর সোনার চেন।
জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক দিন গোপালের কাজ না থাকায় হাতে টাকা ছিল না। অগত্যা স্ত্রীয়ের গয়না নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি। বন্ধক রেখে কিছু টাকার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু সঙ্গীতা সিনেমা হলের সামনে এসে হাতের পাঁচ ব্যাগটিও হারিয়ে যায়। প্রথমে বুঝতে পারেননি গোপাল। গয়না বন্ধক দিতে পৌঁছে তিনি বুঝতে পারেন, ওই ব্যাগ কোনও ভাবে রাস্তায় খোয়া গিয়েছে। সব জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরেও ব্যাগের সন্ধান না পেয়ে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে খালি হাতেই বাড়ি ফেরেন।
এর পর সন্ধে নাগাদ বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় একটি স্কুটি। গোপাল হালদারের নাম ধরে ডাকাডাকি করতে থাকেন দু’জন।
এ দিন গোপাল হালাদার বলেন, “তখনও আমি ভাবতে পারিনি যে, গয়নার ব্যাগ ফিরিয়ে দিতে এসেছেন কেউ। ওঁরা যখন কথাটা বললেন, বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না!”
তিনি আরও জানান, এই মুহূর্তে তাঁর সংসারের যা অবস্থা, তাতে গয়না ফেরত না পেলে ভয়াবহ সমস্যা হত।
এত অভাব-অনটনের মধ্যেও গোপালের মুখে হাসি ফুটিয়েছে এই ঘটনা। তাঁর সংযোজন, ‘‘ভাবতে ভাল লাগছে, এখনও এমন মানুষ আছেন যাঁরা বাড়ি বয়ে এসে গয়নার ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে যান।”
যদিও এর মধ্যে বিশেষ কোনও কৃতিত্ব দেখছেন না বেকার ওই দুই যুবক। এ দিনের অন্যতম নায়ক কাঞ্চন শীল নির্বিকার ভাবে বলছেন, “আসলে আমরা ভাবলাম যে, গয়না হারালে নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হবে। ভাবলাম, শহরের কাছেই যখন ঠিকানাটা তখন স্কুটি চালিয়ে গিয়ে দিয়েই আসি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy