E-Paper

আছড়ে পড়ছে ক্ষেপণাস্ত্র, দেখছেন নদিয়ার ৩৩ যুবক

ইজ়রায়েলের রাজধানী তেল আভিভে রয়েছেন গ্রামের দীপঙ্কর বিশ্বাস, ভরত রায়েরা কয়েক জন। সেখানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্রতা বেশি।

অমিতাভ বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ ০৮:২৮
তেল আভিভে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হানার ছবি, এক নির্মাণকর্মীর মোবাইলে তোলা।

তেল আভিভে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হানার ছবি, এক নির্মাণকর্মীর মোবাইলে তোলা।

তেল আভিভ। নেতানিয়া। আশদোদ। বিরসেভা।

ইজ়রায়েলের এই শহরগুলোর নাম এখন দিঘলকান্দি গ্রামের মানুষের মুখে-মুখে ঘুরছে। আর ঘুরছে হাউইয়ের মতো আকাশ আলো করে উড়ে যাওয়া ক্ষেপণাস্ত্রের কথা।

বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতার লাগোয়া নদিয়ার এই গ্রাম থেকে ৩৩ জন যুবক ইজ়রায়েলে নির্মাণকর্মীর কাজে গিয়েছেন। ছড়িয়ে রয়েছেন নানা শহরে। সাইরেন বাজলে বাঙ্কারে আশ্রয় নিচ্ছেন। ফাঁড়া কাটলে ফিরছেন কাজে। তবে টিভি, সমাজমাধ্যমে যত যুদ্ধের সংবাদ মিলছে, উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছে দিঘলকান্দি।

ইজ়রায়েলের রাজধানী তেল আভিভে রয়েছেন গ্রামের দীপঙ্কর বিশ্বাস, ভরত রায়েরা কয়েক জন। সেখানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্রতা বেশি। শনিবার সেখান থেকেই ফোনে দীপঙ্কর বলেন, “যুদ্ধের মধ্যেও নির্মাণকাজ বন্ধ নেই। সাইরেন বাজলেই আমরা বাঙ্কারে চলে যাচ্ছি। মোবাইলেও প্রতিনিয়ত সতর্কবার্তা আসছে। চোখের সামনে ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে আসতে দেখেছি। শহরে আছড়ে পড়তেও দেখেছি।” ভরত জানান, বিশেষ করে, সন্ধ্যা নামলে হামলার তীব্রতা বাড়ছে।

ভরতের ভাই বাপি রয়েছেন দক্ষিণ ইজ়রায়েলের মরুশহর বিরসেভায়। সেখান থেকে টুটুল বিশ্বাস ফোনে বলেন, “বাপি ছাড়াও, আমাদের গ্রামের গোপাল হালদার, প্রসেনজিৎ রায়, সুব্রত মণ্ডল, বিকাশ পাঠকও এখানে আছে। সবার বাড়ির লোক খুব ভয় পাচ্ছে। তাদের সাহস জোগাতে সুযোগ পেলেই আমরা ফোনে কথা বলছি।” তেল আভিভ থেকে ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর ঘেঁষা আশদোদ শহরে রয়েছেন দিঘলকান্দির নারদ মণ্ডল ও নিশীথ বারুই। ফোনে তাঁরা বলেন, “এখানে বেতন বেশ ভাল। তাই কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে কাজ করতে এসেছি। তবে যুদ্ধের মধ্যে পড়ব, তা ভাবিনি!”

দীপঙ্করের বাবা বলরাম বিশ্বাস বলেন, “ছেলে ফোনে বলছে, ‘চিন্তা নেই, সব ঠিক আছে’। কিন্তু আমি তো বাবা, যুদ্ধের কথা শোনার পরে মন ঠিক থাকে?” ভরত আর বাপির বাবা ভবানী রায় বলেন, “যুদ্ধ শুরু হওয়ায় ওদের মা, স্ত্রী ও নাতি-নাতনিদের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। চিন্তা করে কূলকিনারা পাচ্ছি না।” দিঘলকান্দি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কার্তিক মণ্ডল বলেন, “যে সব পরিবারের লোকজন ইজ়রায়েলে রয়েছে, তারা সকলেই দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সবাইকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি।” করিমপুর ২-এর বিডিও সুপ্রতীক মজুমদার বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত প্রধানের কাছে খোঁজখবর নিচ্ছি। ওঁদের যে কোনও প্রয়োজনে প্রশাসন পাশে থাকবে।”

তবে ইজ়রায়েল জুড়িয়ে ছড়িয়ে থাকা এই যুবকেরা প্রায় সবাই জানাচ্ছেন, এখনই তাঁরা সে দেশ ছাড়ার কথা ভাবছেন না। ভরত বলেন, “ইজ়রায়েল সরকার এবং ভারতীয় দূতাবাস আমাদের সঙ্গে সব সময়ে যোগাযোগ রাখছে। যে কোনও সমস্যার কথা জানাতে বলা হয়েছে। ভয় একেবারে নেই, তা নয়। কিন্তু এখনই দেশে ফিরে যেতে হবে, এমন পরিস্থিতি হয়নি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Iran-Israel Conflict Nadia Missiles

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy