Advertisement
E-Paper

কোয়েলকে মেরে মালা গাঁথছিল রাধাকান্ত

পাঁচ বছরের কোয়েলকে খুন করে বাড়ি ফিরে গাঁদার মালা গেঁথেছিল রাধাকান্ত। একটা-দু’টো নয়, কুড়িটা। তার পরে আবার ফিরে গিয়েছিল মৃতদেহের কাছে।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৫৪
থানা থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অভিযুক্তকে। নিজস্ব চিত্র।

থানা থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অভিযুক্তকে। নিজস্ব চিত্র।

পাঁচ বছরের কোয়েলকে খুন করে বাড়ি ফিরে গাঁদার মালা গেঁথেছিল রাধাকান্ত। একটা-দু’টো নয়, কুড়িটা। তার পরে আবার ফিরে গিয়েছিল মৃতদেহের কাছে।

পুলিশের দাবি, খুনে ধৃত রাধাকান্ত বিশ্বাস জেরায় নিজেই এই কথা কবুল করেছে। সোমবার সকালে কৃষ্ণনগর আদালতে তোলা হলে তাকে ১০ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ইতিমধ্যে সে বয়ান বদলে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা শুরু করেছে বলে তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন।

রবিবার বর্ধমানের উজিরপুরে পিসির বাড়ি থেকে রাধাকান্তকে পাকড়াও করে পুলিশ। তার আগে দু’দিন সে বেপাত্তা ছিল। পুলিশের দাবি, জেরায় সে জানিয়েছিল, গ্রামের এক নির্মীয়মাণ বাড়িতে তাকে হস্তমৈথুন করতে দেখে ফেলায় লোক জানাজানি হওয়ার ভয়েই সে কোয়েল বৈদ্যকে খুন করেছিল। পরে মৃতদেহটি ধর্ষণ করে রক্তের দাগ মুছে দেয়।

এ দিন কিন্তু সেই বয়ান কিছুটা বদলে গিয়েছে। থানা সূত্রের খবর, এ দিন রাধাকান্ত দাবি করতে থাকে, সে ধর্ষণ করে খুন করেছিল, খুন করে ধর্ষণ নয়। যদিও তার আগের বয়ান ইতিমধ্যেই আদালতে পেশ করে দিয়েছে পুলিশ।

কিন্তু কেন এই বয়ান বদল?

তার প্রধান কারণ, এর আগে যে বয়ান রাধাকান্ত দিয়েছিল, তা নিয়ে পুলিশের খটকা। যেমন, পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা হস্তমৈথুনের কী বোঝে যে সেই ভয়ে তাকে প্রথমে হুমকি দিতে হবে, পরে খুন করতে হবে, তা অফিসারদের বোধগম্য হচ্ছিল না। পুলিশের দাবি, এই প্রশ্নের মুখে পড়ে রাধাকান্ত এ দিন বলতে থাকে, সে কুলের টোপ দিয়ে মেয়েটিকে ওই বাড়িতে ডেকে নিয়ে হগিয়ে ধর্ষণ করে। তার পরে খুন করে ফেলে দেয়।

ধোঁয়াশা অবশ্য এক জায়গাতেই নয়। বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। প্রথমত, ধর্ষণ আদৌ হয়েছিল কি না, তা নিয়েই নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। ধন্দ থাকায় জেলায় ময়নাতদন্ত না করে দেহটি কলকাতায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল হাসপাতালে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, মৃতদেহের কাছে পাওয়া কনডোমের ছেঁড়া প্যাকেট নিয়েও ধোঁয়াশা ছিল। যদি ধরেও নেওয়া যায় যে ওই কনডোম পরে শিশুটিকে ধর্ষণ করেছিল রাধাকান্ত, বছর বিশেকের অবিবাহিত যুবকের কাছে কন়ডোম কেন থাকবে, তা নিয়ে ধন্দ ছিল। তবে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, রাধাকান্তের সঙ্গে তার এক নিকট আত্মীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। দিন কয়েক আগে দু’টি কনডোম ব্যবহার করে সে। আর একটি প্যাকেট তার পকেটেই ছিল।

কোয়েলকে খুন করার পরে কী করল রাধাকান্ত?

পুলিশের দাবি, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্মীয়মাণ বাড়ির ভিতরে শিশুটির মৃতদেহ ফেলে রেখে বাড়ি চলে যায় রাধাকান্ত। এমনিতে সে দিনমজুরের কাজ করলেও হাতে কাজ না থাকলে মালা গেঁথে বেথুয়াডহরি বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রিও করত। সে দিন বাড়ি ফিরে সে কাউকেই কিছু বুঝতে দেয়নি। ঘরের দাওয়ায় বসে মা-ঠাকুমার সঙ্গে গল্প করতে করতে মালা গাঁথতে থাকে। অন্য দিন ২৫- ৩০টা মালা গাঁথে। সে দিন বিশটা গেঁথেই সে উঠে ফের চলে গিয়েছিল মৃতদেহের কাছে। খুনের প্রায় চার ঘন্টা পরে রাতের অন্ধকারে শিশুটির মৃতদেহ তুলে প্রায় দেড়শো মিটার দূরে লেবু বাগানে নিয়ে যায় সে।

মৃতদেহটাকে কি সে ফের ধর্ষণঁ করেছিল? পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, রাধাকান্ত এক বার বলছে ‘হ্যাঁ’, এক বার বলছে ‘না’। যদি সে দেহটি ধর্ষণ না-ই করে থাকে, তা হলে নির্মীয়মাণ বাড়ির বদলে লেবু বাগানে কনডোম পড়ে ছিল কেন? বিষয়টি স্পষ্ট করে বুঝতে পুলিশ রাধাকান্তকে দফায়-দফায় জেরা করছে। কিন্তু সে অনেকটাই অবিচলিত।

সত্যি বলতে, ঘটনার পরেও অনেকটাই নির্বিকার ছিল রাধাকান্ত। লেবু বাগান থেকে বাড়ি ফিরে রাতের খাওয়া সেরে সে যথারীতি ঘুমিয়ে পড়েছিল। পরের দিন সকালে দাঁত মাজতে-মাজতে রাস্তার পায়চারিও করে। পাড়াপড়শিরা যখন মৃতদেহটি দেখতে ভিড় করে, তখন সে-ও ভিড়ের ভিতরে মিশে দেহটি দেখে এসেছিল। কিন্তু পাড়ার লোকজন পুলিশ কুকুর নিয়ে আলোচনা শুরু করতেই সে ভয় পেয়ে যায়। সকলে বলাবলি করছিল, কুকুরই গন্ধ শুঁকে অপরাধীকে ধরিয়ে দেবে। এর পরেই বাড়ি ফিরে মাঠ থেকে আলু তুলতে যাচ্ছে বলে সে ফের বেরিয়ে পড়ে। তার মধ্যে পুলিশের আনাগোনা শুরু হয়ে যাওয়ায় সে আর বাড়ির ফেরার ঝুঁকি নেয়নি। পিসির বাড়িতে গিয়ে সে গা ঢাকা দেয়।

জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘ধরার পরে প্রথমে কিছুই বলতে চাইছিল না ছেলেটি। পরে জেরার মুখে ভেঙে পড়ে গড়গড় করে বহু কিছু বলে। কিন্তু এ দিন সকাল থেকে সে নানা ভাবে বিভ্রান্ত করতে শুরু করেছে।’’ নদিয়ার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধৃত খুন ও যৌন নির্যতনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে এবং ধৃতকে দিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানোর পরে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।’’

MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy