Advertisement
E-Paper

অনুদানের ফ্রি-কিকে মাঠ ছেড়েছে ফুটবল

বলটাকে বগলদাবা করে ব্যাজার মুখে মাঠের একটা কোণে দাঁড়িয়ে ছিলেন সুমন দফাদার। ক্লাবের কর্তা থেকে প্রশিক্ষক, সবাই যে বলে দিয়েছেন— ভোট না মিটলে মাঠে খেলা চলবে না বাপু। এখন এসো।

সুজাউদ্দিন ও কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫২
ভোটের আগে এ ভাবেই চলে মাঠ ভরিয়ে সভা। — ফাইল চিত্র

ভোটের আগে এ ভাবেই চলে মাঠ ভরিয়ে সভা। — ফাইল চিত্র

বলটাকে বগলদাবা করে ব্যাজার মুখে মাঠের একটা কোণে দাঁড়িয়ে ছিলেন সুমন দফাদার। ক্লাবের কর্তা থেকে প্রশিক্ষক, সবাই যে বলে দিয়েছেন— ভোট না মিটলে মাঠে খেলা চলবে না বাপু। এখন এসো।

না, কোনও পুজোঠুজো নয়। মাঠে প্যান্ডেল তৈরির জন্য বাঁশ পড়েনি। তবু মাঠজুড়ে মাঝেমধ্যেই ঠুকুর-ঠুকুর ছেনি-হাতুড়ির আওয়াজ। মঞ্চ বাঁধা হচ্ছে মাঝেমধ্যেই। কখনও লালে, কখনও জোড়াফুলে, কখনও আবার রঙ বদলে তেরঙায় সাজছে সেগুলো।

আরে ভোট-উৎসব যে...। মিটিং-মিছিল-সমাবেশ লেগেই রয়েছে।
মাঠ তাই নেতানেত্রীদের দখলে। কখনও আবার তাঁদের গাড়ি-ঘোড়ার। ‘ফলে ও সব টুর্নামেন্ট আপাতত থাক’— হাত তুলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন
ক্লাবের কর্মকর্তারা। না জানিয়ে উপায়ই বা কী? বছরভর সরকারি অনুদান মিলেছে। বিরোধী দলগুলোকে না বলা গেলেও শাসকের বিরুদ্ধে মুখে খোলে সাধ্য কার? আর যাদের অনুদান জোটেনি, এ বছর তারা আরও উঠে পড়ে লেগেছে। নেতাদের সন্তুষ্ট করতে হবে তো। না হলে সামনের বছরের জন্য একটা পাকাপাকি ব্যবস্থা হবে
কী করে?

নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, দু’জেলার প্রায় সব শহরেই একই ছবি। কোথাও ময়দান ফাঁকা নেই, কোথাও আবার কর্তারাই ভোটের কাজে ব্যস্ত।

ব্যাপারটা যে অসত্য নয়, তা এক রকম স্বীকার করে নিয়েছেন মুর্শিদবাদের ক্রীড়া সংস্থাও। হাত কচলিয়ে এক কর্তা বললেন, ‘‘এ জেলায় ভোট মানেই তো আতঙ্ক। এই সময়টা তাই সকলেই কমবেশি এড়িয়ে যেতে চায়। তা ছাড়া মাঠে-ময়দানে সভাসমিতি লেগেই রয়েছে। কখনও আবার হেলিপ্যাড তৈরি করা হচ্ছে। সভার ম্যারাপে মাঠের তো একেবারে দফারফা হয়ে গিয়েছে।’’ আর এক কর্তার সহাস্য মন্তব্য, ‘‘কী আর করা যাবে বলুন, খেলা হোক না হোক, গণতন্ত্রকে তো বাচাঁতেই হবে।’’
তা বটে।

আক্ষেপটা কম নয় ডোমকল স্পোর্টিং ক্লাবের সম্পাদক দেবাংশু সরকারের গলাতেও। তার কথায়, ‘‘কচিকাঁচাদের ফুটবল খেলার জন্য মাঠটাকে আমরা আগলে রাখি। কিন্তু ভোট আসতেই মাঠের দখল নিয়ে নেয় রাজনৈতিক দলগুলো। ডোমকলের জনকল্যাণ মাঠ লাগোয়া তিনটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়। ফলে ভোট এলেই মাঠের চেহারা বদলে যায়। ছেলেদের খেলা বন্ধ করা ছাড়া আর উপায় কী!’’ দিন কয়েক বল হাতে এলেও, খুদেরা এখন বুঝে গিয়েছে রাজনীতির কচকচি।

ক্লাবের প্রশিক্ষক সান্টু চৌধুরী বলেন, ‘‘এই সময়টা ফুটবলের জন্য আদর্শ। সেই ঘাম প্যাঁচপ্যাঁচে গরমটা এখনও পড়েনি। বর্ষার চোখরাঙানিও নেই। অথচ এমন সুযোগ মার খাচ্ছে শুধু মাত্র ভোটের জন্য। কোনও মানে
হয় বলুন...?’’

করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার অধীনে প্রায় ৫০টা ক্লাব। অধিকাংশই ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু ভোটের গেরোয় পড়ে মাঠে নামা বন্ধ হয়েছে তাদেরও। কেবল মাঠ নয়, কোথাও ক্লাবকর্তা এমনকী খেলোয়াড়ও ভোটের কাজে গা ঘামাতে ব্যস্ত।

করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সহ-সম্পাদক দীপঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রীড়াসূচি অনুযায়ী, এপ্রিলের প্রথম থেকে ফুটবল লিগ শুরুর কথা। কিন্তু এ বার তো ভোট। রাজনৈতিক দলগুলো সভার অনেক আগে থেকে ম্যারাপ বাঁধা শুরু করে দেয়। সমাবেশ হয়ে যাওয়ার পর ম্যারাপ খুলতেও সময় নিয়ে নেয়।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘যদি বা ‘প্যান্ডেল’ খোলা হল, মাঠের তো দফরফা। একগাদা গর্ত। খানাখন্দ বোজানোর বেলায় আর লোক নেই। ছেলেগুলোকে খেলাতে নামাব কী করে! যে কোনও সময় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে।’’

কী বলছে খেলোয়াড়রা?

অনুর্ধ্ব ১৬ দলের রাহুল শেখের কথায়, ‘‘মাঠ তো সরকারি। তাই ওটা এখন অলিখিত ভাবে হয় নেতাদের গাড়ি-পার্কিংয়ের জায়গা নয়তো হেলিপ্যাড গ্রাউন্ড।’’ আর এক খেলোয়াড় সৌভিক সরকার বলল, ‘‘এখন তো কিছুই না। ভোট মিটতে না মিটতে বর্ষা এসে যাবে। তখন যে মাঠের কী হবে! এ বছর ফুটবলের দফারফা হয়ে গেল।’’

ডোমকল ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ধীমান দাসের মুখে উঠে এল
সেই অনুদানের গল্প। তাঁর কথায়, ‘‘এ সব মাঠ দখল কোনও নতুন কিছু নয়। ভোট এলেই এই সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু এ বার মরশুমের একদম শুরুতেই...। অনুদান পাওয়া ক্লাবগুলো খেলা ছেড়ে ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছে। আর বাকি ক্লাবগুলো
আগামী বছর অনুদান পাওয়াটা নিশ্চিত করতে চাইছে।’’

ভোট-উৎসবে তাই খেলার মাঠ গিয়েছে ‘চুরি’। নেতাদের ফ্রি-কিকে আপাতত মাঠের বাইরে ফুটবল। প্রতীক হাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা— ভোট দিন ভোট দিন...।

campaign election Adhir Ranjan Chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy