Advertisement
E-Paper

চর জাগলেই তটস্থ প্রশাসন

এক পাড় ভাঙে, আর এক পাড় গড়ে। জাগে নদীর চর। শুরু হয় চর দখলের লড়াই। বরাবর এমনটাই হয়ে এসেছে। এ বারও ঠিক সেটাই ঘটল। রক্তপাতের সাক্ষী থাকলে এ পাড়ের সাহেবডাঙা আর ও দিকের বলাগড়।

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৫

এক পাড় ভাঙে, আর এক পাড় গড়ে। জাগে নদীর চর। শুরু হয় চর দখলের লড়াই।

বরাবর এমনটাই হয়ে এসেছে। এ বারও ঠিক সেটাই ঘটল। রক্তপাতের সাক্ষী থাকলে এ পাড়ের সাহেবডাঙা আর ও দিকের বলাগড়।

শনিবারের সেই ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন রানাঘাটের সাহেবডাঙার লক্ষ্মীকান্ত বিশ্বাস ও হেমন্ত মণ্ডল। মঙ্গলবার মিলেছিল লক্ষ্মীকান্তের দেহ। হেমন্তের দেহটার খোঁজ পেতে আরও দু’টো দিন গড়িয়ে গেল। বৃহস্পতিবার সকালে বলাগড় ঘাটে মিলল।

ভাগীরথীর যে চর নিয়ে হুগলির বলাগড় এবং রানাঘাটের সাহেবডাঙা এলাকার এত গণ্ডগোল, সেই এলাকাটা এখন থেকে হুগলির, সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে দুই জেলার প্রশাসন। মঙ্গলবার দুই জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকরা চরে গিয়েছিলেন। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। বুধবার নদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অভিজিৎ ভট্টাচার্য জানান, তিনি নিজে ওই চরে গিয়েছেন। সমস্ত মাপজোকের পরে এটা পরিষ্কার যে, ওই চর হুগলি জেলার মধ্যেই পড়ছে। তবে, সে জমি কোনও ব্যক্তির নয়, খাস জমি। কারা ওই জমি পাবে বা কী ভাবে বণ্টন হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে হুগলি জেলা প্রশাসন।

দীর্ঘদিন ধরেই এই সিদ্ধান্ত ঝুলে ছিল। চাকদহ এবং রানাঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙন কবলিত। প্রতি বছরই কোনও না কোনও এলাকা ভেঙে চর জাগে। আর মাঝেমধ্যেই চরের দখল নিয়ে গণ্ডগোল শুরু হয়।

গত শনিবার দু’পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ার পরেই তড়িঘড়ি এই চরটি নিয়ে আলোচনায় বসেন কর্তারা। তবে এতে সমস্যা মিটবে না বলেই মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কারণ, সাহেবডাঙার লোকজনের দাবি, তাঁদের এলাকার পাড় ভেঙে ও-দিকে চর জেগেছে। ফলে সেই চরে তাঁদেরই অধিকার।

ঘটনার সূত্রপাত বছর চারেক আগে। সাহেবডাঙা এলাকায় কয়েকশো বিঘা জমি ভাগীরথীতে তলিয়ে যায়। বছর ঘুরতে না ঘুরতে ও-পাড়ে বলাগড়ের দিকে চর জেগে ওঠে। এ-দিকের বাসিন্দাদের যুক্তি, যে হেতু তাঁদের এলাকা ভেঙে ও-পাড়ে চর জেগেছে, তাই ওই চরে তাঁরাই চাষ করবেন। গত দু’বছরে বার কয়েক চাষ শুরুও করেছিলেন তাঁরা। অভিযোগ, ও দিকের বাসিন্দারা কখনও তাঁদের ফসল নষ্ট করে দেয় তো কখনও তাঁদের তাড়া করে হটিয়ে দেয়। শনিবারও তাঁরা চরে গিয়ে চাষের তোড়জোড় শুরু করতে ও-পাড়ের বাসিন্দারা তাড়া করে। তাঁরা রুখে দাঁড়ালে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সাহেবডাঙার জনা কুড়ি বাসিন্দা জখম হন। খোঁজ মিলছিল না লক্ষ্মীকান্ত ও হেমন্তের। মিলল বটে। তবে দেহ।

ফলে প্রশাসনের আশঙ্কা, বৈঠক করে যতই আলোচনা হোক না কেন, তুষের তলায় ধিকিধিকি আগুন জ্বলছেই। যে ভাবে বেঘোরে দু’টো প্রাণ চলে গেল, তাতে পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে বলে ভয়ে প্রশাসন। হেমন্ত মণ্ডলের দু’টি নাবালক ছেলে। সংসারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য বলতে ছিলেন তিনিই। এই অবস্থায় নদিয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওই চরের উপরে তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।

এই পরিস্থিতিতে বলাগড়ের বাসিন্দারা যদি ওই জমিতে চাষ করতে নামে, তা হলে ফের সংঘর্ষ বাঁধল বলে।

Errosion River Ganga
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy