Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছ’মাস বন্ধ ক্লাস, স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভে ছাত্রীরা

প্রায় ছ’মাস স্কুলে ক্লাস হচ্ছে না। শৌচাগার ব্যবহারের অযোগ্য। সঙ্কট পানীয় জলের। বন্ধ মিড-ডে মিলও। দীর্ঘ দিন থেকেই করিমপুর ২ ব্লকের মুরুটিয়ার বালিয়াডাঙা এনপিএম বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলছিলেন অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।

ব্লক প্রশাসনের এক কর্তাকে ঘিরে অভিযোগ জানাচ্ছে ছাত্রীরা। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।

ব্লক প্রশাসনের এক কর্তাকে ঘিরে অভিযোগ জানাচ্ছে ছাত্রীরা। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুরুটিয়া শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৫ ০০:২০
Share: Save:

প্রায় ছ’মাস স্কুলে ক্লাস হচ্ছে না। শৌচাগার ব্যবহারের অযোগ্য। সঙ্কট পানীয় জলের। বন্ধ মিড-ডে মিলও।

দীর্ঘ দিন থেকেই করিমপুর ২ ব্লকের মুরুটিয়ার বালিয়াডাঙা এনপিএম বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলছিলেন অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। এ বার নিয়মিত পঠন-পাঠনের দাবিতে স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখাল ছাত্রীরা। বুধবার দুপুরের ওই ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। ছাত্রীরা এ দিন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরেই তারা আশ্বাস শুনছে। কিন্তু পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রশাসন কিছুই করছে না। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা স্কুলের তালা খুলবে না।

কিন্তু এমনটা চলতে থাকলে তো পড়াশোনার ক্ষতি হবে। বেশ কয়েকজন ছাত্রীর কথায়, ‘‘পড়াশোনা তো এমনিতেই হচ্ছে না। শেষ কবে ক্লাস হয়েছে সেটাই মনে নেই। এ ভাবে স্কুল বন্ধ রেখে যদি প্রশাসনের টনক নড়ে!’’ সীমান্তঘেঁষা বালিয়াডাঙার ওই স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় এক হাজার। শিক্ষিকা ও পার্শ্বশিক্ষিকা আছেন মোট ১৬ জন। স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন থেকেই স্কুলে কোনও ক্লাস হচ্ছে না। স্কুলে নিয়ম-শৃঙ্খলা নেই। শিক্ষিকারা নিয়মিত ক্লাসও নেন না। ফলে সারাদিন ছাত্রীরা স্কুলে হইচই করে বাড়ি চলে যাচ্ছে। প্রায় ন’মাস স্কুলের মিড ডে মিল বন্ধ রয়েছে। মিড ডে মিলের বস্তা বস্তা চাল পচে নষ্ট হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির কথা স্থানীয় প্রশাসন, স্কুল পরিদর্শকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু কেউই স্কুলের ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কিছুই করেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা তথা অভিভাবক বুলুরানি ঘোষ বলেন, “মেয়ে এই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাস হচ্ছে না বলে মেয়ে স্কুলেও আসতে চাইছে না।” আর এক অভিভাবক বুদ্ধদেব হালদার বলেন, ‘‘সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা। অথচ স্কুলে এমন পরিবেশ চলতে থাকলে সেটা তো উদ্বেগের।” নবম শ্রেণির সাখিনা খাতুন, ব্রততী দত্ত, শিল্পী মণ্ডলদের কথায়, ‘‘আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশনের ফর্ম ফিল-আপ করেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার স্বাক্ষর না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছি।’’ দশম শ্রেণির ছাত্রী হাসিনা খাতুন, বর্ণালী কর্মকার বলে, ‘‘আর মাস কয়েক পরেই স্কুলের ১৪২ জন ছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসব। অথচ স্কুলে কোনও অঙ্ক শিক্ষিকা না থাকায় একদিনও অঙ্কের ক্লাস হয়নি।’’

স্কুলের এমন অবস্থা হল কেন?

এক শিক্ষিকার কথায়, ‘‘বছর তিনেক আগে এই রীতা দাস নামে এক শিক্ষিকা টিচার ইন-চার্জ হিসাবে দায়িত্ব নেন। তারপর থেকেই গোলমাল শুরু হয়।’’ কী রকম? ওই শিক্ষিকার কথায়, ‘‘রিতাদেবীর সময়ে কোনও অডিট হয়নি। পরে স্কুলের হিসেবে বহু গরমিল ধরা পড়েছে। যে কারণে নভেম্বর মাস থেকে মিড ডে মিলও বন্ধ রয়েছে। এটা জেলা স্কুল পরিদর্শক থেকে শুরু করে জেলাশাসক সকলেই জানেন। অজ্ঞাত কারণে কেউ কিছু করছেন না।’’

ছাত্রীদের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন শিক্ষিকারাও। স্কুলে টিচার ইনচার্জ নিয়মিত না আসায় তাঁরাও গত চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। গত ২৯ জুলাই টিচার ইনচার্জ রীতাদেবীর সঙ্গে বৈঠক করেন তেহট্টের মহকুমাশাসক, জেলা স্কুল শিক্ষা পরিদর্শক ও প্রশাসনের আধিকারিকেরা। সেই বৈঠকে বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও পর্যন্ত শিক্ষিকারা বেতন পাননি বলেই অভিযোগ। সহকারি শিক্ষিকা ঝুমা বিশ্বাস জানান, ছাত্রীরা বাধ্য হয়েই এমন করছে। স্কুলে চরম অরাজকতা চলছে। প্রথম ইউনিট টেস্ট হলেও দ্বিতীয় পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না টাকার অভাবে। টাকার জন্যই এ বার স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক কৌশিক বিশ্বাস বলেন, “শিক্ষিকারা আজ বেতন না পেলেও পরে সব বেতন একসঙ্গেই পেয়ে যাবেন। কিন্তু স্কুলে এসেও ক্লাস না নিয়ে তাঁরা তো ছাত্রীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। সেই ক্ষতি কী ভাবে পূরণ হবে?” এ দিন টিচার ইনচার্জ রীতা দাসকে একাধিক বার ফোন ও মেসেজ করা হলেও উত্তর মেলেনি। মন্তব্য করতে চাননি জেলা স্কুল পরিদর্শক মিতালী দত্ত। তবে জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “জেলা স্কুল পরিদর্শককে ডেকে কথা বলে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE