Advertisement
E-Paper

কান্না-উপোস, অবিশ্বাসে কাটল দিন

শুক্রবার রাত তেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত যে ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কারও বাড়িতেই রবিবার সারা দিন খাওয়াদাওয়া হয়নি। মোশারফের বাড়িতে রান্না করা ভাত থালায় বেড়ে রাখলেও কেউ মুখে তুলতে পারেননি। 

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:১৫
সুফিয়ানের বাড়িতে নজর এলাকার বাসিন্দাদের। রানিনগরের কালীনগরে।  ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সুফিয়ানের বাড়িতে নজর এলাকার বাসিন্দাদের। রানিনগরের কালীনগরে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

এনআইএ-র গোয়েন্দাদের অভিযানের পর কেটে গিয়েছে একটা দিন। এখনও রানিনগরের কালীনগর, ডোমকলের জয়রামপুর, নওদাপাড়া, গঙ্গাদাসপাড়া, জলঙ্গির ঘোষপাড়া, মধুবোনা— সর্বত্র একই চিত্র। রাস্তার মোড়ে মোড়ে জটলা। আলোচনার বিষয় অবশ্য একটাই—পাড়ার নিরীহ ছেলেটা ভিন রাজ্যে গিয়ে কী করে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ল! কেউ কেউ আবার এর মধ্যে ‘চক্রান্তের’ গন্ধও পেয়েছেন।কালীনগরের বাসিন্দা মুর্শিদ হাসানের গ্রেফতারির খবরে বিস্ময় কাটছে না তাঁর বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীদের। বছর উনিশের ওই তরুণের বাড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকেন সাগির হোসেন। বাইশের যুবক রবিবার বলছিলেন, ‘‘কেরলে চলে যাওয়ার আগেও একসঙ্গে দু’জন পাড়ার মাঠে কত ফুটবল খেলেছি। খেলাধুলোয় মেতে থাকলেও পরিবারের দায়দায়িত্বের কথাও ভুলত না কখনও। ওর নাবালিকা বোন যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সেই জন্য দ্রুত কোনও কাজে নেমে পড়ার কথাও প্রায়ই বলত। কী জানি হয় তো সেই জন্যই কেরলে চলে গিয়েওছিল। বেকার হয়ে যাওয়ার ভয়ে লকডাউনে গ্রামে ফেরেনি। সেই ছেলের এভাবে জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে গ্রেফতার হওয়া বিশ্বাস করা কঠিন বইকী!’’একই সুর সন্দেহভাজন জঙ্গি হিসেবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে ধৃত ঘোষপাড়ার মোশারফ হোসেন, মধুবোনার মইনুল মণ্ডলের পরিচিতদের। এদিন ওই দুই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, দু’জনের বাড়িতেই আত্মীয়দের ভিড়। রয়েছেন পড়শিরাও। মোশারফের পড়শি সাইফুল মণ্ডল বললেন, ‘‘নিপাট ভদ্র ছেলে বলতে যা বোঝায় মোশারফ তা-ই। অনটনের জন্য কেরলে গিয়েছিল। যদি জঙ্গিদের সঙ্গেই যুক্ত হবে, তবে তো এখানে থেকেই ও তা করতে পারত।’’ শুক্রবার রাত তেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত যে ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কারও বাড়িতেই রবিবার সারা দিন খাওয়াদাওয়া হয়নি। মোশারফের বাড়িতে রান্না করা ভাত থালায় বেড়ে রাখলেও কেউ মুখে তুলতে পারেননি।

স্বামীর গ্রেফতারির পর থেকেই একেবারে চুপ করে গিয়েছেন মইনুলের স্ত্রী মাফরোজা বিবি। সারারাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। কেঁদে কেঁদে চোখের কোনে জল শুকিয়ে গিয়েছে। আঁচলে মুখ ঢেকে তরুণী বললেন, ‘‘চার বছর বিয়ে হয়েছে। আমার স্বামী কোনও কথা আমার কাছে আজ পর্যন্ত কোনওদিন লুকোয়নি। আজই বিমানে ওর কেরলে যাওয়ার কথা ছিল। ও জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়বে, এ কথা বিশ্বাস করি না।’’ রবিবার সারাদিন উনুন জ্বলেনি আল মামুন কামালের বাড়িতে। প্রতিবেশীরা খাবার দিয়ে গেলেও তা দাঁতে কাটেননি মামুনের স্ত্রী আসুয়ারা বিবি। দেড় বছরের ছেলেকে সামলানোর ফাঁকেই বলছিলেন, ‘‘পুলিশ একটা ধর্মীয় বই আর মোবাইল ছাড়া বাড়িতে তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছু পায়নি। জঙ্গি বলে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেল। ওকে ফাঁসানোই হয়েছে।’’

Terrorism Sufian Murshidabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy