Advertisement
E-Paper

রাতে বাড়িতে হামলা, মারে মৃত্যু যুবকের

গভীর রাতে নওদার গ্রামে এক বাড়িতে হানা দিতে গিয়ে গণপ্রহারে মারা গেল এক দুষ্কৃতী। তার সঙ্গীরা পালিয়েছে। তাদের আক্রমণে বাড়ির চার জন জখম হয়েছেন। তার মধ্যে দু’জনের অবস্থা গুরুতর।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:২৭
হামলায় জখমেরা। —নিজস্ব চিত্র

হামলায় জখমেরা। —নিজস্ব চিত্র

গভীর রাতে নওদার গ্রামে এক বাড়িতে হানা দিতে গিয়ে গণপ্রহারে মারা গেল এক দুষ্কৃতী। তার সঙ্গীরা পালিয়েছে। তাদের আক্রমণে বাড়ির চার জন জখম হয়েছেন। তার মধ্যে দু’জনের অবস্থা গুরুতর।

বুধবার রাতে নওদার রাজপুর গ্রামে সৈয়দ শেখের গ্রামে ওই হামলা হয়। তাঁদের অভিযোগ, বাংলাদেশি ডাকাত বলে পরিচয় দিয়ে ছ’জন হানা দিয়েছিল। বাড়ির লোকেদের হাঁসুয়ার কোপ মেরে নগদ টাকা ও সোনার গয়না লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে তারা। চিৎকার-চেঁচামেচিতে গ্রামের লোক জেগে উঠে ধাওয়া করে এক জনকে ধরে ফেলে পিটিয়ে মারে।

পুলিশ জানায়, মৃতের নাম নুর ইসলাম শেখ (৩০)। বাড়ি নদিয়ার থানারপাড়া থানার চরমুক্তারপুরে। পুলিশের খাতায় সে দাগি অপরাধী। নানা রকম সমাজবিরোধী কাজে ষুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। বাকি ক’জন দুষ্কৃতী ছিল, সে ব্যাপারে ধন্দ রয়েছে পুলিশের। হামলায় আহত, হয়েছেন সৈয়দের ভাই মহিদ শেখ। বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। সৈয়দের ছেলে জিয়ারুল শেখকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ডাকাতি বা পিটিয়ে মারার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি।

নওদার টিঁয়াকাটা বাজার থেকে পশ্চিমে প্রায় সাত কিলোমিটার মাটির রাস্তা গিয়ে বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে রাজপুর গ্রাম। পাশেই সুতি নদী। দু’দিকে ফাঁকা মাঠ। সৈয়দ শেখের কথায়, ‘‘তখন রাত ১২টা বেজে গিয়েছে। আমরা সবাই ঘুমোচ্ছিলাম। সদরের খিল ভাঙা। সেই দরজা দিয়েই সোজা বাড়িতে ঢুকে পড়ে ছ’জন।’’ তাঁদের বর্ণনা অনুযায়ী আগন্তুকদের গায়ে কালো পোশাক, মুখে কালো ফেট্টি। সৈয়দের অভিযোগ, ‘‘ঢুকেই ওরা আমাকে মারে। বলে, ‘তোরা গরু বিক্রি করেছিস। ঘরে টাকা আছে, দে!’ বলেই বাক্সে লাথি মারে। তালা ভেঙে দুল, লকেট, হাতের তাগা আর পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে পালায়।’’

সৈয়দের ছেলে জিয়ারুল শেখের স্ত্রী মুর্শিদা বিবির অভিযোগ, ‘‘বাক্সে সোনার গয়না ছিল। সেগুলোও ওরা ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে।’’ সৈয়দ শেখের আর এক ছেলে মনিরুলের স্ত্রী কুলসুন বিবি বলেন, ‘‘আমার দেড় বছরের ছেলে মেঝেতে মশারির মধ্যে শুয়ে ছিল। ওরা হাঁসুয়া দিয়ে মশারির দড়ি কেটে দেয়। লুঠপাট চালায়।’’

সৈয়দের ছেলে জিয়ারুল শেখ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকে হাঁসুয়া দিয়ে কোপানো হয়। মাঝরাতে হইচই শুনে আশপাশের বাড়ির লোকজন উঠে পড়েছিলেন।

তাঁরা হামলাকারীদের ধাওয়া করেন। সৈয়দের কথা অনুযায়ী, মাঠের মধ্যে দিয়ে প্রায় দু’কিলোমিটার ছুটে এক জনকে ধরেও ফেলেন গ্রামের লোক। নুর ইসলাম শেখ নামে ওই দুষ্কৃতীকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। জিয়ারুল ও মহিদের চোট গুরুতর হওয়ায় তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা ছাড়া সৈয়দ এবং মনিরুল অল্পবিস্তর চোট পেয়েছেন।

কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামের ওই অসচ্ছল পরিবারে কেন ডাকাতেরা হানা দিল, তা নিয়ে কিছুটা ধন্দে পড়েছে পুলিশ। কেননা নদিয়ার চরমুক্তারপুর থেকে নওদার রাজপুর অনেকটা রাস্তা। মাঝে অনেক সম্পন্ন এলাকা পড়ে। সে সব বাদ দিয়ে ডাকাতেরা কেন রাজপুরে হানা দিতে যাবে, তা গ্রামের অনেকেও বুঝে উঠতে পারছেন না। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, হামলার পিছনে অন্য কোনও কারণ ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দলে সত্যিই ছ’জন ছিল কি না, থাকলে কী করে তারা ভোজবাজির মতো মিলিয়ে গেল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, নিহত নুর ইসলামের প্যান্টের পকেটে একটি মোবাইল ফোন মিলেছে। সেটি সৈয়দ শেখের পরিবারের। যে হাঁসুয়া নিয়ে হামলা করা হয়েছিল, সেটিও তাঁদের বাড়িরই। নুর ইসলাম বা চার সঙ্গীরা নিজেরা কোনও অস্ত্র নিয়ে এসেছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। যদি তা এসে থাকে, খালি হাতে এত বড় ঝুঁকি তারা নেবে কেন, তারও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা নেই। নুরের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে নওদা থানা। প্রয়োজনে তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

Miscreants
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy