Advertisement
E-Paper

হতচ্ছাড়া অসুরটাও হেলমেট পরে ঘুরছে

‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কিংবা ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ নিয়ে বঙ্গে হইচই চলছে সেই জুলাই থেকে। কৈলাসে বসে স্মার্টফোনে খবর নিচ্ছিলেন দুগ্গা। তখনই ঠিক করে ফেলেন, বাপের বাড়ি এসে হেলমেট নিয়ে কড়া বার্তা দেবেন। ষষ্ঠীর দুপুরে ঢাক আর কাঁসি যখন খানিক ঝিমিয়ে নিচ্ছে, কিছুটা সময় দিলেন আনন্দবাজারকে। প্যান্ডেলে বসে হাঁ করে শুনলেন, নোটবুকে টুকেও নিয়ে এলেন গৌরব বিশ্বাস। আনন্দবাজার: হঠাৎ হেলমেট নিয়ে পড়লেন কেন? দুগ্গা: হঠাৎ মানে? ব্যাপারটা তো আমায় ভাবাচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। চাদ্দিকে যা অ্যাক্সিডেন্ট হচ্ছে, বাইক চালাচ্ছে সব হাঁ-হাঁ করে, হেলমেট না পরলে তো মরবেই! তাই আর চুপ করে থাকা গেল না।

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১১
কৃষ্ণনগরে তৈরি হয়েছে এই প্রতিমা। নীচে, প্রচার মুর্শিদাবাদে।

কৃষ্ণনগরে তৈরি হয়েছে এই প্রতিমা। নীচে, প্রচার মুর্শিদাবাদে।

আনন্দবাজার: হঠাৎ হেলমেট নিয়ে পড়লেন কেন?

দুগ্গা: হঠাৎ মানে? ব্যাপারটা তো আমায় ভাবাচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। চাদ্দিকে যা অ্যাক্সিডেন্ট হচ্ছে, বাইক চালাচ্ছে সব হাঁ-হাঁ করে, হেলমেট না পরলে তো মরবেই! তাই আর চুপ করে থাকা গেল না।

আনন্দবাজার: তা হলে বলছেন, জুলাই মাসে নজরুল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর এমন নির্দেশের খুব দরকার ছিল?

দুগ্গা: আলবাত। এটা আরও আগে বললে ভাল হত। তবে, বেটার লেট দ্যান নেভার।

আনন্দবাজার: কিন্তু সেই নির্দেশ তো সর্বত্র মানা হচ্ছে না।

দুগ্গা: দ্যাখ, তোদের চিরকাল এই প্রবলেম। নিজের ভাল কোনও দিন বুঝলি না। হেলমেটটা যে প্রাণ বাঁচানোর জন্য, এই সহজ সত্যিটা বোঝার জন্য তো বোদ্ধা হওয়ার দরকার নেই।

(কথার মাঝে ফোন এল সরস্বতীর। দুই বোনে স্কুটিতে চেপে ঘুরতে যেতে চায়। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দুগ্গার কঠোর নির্দেশ— বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। আকাশে মেঘ জমেছে। আর... দু’জনেই কিন্তু হেলমেটটা পরতে ভুলো না!)

দুগ্গা: হ্যাঁ, তো যা বলছিলাম, এই যে নিয়ম হল ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’, কেন হল? যাতে সকলের মাথায় হেলমেট ওঠে। কিন্তু তোরা বাপু কী করলি? না, একের হেলমেট আর এক জন ধার করে কিংবা ভাড়া নিয়ে ছুটলি পেট্রোল পাম্পে। ভাবলি, নিজেরা কত বুদ্ধিমান!

আনন্দবাজার: বাব্বা! এত খবর আপনি রাখেন?

দুগ্গা: তোরা কী ভাবিস, থ্রিজি-ফোরজি সব তোরাই বুঝিস? আমার চার ছেলেমেয়ে প্রচন্ড টেক-স্যাভি। আমি নিজেও এখন নিয়মিত নেট ঘাঁটি। সমস্ত নিউজ আপডেট খুঁটিয়ে পড়ি। আজ, তোদের কাগজেই তো দেখলাম, পুলিশ দাবি করেছে, দুর্ঘটনা আগের থেকে কমেছে।

আনন্দবাজার: আপনি নিজে কী বলছেন?

দুগ্গা: শোন বাছা, দিন চারেকের জন্য এসেছি। আমাকে দিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করাস না। এ সব কচকচানি আমার ভাল্লাগে না। যতক্ষণ লোকে নিজের ভাল নিজে না বুঝবে ততক্ষণ কিস্যু হবে না। আমার দুই মেয়ে অত্যন্ত বাধ্য। গণেশকেও বলার সঙ্গে সঙ্গে হেলমেট পরতে রাজি হয়েছে। কার্তিকটা একটু না-না করছিল বটে, ধমকে দিতে সে-ও হেলমেট রাখছে। হতচ্ছাড়া অসুরটা পর্যন্ত হেলমেট পরে ঘুরছে। তোদের এত অনীহা কেন?

(কথার কথা নয়। কৃষ্ণনগরের শিল্পী রাম পাল এ বারে সপরিবার দুগ্গাকেই হেলমেট পরিয়ে দিয়েছেন। কলকাতার আনন্দপুর আর আর প্লট দুর্গাপূজা কমিটির এ বারের থিমই যে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’।)

আনন্দবাজার: এই যে আপনাদের সব্বাইকে হেলমেট পরিয়ে দেওয়া হল। কেমন লাগছে?

দুগ্গা: (মৃদু হেসে) ভালই তো। মণ্ডপের দেওয়ালে চাট্টি পোস্টার ফেস্টুন টাঙানো থাকে। লোকজন সে ভাবে দেখে না। কিন্তু আমরা সবাই হেলমেট পরে আছি, এটা একটা ব্যাপার তো। লোকে হাঁ করে দেখছে। কিছু কিছু পুজোমণ্ডপ তো আবার শুধু গণেশকেই বেছে নিয়েছে।

আনন্দবাজার: কী রকম?

দুগ্গা: গণেশের মাথার গপ্পোটা তো জানিস! তো, এ বার দেখলাম গণেশ পুজো থেকেই ফেসবুকে গণেশকে নিয়ে হেলমেটের প্রচার চলছে। সে রকমই প্রচার করেছে মুর্শিদাবাদের একটি পুজো কমিটি।

(গণেশকে বলতেই তিনি তড়িঘড়ি মোবাইল থেকে ছবি দেখালেন। দেখা গেল, চোয়াপাড়া তরুণ সঙ্ঘ একটি ফেস্টুনে গণেশের ছবি ছেপেছে। হাতে হেলমেট নিয়ে গণেশ বলছেন—‘আমার ভাগ্য ভাল, এক বার মাথা কেটে বাদ হয়ে গেলেও হাতির মাথা সেট হয়ে গিয়েছে। আপনার কিন্তু সেই সুযোগ নেই। তাই হেলমেট ব্যবহার করুন।’)

আনন্দবাজার: বাঃ, পুরো জমিয়ে দিয়েছে তো!

দুগ্গা: তবে আর বলছি কী! এখন তো সক্কলেই ক্রিয়েটিভ। ফেসবুকে চোখ রাখলেই মালুম হয়, কী প্রতিভা সব! কিন্তু ওই যে বললুম, নিজের ভালটা নিজেকেই বুঝতে হবে।

(কথার মাঝখানে বিকট আওয়াজ। একটু দূরে গোমড়া মুখ করে বসে থাকা অসুরটা পর্যন্ত চমকে উঠেছিল। কী ব্যাপার? বাইক চেপে পুজো দেখতে বেরিয়েছিল বছর বাইশের দুই যুবক। মাথায় হেলমেট ছিল না। রাস্তায় চিতপটাং। হেলমেট কোথায়? মিনমিনে গলায় উত্তর আসে— ‘বাড়িতে।’)

দুগ্গা: (রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে) কথার ছিরি দেখেছ! পুজোর সময় পুলিশ কিছু বলে না, তাই বাবুরা হেলমেট পরেনি। এ বার তো তা হলে পুলিশকেই বলে দিতে হবে, ‘পাহাড় থেকে লাফ মারবেন না, মরে যেতে পারেন। কীটনাশক খাবেন না, মরে যাবেন।’ সব কাজ কি পুলিশের? সব কিছু কি আইন দিয়ে হয়?

আনন্দবাজার: রক্তদান শিবিরে ফ্রি-তে হেলমেট দেওয়ার ব্যাপারটা...

দুগ্গা: হেলমেট কেন? রক্তদানের পরে যে কোনও উপহার দেওয়াতেই আমার আপত্তি আছে। তা ছাড়া, হেলমেট ফ্রি-তে দেওয়া হবে কেন? কাঁড়ি-কাঁড়ি টাকা দিয়ে মোটরবাইক কিনতে পারছিস, আর হেলমেট কিনতেই যত কষ্ট! আই ওন্ট অ্যালাউ দিস.....আর না, এ বার আমার বোধন-টোধন হবে। আর প্রশ্ন করিস না। দেখি মেয়ে দু’টো ফিরল কি না...।

Safe drive save life
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy