কলেজে কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র
দশ মিনিটে দক্ষিণা বেড়ে গেল দশ হাজার টাকা!
প্রথমে ঠিক ছিল ভূগোল অনার্স নিয়ে ভর্তি হতে ‘দাদা’কে দিতে হবে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের দশ মিনিট পরে যোগাযোগ করায় দশ হাজার বাড়িয়ে দিলেন দাদা। দাবি, ২৫ হাজার। পুরো টাকা দিলে তবেই ভর্তি পাকা।
নদিয়ার একটি কলেজে ভর্তি হতে আসা এক ছাত্রের দাদাকে ফোনে বলা হয়েছে, অন্য এক জনের আসন খালি করে তাঁর ভাইকে ভর্তি করতে হবে। দরাদরি করলেই বেড়ে যাবে ‘রেট’। টেলিফোনের গলা বলছে— “স্যার বলেছেন, এর কমে হবে না।”
সংবাদমাধ্যমের হাতে চলে আসা এই ‘ভয়েস রেকর্ড’ নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন শাসক দলের অনুগামী ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র নেতারা। জেলা সভাপতি অয়ন দত্ত বলেন, ‘‘ওই ভয়েস রেকর্ড আসল না নকল, এ সব বিরোধীদের চক্রান্ত কি না, তা-ও তো দেখতে হবে।’’
হক কথা! এই ‘ফেক নিউজ়’-এর জমানায় পরীক্ষা না করে কিছুই কি বিশ্বাস করা যায়?
যদিও শাসক দলেরই অনেকে মেনে নিচ্ছেন, কলেজে-কলেজে টাকা তোলার অভিযোগ অনেকটাই সত্যি। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ আশুতোষ কলেজে হানা দেওয়ার পরে মঙ্গলবার থেকে ‘দাদা’রা কিছুটা সমঝে চলছেন ঠিকই। কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক শান্তনু সিংহের অভিযোগ, “প্রতিটি কলেজেই ভর্তির জন্য টাকা নিচ্ছে টিএমসিপি-র ছেলেরা। কলেজ ও অনার্সের বিষয় অনুযায়ী ১০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।”
কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে এ দিন ভর্তির ব্যাপার না থাকলেও কলেজের গেটে বেঞ্চ পেতে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের দাদাদের। সংসদ ভবনের সামনে ছোট ছোট জটলা। শোনা গিয়েছে আশ্বাস— ‘‘বলেছি যখন, হয়ে যাবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী পদাঙ্ক অনুসরণ করে এ দিনই কৃষ্ণনগরের দু’টি কলেজে হঠাৎ হাজির হন কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। প্রথমে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ, সেখান থেকে কৃষ্ণনগর দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজে গিয়ে তিনি অধ্যক্ষ ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন। যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তাকে কিন্তু কেউ বাঁচাতে পারবে না।”
মন্ত্রী জানান, কৃষ্ণনগরে এক পলিটেকনিক কলেজে ভর্তির জন্য হাঁসখালি থেকে আসা এক ছাত্রের থেকে মোটা টাকা চাওয়া হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল কলেজের বেশ কিছু পড়ুয়া তাঁকে ঘিরে অভিযোগ করেন, বহিরাগত কিছু যুবক কলেজে ঢুকছে। তারাই যা করার করছে। মন্ত্রী এ নিয়ে অধ্যক্ষকে সতর্ক করেন।
পুলিশ কর্তাদের একাংশের ধারণা, মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির ফলে ‘দাদা’রা আপাতত দু’চার দিন সংযত থাকবে। তবে পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “সমস্ত কলেজেই পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।”
টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অবশ্য দাবি করেন, “সর্বত্র স্বচ্ছ ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে, সাংগঠনিক ভাবে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy