E-Paper

মিলল না কিছুই, একুশে গুলিতে জখমের অভিমান

কেটে গিয়েছে ৩২ বছর। কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে বন্ধ কারখানা। সাইরেনও আওয়াজ শোনা যায় না। শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে দিন কাটে দীপকের।

সুদেব দাস

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৫ ০৯:৩০
১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাই গুলিতে জখম হওয়া দীপক দাস। সোমবার কল্যাণীতে।

১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাই গুলিতে জখম হওয়া দীপক দাস। সোমবার কল্যাণীতে। নিজস্ব চিত্র।

১৯৯৩ সালের একুশ জুলাই। যুব কংগ্রেসের ডাকে মহাকরণ অভিযান। সে দিন পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের। জখম হন অনেকে। সেই তালিকাতেই ছিলেন দীপক দাস। গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে যান কলকাতার রাজপথে। জ্ঞান হারান। ধরে নেওয়া হয় তিনিও মৃত।

তাঁকে রাখা হয় পিজি হাসপাতালের মর্গে। কিন্তু ভাগ্যচক্রে ফিরে আসেন মৃত্যুর মুখ থেকে। ময়না তদন্ত শুরুর আগে এক চিকিৎসকের নজরে আসে, শ্বাস চলছে। মর্গ থেকে নিজে যাওয়া হয় জরুরি বিভাগে। তৃণমূলে থাকলেও, সমাবেশ যাওয়া বন্ধ করেছেন। দলের প্রতি অভিমানে।

কেটে গিয়েছে ৩২ বছর। কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে বন্ধ কারখানা। সাইরেনও আওয়াজ শোনা যায় না। শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে দিন কাটে দীপকের। স্ত্রী সোমা দীর্ঘদিন অসুস্থ, দুই ছেলে অস্থায়ী কাজে যুক্ত। দীপক নিজে বর্তমানে গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে শববাহী গাড়ির চালক। সংসার কোনওরকমে চলে।

রোজগারের টাকা স্ত্রীর ওষুধেই শেষ হয়ে যায়। যে দলের জন্য রক্ত দিয়েছিলেন, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেও দীর্ঘদিন ধরে দলের পাশে থেকেছেন, সেই দল আর মনে রাখেনি তাঁকে। খোঁজও নেয়নি, মেলেনি সরকারি স্বীকৃতি কিংবা সাহায্য। নেই মাথা গোঁজার ছাদ বা নিজের নামে এক চিলতে জমি।

দীপক বলেন, “সে দিন প্রাণটা গেলেই শহিদ তালিকায় নাম উঠত। কিন্তু বেঁচে যাই। এটাই হয়ত আমার অপরাধ। হাসপাতালে মৃত্যুর রিপোর্ট, চিকিৎসার কাগজ, সব রেখে দিয়েছি। ভেবেছিলাম, দল অন্তত সম্মান দেবে। কিন্তু কেউ ফিরে তাকায়নি।” তাঁর অনুযোগ, ‘‘তৃণমূল নেতারা কেউ পাশে না দাঁড়ালেও দলবদল করিনি। শুধু স্বীকৃতি চেয়েছিলাম, তা মেলেনি,”— বলার সময় চোখের কোণে জল জমে দীপকের। কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি বিপ্লব দে বলেন, ‘‘বিষয়টি আজকেই নজরে এসেছে। আগামী দিনে অবশ্যই তাঁকে সম্মান দেওয়া হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kalyani

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy