Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

রাতভর বিক্ষোভে ভেস্তে গেল ফুটবল

‘‘কেয়া হোনা থা, অওর কোনসা খেল্ হো গয়া (কী হওয়ার কথা ছিল, আর কী হল)’’— মাঠে নামতে না পারার আক্ষেপ কিছুতেই যাচ্ছিল না উপাচার্য রতনলাল হাংলুর।

ছাত্র বিক্ষোভের জেরে বন্ধ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

ছাত্র বিক্ষোভের জেরে বন্ধ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

সৌমিত্র সিকদার
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৫ ০০:১৭
Share: Save:

‘‘কেয়া হোনা থা, অওর কোনসা খেল্ হো গয়া (কী হওয়ার কথা ছিল, আর কী হল)’’— মাঠে নামতে না পারার আক্ষেপ কিছুতেই যাচ্ছিল না উপাচার্য রতনলাল হাংলুর।

বুধবার সকাল থেকে রাত পেরিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল, প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়েরই একাংশ পড়ুয়ার হাতে ঘেরাও হয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ডিন থেকে শুরু করে জনা কুড়ি আধিকারিকও। বৃহস্পতিবার বিধ্বস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সকলে।

কিন্তু, এমনটা তো হওয়ার ছিল না। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক মজবুত করতে এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা ছিল। সে ব্যাপারে সবচেয়ে উৎসাহ দেখিয়েছিলেন উপাচার্য রতনলাল হাংলু নিজেই। সকলের সঙ্গে কথা বলে ঠিক হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে চারটি দলে ওই খেলা হবে। উপাচার্য একাদশ, রেজিস্ট্রার একাদশ, রিসার্চ স্কলার একাদশ এবং ছাত্র একাদশ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, মাঠ সাফ সুতরো করা হয়েছিল। তৈরি হয়ে গিয়েছিল টিমও। কিন্তু, কোথায় কী!

খেলা অনির্দিষ্ট কালের জন্যে পিছিয়ে গিয়েছে। কিন্তু, যে উদ্দেশে খেলা হওয়ার কথা ছিল, তার কী হল? এমন বিক্ষোভ, শ্লোগানে ছাত্রশিক্ষক সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে না তো, তৈরি হয়েছে সে আশঙ্কাও। টানা বিক্ষোভের জেরে এ দিন পঠনপাঠনে রীতিমতো প্রভাব পড়েছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু ক্লাস হলেও অধিকাংশ বিভাগেই ক্লাস হয়নি। প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজেও। নদিয়া-মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত জায়গা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা পড়ুয়াদের ফিরে যেতে হয়েছে, এমন ছবিও রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, উপাচার্যের ঘরের সামনে জনা কুড়ি ছেলে বসে রয়েছে। মাঝে মধ্যেই চলছে শ্লোগান, ‘বর্ধিত ফি দিচ্ছি না, দেব না!’ চলছে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে রকমারি শ্লোগানও। গ্রিলের একপাশে দাঁড়িয়ে ছাত্রেরা যখন এ সব করছে, উল্টেো দিকে তখন দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ডিন-অধ্যাপক ও নিরাপত্তা রক্ষীরা। সাড়ে আটটা নাগাত কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ডিন আন্দোলনরত ছাত্রদের উদ্দেশে জানান, তাঁদের দাবি শিক্ষামন্ত্রীকে লিখিত জানাতে। সে কথায় অবশ্য কান দেয়নি পড়ুয়ারা। এরপরে ন’টা নাগাদ শুরু হয় সাংবাদিক সম্মেলন।

ততক্ষণে ক্যাম্পাসে রটে গিয়েছে উপাচার্য পদত্যাগ করছেন। একই কথা যখন উপাচার্য নিজের মুখে সাংবাদিকদের সামনে ঘোষণা করেন, তখন দেখা যায় পড়ুয়াদের সংখ্যা কমছে। একটা সময় প্রশাসনিক ভবনের দোতলা থেকে নীচ তলায় চলে যায় বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা। সাড়ে ন’টা নাগাদ সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে ছাত্রদের সামনে দিয়েই উপাচার্য বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। তা চাউর হতেই দশটা নাগাদ পড়ুয়ারা গিয়ে মেন গেট আটকে দেয়। ফের শুরু হয় বিক্ষোভ। তবে বিক্ষোভরত ছাত্রেরা প্রথমে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করলেও পরে সেই দাবি থেকে সরে আসে। শ্লোগান ওঠে, ‘উপাচার্যের পদত্যাগ নয়, ভর্তি ফি কমাতে হবে।’

এ দিকে, মেন গেট আটকে যাওয়ায় আটকে পড়েন পডু়য়ারা। পড়ুয়াদের কেউ কেউ প্রধান গেট আটকে দেওয়ায় ক্ষোভ জানান। এঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘সামর্থ্য আছে, এমন পড়ুয়ারা কেন বর্ধিত ফি দেবে না? দুঃস্থ পড়ুয়াদের জন্যে ভর্তি ফি-তে ছাড়ের সুযোগ তো রয়েছেই!’’ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও দাবি, এ দিনের বিক্ষোভে যোগ দেওয়া পড়ুয়ারা সংখ্যালঘু। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বড় অংশের পড়ুয়াদের তাতে মত নেই। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পড়ুয়া নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে ভর্তিও হয়েছেন।’’

এ দিন সন্ধে অবধি বর্ধিত ফি কমানো হবে কিনা, সে ইঙ্গিত মেলেনি। বিক্ষোভে সামিল পড়ুয়ারা জানালেন, ‘‘সামনে টানা তিন ছুটি থাকায় সোমবার ফের তাঁরা একই দাবিতে আন্দোলনে নামবেন।’’

আশঙ্কাটা থেকেই গেল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

football team agitation kalyani nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE