Advertisement
E-Paper

এ দাদা আলাদা, দাদাগিরি সভাতেই

যেখানে তাঁরা দল বেঁধে বসেন, সেখানেই শুরু হয় ‘বিচার’। ঝিমদুপুর কিংবা ডুমো বাল্‌বের নীচে গাঁ-গঞ্জের সেই মাতব্বরেরা ঠিক করে দেন কার স্ত্রী কার সঙ্গে থাকবে বা কার যৌবনের মেয়াদ কত, কার ইজ্জত থাকবে, কার যাবে। বেআইনি জেনেও তাঁদের ‘রায়’ মাথা পেতে নিতে হয়। নাহলে অপেক্ষা করে আরও বড় শাস্তি। সালিশির সুলুক-সন্ধানে আনন্দবাজারযেখানে তাঁরা দল বেঁধে বসেন, সেখানেই শুরু হয় ‘বিচার’। ঝিমদুপুর কিংবা ডুমো বাল্‌বের নীচে গাঁ-গঞ্জের সেই মাতব্বরেরা ঠিক করে দেন কার স্ত্রী কার সঙ্গে থাকবে বা কার যৌবনের মেয়াদ কত, কার ইজ্জত থাকবে, কার যাবে। বেআইনি জেনেও তাঁদের ‘রায়’ মাথা পেতে নিতে হয়। নাহলে অপেক্ষা করে আরও বড় শাস্তি। সালিশির সুলুক-সন্ধানে আনন্দবাজার

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ০১:১২

গাঁয়ের ছোট্ট বাজার। একপাশে আদ্যিকালের অশ্বত্থ গাছটার নীচে বাঁধানো লাল বেদির রং ক্ষয়ে ক্ষয়ে ধূসর। সেখানেই সকাল-বিকেল জমিয়ে বসতেন গাঁয়ের প্রবীণেরা। বয়স ও অভিজ্ঞতার নিরিখে তাঁদের কথাই মান্য করতেন সকলে। হুঁকোয় লম্বা টান মেরে, ঘাড় নেড়ে, উত্তপ্ত বাগবিতণ্ডায় তাঁরাই বিচার করতেন। সঠিক-বেঠিক নির্ণয়ে তাঁরাই শেষ কথা। চিহ্নিত করতেন দোষীকে। দূর-দূরান্তের গ্রামাঞ্চলে তাঁরাই ছিলেন একাধারে আইন, আদালত ও পুলিশ।

সালিশি সভার সেই চেনা ছবিটা কিছুটা ফিকে হয়ে গেলেও তার দাঁত, নখ এখনও অক্ষত। এখনও গ্রাম্য বিবাদ থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সম্পর্কের টানাপড়েনের চৌহদ্দিতে তার দাপট রয়েছে। কিন্তু অনেক জায়গাতেই নিদানদানকারীদের চরিত্র বদলেছে। গ্রামের লোকজন বলছেন, ‘‘তাঁরা আর শুধু গ্রামীণ প্রবীণ নন। তাঁরা দাদা। আর এ দাদা যে আলাদা, সে কথা তো সবাই জানে। সালিশি সভাতেই চলে তাঁদের দাদাগিরি। হুঁকোর বদলে তাঁদের হাতে জ্বলে দামী সিগারেট। তাঁদের মুখের উপরে কথা বলার সাহস নেই কারও।’’

অভিযোগ, এ ভাবেই রাজনীতির ‘দাদা’রা নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে গাঁ-গঞ্জের মানুষের সামাজিক জীবন। প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে একেবারে হেঁশেল পর্যন্ত। এঁদের কথা না-শুনলে পুলিশও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। এঁরা যে নিদান দেন তা অমান্য করলে রাজনৈতিক দলের কোপে পড়তে হয় বলে অভিযোগ।

এমনই এক সালিশি সভার সাক্ষী থেকেছিলেন নদিয়ার হাঁসখালির মানুষ। বেশ কয়েক বিঘা জমি তিন বছরের জন্য লিজ দেন সেখানকার এক ব্যক্তি। লিজ নেন শাসক দলের এক শিক্ষক নেতা। কিন্তু সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও জমি ছাড়তে রাজি হননি তিনি। ময়দানে নেমে পড়েন রাজনৈতিক দাদারা। ঠিক হয়, গ্রামের সালিশি সভায় সমস্যার মীমাংশা হবে। ‘দাদা’রা নিদান দেন, আরও কয়েক মাস জমির দখল থাকবে শিক্ষক নেতার হাতে। পরিবর্তে জমির মালিক পাবেন ২০ হাজার টাকা।

“এত অল্প টাকা?” প্রতিবাদ করেন জমির মালিক। কিন্তু তাঁর হয়ে বলার মতো আর কাউকে পাননি তিনি। অভিযোগ, সালিশি সভা থাবা বসিয়েছে ভোটের ময়দানেও। ভোটের আগে শাসক দলের কর্মীদের কথা অমান্য করায় মার খেয়েছিলেন নদিয়ার এক ব্যবসায়ী।

অবশেষে এক রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে সভা বসে। তাঁর রায়, ‘‘পুলিশের দরকার কী? ভুলে যাও।’’ চাপের মুখে তা ভুলতেও বাধ্য হয়েছেন সেই ব্যবসায়ী। (চলবে)

Khap Panchayat Law
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy